জমি নিয়ে মামলার জেরে সমস্যায় পড়ুয়ারা
কটিই ঘর। সেই ঘরের এক কোনে স্তূপ করে রাখা আছে জ্বালানির কাঠ। অদূরে এক বস্তা চাল, তার ঠিক পাশেই ছোট একটি টেবিলের উপরে-নীচে ছড়িয়ে আছে বেশ কিছু বইপত্র। অন্য কোনে একটি পুরনো আলমারি। তার পাশে অন্য একটি টেবিল ওই টুকুই আসলে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ‘অফিস’। প্রধান শিক্ষক সেই টেবিলে কোনও রকমে বসে কাজকর্ম সারছেন। কাছেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রান্না করা ভাত-ডাল-তরকারি। স্কুলের এই একমাত্র ঘরটিতেই একসঙ্গে চলছে পাঁচটি শ্রেণির ক্লাস। শিক্ষক থেকে পড়ুয়া নানা শব্দে কেউই ঠিক মতো বুঝতে পারছেন না কাউকে।
স্কুলের এক ছটাক জমি এখন আদালতে বিচারাধীন। আর তারই জেরে উন্নয়নের সমস্ত কাজ আটকা পড়ে এমন হাল মাড়গ্রামের সরকার পাড়া প্রাথমিক স্কুলের।
রামপুরহাট পূর্ব চক্রের এসআই আবুল হাসান বলেন, “আমার চক্রে একমাত্র ওই স্কুলটির শ্রেণিকক্ষ তৈরির জন্য টাকা বরাদ্দ করেও আমরা কোনও কাজ করতে পারিনি। ২০১১-১২ শিক্ষা বর্ষে দু’বার ৪ লক্ষ টাকারও বেশি বরাদ্দ করেছিলাম। কিন্তু জমি সংক্রান্ত সমস্যার জন্য কাজ করা যায়নি। দু’বারই সেই টাকা অন্য স্কুলকে দিয়ে দিতে হয়।”
একটি ঘরেই চলছে পাঁচটি ক্লাস।—নিজস্ব চিত্র
২০০১ সালে মাত্র ৬০ জন পড়ুয়া নিয়ে পাড়ার একটি ভাঙা বাড়িতে এই স্কুল শুরু করেছিলেন প্রধান শিক্ষক মদনমোহন প্রামাণিক। তিনি বলেন, “পরের বছর নভেম্বর মাসে আলিমুদ্দিন সরকার, নিয়ামুদ্দিন সরকার, জিতু বিবি, বদরুন্নেশা বিবি-সহ ১৬ জন স্থানীয় বাসিন্দা স্কুলের জন্য তাঁদের ২ শতক শরিকি জমি দান করেন। ২০০৩ সালের মার্চে ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়। নভেম্বর মাসে নতুন একটি কক্ষে স্কুল চলতে শুরু করে।” কিন্তু তার পরেই সমস্যার শুরু। প্রধান শিক্ষক জানান, নতুন ভবনে স্কুল চালু হওয়ার পরে ওই জমির শরিকদের একজন, বদরে আলম সরকার একটি মামলা ঠুঁকে বসেন। তাঁর দাবি ছিল, স্কুলটি তাঁর জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। এখন স্কুলে প্রধান শিক্ষককে নিয়ে পাঁচ জন শিক্ষক। পড়ুয়া প্রায় ৮০ জন। একটাই ঘরে কোনও দিন চারটি কোনও দিন পাঁচটি ক্লাস চলে।
ওই জমির অন্যতম দাতা নিয়ামুদ্দিন সরকার বলেন, “আমরা এলাকার ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে ওই স্কুলের জন্য জমি দান করেছিলাম। কিন্তু আমাদের এক শরিক মামলা করে বসায় স্কুলের যাবতীয় উন্নয়ন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মামলার জন্য স্কুলে অতিরিক্ত ক্লাসঘর তো দূরের কথা, এমনকী শৌচাগার ও রান্নাঘরও তৈরি করা যায়নি। শৌচাগারের অভাবে ছোট ছোট বাচ্চাকাচ্চাদের স্কুলে ক্লাস নেওয়ায় মুশকিল হয়ে পড়ে। একই কারণে শিক্ষকদেরও যেতে হয় দূরের কোনও বাড়িতে বা এসআই অফিসে।” তাই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চাইছেন এলাকায় শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে বদ্ধ পরিকর জমিদাতা ও এলাকাবাসীদের একটি বড় অংশই।
খোলা আকাশের নীচেই মিড-ডে মিলের রান্না করতে হয় দুই রাঁধুনি রেবিনা বিবি ও আজলেমা বিবিকে। তাঁদের কথায়, “এ ভাবে রান্না করতে খুব কষ্ট হয়। তবে সমস্যা হচ্ছে, কোনও আচ্ছাদন না থাকার জন্য মাঝে মধ্যেই হাড়িতে অনেক কিছু পড়ে যায়।” অন্য দিকে, স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রেশমি খাতুন, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সোনিয়া খাতুন-রা বলছে, “একটা মাত্র ছোট ঘরে সব ক্লাসের সঙ্গে ক্লাস করতে খুব কষ্ট হয়। পড়ানোর সময়ে মাস্টারমশাইদের কথা মন দিয়ে শুনতে পারি না।” এ দিকে জমির দাবি চেয়ে মামলা করা পরিবারটির বিরুদ্ধে আবার একটি অভিযোগও তুলছেন বাসিন্দাদের একাংশ। ওই স্কুলের সামনে প্রায় দিনই জঞ্জালের স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই ঘটনায় গ্রাম শিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান তথা পঞ্চায়েত সদস্য ইদেল সরকারের দাবি, “বদরে আলমের পরিবারের সদস্যেরা ওই জঞ্জাল জমিয়ে রাখছেন। কখনও কখনও ওই জঞ্জাল স্কুলের ভেতরেও ঢুকে পড়ে।”
মামলাকারী বদরে আলম সরকার গত বছরই প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর দুই ছেলে শফিউদ্দিন সরকার ও আনোয়ার সরকার বলেন, “বাবা মামলা করেছিলেন। জমিটি আমাদের। তবে আদালত যে রায় দেবে তা-ই আমরা মাথা পেতে নেব।” তাঁদের পরিবারের দিকে ওঠা অভিযোগটিকেও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তাঁরা। অন্য দিকে, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের জেলা চেয়ারম্যান রাজা ঘোষ বলেন, “ওই স্কুলে জমি নিয়ে একটা সমস্যার কথা শুনেছি। যত দ্রুত সম্ভব দুই পক্ষকে এক সঙ্গে বসিয়ে একটা মীমাংসা করার চেষ্টা করব।”
এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে রেশমি সোনিয়াদের কবে মুক্তি মিলবে, এখন সেটাই দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.