পড়াশানা করতে চেয়ে এক জন ফিরে পেয়েছিল তালিবানি-বুলেট। অন্য জনের কেরোসিন ভেজা শরীর ঝলসে গিয়েছিল আগুনে।
আশ্চর্য, ক্ষতবিক্ষত-দগ্ধ মেয়ে দুটিই বেঁচে গিয়েছে। পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই আর হুগলির খানাকুলের রৌশনারা খাতুন।
লড়াইয়ের আশ্চর্য মিল নিয়ে মালালা এখন ইংল্যান্ডে। আর সারা শরীরে সৎমার অত্যাচারের চিহ্ন নিয়ে হাসপাতালে শয্যায় রৌশনারা। যে চেয়েছিল, এখনই বিয়ে নয়, পড়াশোনা।
বিয়ে নয় শিক্ষা। এই জেহাদের কাছে এ রাজ্যের অনেক নাবালিকার পরিজনই হার মেনেছেন। পুরুলিয়ার বীণা কালিন্দি, সঙ্গীতা বাউরি, আফসানা খাতুন বা দক্ষিণ ২৪ পরগনার হাবিবা খাতুনের অভিভাবকেরা বুঝেছেন, সাততাড়াতাড়ি বিয়ে নয়, মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোটা জরুরি। রৌশনারার সৎমা অবশ্য সে কথায় কর্ণপাত করেননি। এই সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে শেষমেশ নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসনও। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলার স্কুলগুলিতে গত এপ্রিল থেকেই সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করছে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর।
শুধু নাবালিকা বিয়ে নয়, পণপ্রথা এবং নারী পাচারের বিরুদ্ধেও সেখানে সচেনতার বীজ বুনে দেওয়ার চেষ্টা করছেন কর্মীরা। আলোচনাসভা ছাড়াও আয়োজন করা হচ্ছে নাটকের। |
বাল্য বিবাহ রুখতে নাটকের মাধ্যমে সচেতনতা প্রচার সবংয়ের স্কুলে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই কোচবিহার, দুই দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলির বিভিন্ন স্কুলে শিবির হয়েছে। বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলিকে। সেই মতো জঙ্গলমহলের একাধিক স্কুলে নাটক দেখিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে এই সংক্রান্ত এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে নাট্যকর্মী ও সমাজকর্মীরা। মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক কুশল চক্রবর্তী বলেন, “শুধু মেয়েদের স্কুল নয়, বেশ কিছু কো-এড স্কুলেও নাটক দেখানো হবে। নাটক শেষে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া নেওয়া হবে। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে পোস্টার অঙ্কন।” গরমের ছুটির পর স্কুলে স্কুলে নাটক হবে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর মহকুমায় এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। নাটকের মাধ্যমে সচেতনতা শিবির হয়েছে বেলদা গঙ্গাধর অ্যাকাডেমি ও কেশিয়াড়ির খাজরা সতীশচন্দ্র গঙ্গাধর অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক ননীগোপাল শিটের মতে, “এই উদ্যোগ খুবই কার্যকর হবে। মেয়েরা নিজেরাই বুঝতে পারবে কোনটা ভাল আর কোনটা মন্দ।” ঝাড়গ্রাম শহরের একটি মেয়েদের স্কুলের শিক্ষিকা দেবলীনা দাশগুপ্তেরও বক্তব্য, “উদ্যোগটি যথেষ্ট ফলপ্রসূ হবে। বিনোদনের মাধ্যমে লোকশিক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশি।”
রৌশনারার জেলা হুগলিতেও শুরু হয়েছে স্কুলে স্কুলে শিবির। ক’দিন আগে শেওড়াফুলির সত্যজিৎ রায় ভবনে ‘সুখচর পঞ্চম’ গোষ্ঠী পরিচালিত ‘পুতুলের বিয়ে’ নাটকে গোটা বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সোমবার সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল শেওড়াফুলি নেতাজি বালিকা বিদ্যামন্দিরে। এখানে নাটক পরিবেশন করে দুর্গাপুরের দল ‘সম্ভাবনা’। শ্রীরামপুরের মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক লিপিকা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে পুর-এলাকার ১৪টি স্কুলে এই কর্মসূচি হবে।
তথ্য-সংস্কৃতি দফতর জানিয়েছে, শুধু নাটক দেখানোই নয় ছাত্রীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। বোঝানো হবে অপিরণত বয়সে বিয়ে কিংবা পণ দিয়ে বিয়ের পরিণাম কী মারাত্মক হতে পারে।
প্রশাসনের আশা, শুধু ছাত্রীরা নয়, বিষয়টি বুঝবেন তাদের অভিভাবকেরাও।
হয়তো রৌশনারার সৎমা-ও!
|
মোহিনী |
|
কান চলচ্চিত্র উৎসবে রেড কার্পেটে হাঁটলেন ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন। এই নিয়ে এগারো বার।
এ বছর দেড় বছরের মেয়ে আরাধ্যাকে নিয়েই ফ্রান্সে এসেছেন ঐশ্বর্যা।
তবে ফ্ল্যাশের
ঝলকানি থেকে
অবশ্য দূরেই রাখলেন ছোট্ট আরাধ্যাকে। ছবি: রয়টার্স। |
|