কর্মক্ষমতা বাড়াতে দাওয়াই যোগাসন, সাঁতার
বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ। জেলায় জেলায় ধান শুকোনোর কাজে ব্যস্ত চাষিরা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘাড় নীচু করে, কোমর ঝুঁকিয়ে টানা কাজ করে চলেন তাঁরা। আর এ থেকেই এঁদের অনেকে পিঠ, ঘাড় বা কোমরের ব্যথায় ভোগেন। দেখা দেয় মেরুদণ্ডের নানা সমস্যাও।
দুনিয়া জুড়েই শুধু কৃষিকাজ নয়, চেয়ারে টানা বসে কম্পিউটারে কাজ করতে হয় এমন অনেক পেশাতেই এ রোগে ভোগেন বহু লোকজন। আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রেও এ নিয়ে অনেক লেখালিখি চলছে। আমেরিকা, আয়ার্ল্যান্ড, নাইজিরিয়া থেকে শুরু করে চিন, থাইল্যান্ডেও প্রায় ৪০ শতাংশ লোক এ রোগে ভোগেন। আমাদের দেশেও বেশির ভাগ কৃষকই পঞ্চাশ পেরোলেই মাঠে কাজ করার ক্ষমতা হারান।
কিন্তু এই রোগ হয় কীভাবে? আমাদের শিরদাঁড়ার দুটি খণ্ডের মাঝে চাকতির মতো একটা অংশ থাকে। যা হাড়ের ঘর্ষণই কমায় না, যে কোনও ঝাঁকুনি বা কম-বেশি ওজনও নিয়ন্ত্রণ করে। তখন এই রবারের মতো চাকতির মধ্যে থেকে জেলি জাতীয় আঠালো এক তরল বেরোয়। ওই রস শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত সুষুম্নাকাণ্ডের গায়ে ঘষা লাগলেই শুরু হয় প্রবল জ্বালা, কখনও ব্যথাও। বারবার এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতে পিঠ, কোমর এবং ঘাড়ের বেশির উপর ক্রমাগত টান পড়ে। কিছু তন্তু ছিঁড়ে যায়, শুরু হয় পেশি সঙ্কোচন, খিঁচ ধরা ব্যথা। দীর্ঘমেয়াদি কোমরের ব্যথা থেকে কাজ করার ক্ষমতা পুরোপুরিও চলে যেতে পারে।
চাষের কাজে যাঁরা রয়েছেন উপকার পাবেন তাঁরাও।—নিজস্ব চিত্র।
কমবেশি আমরা সকলেই কোনও না কোনও সময় ব্যথায় ভুগলেও ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই একটু বিশ্রাম এবং সাধরণ ওষুধেই ব্যথা কমে যায়। তবে হাতের ও পায়ের পেশির জোর খুব কমে গেলে দীর্ঘ বিশ্রাম এবং ওষুধেও সবসময় কাজ হয়না। সমস্যা হতে পারে মল-মূত্র ত্যাগেও। এ ক্ষেত্রে অনেকসময় অপারেশন করে শিরদাঁড়ার নড়বড়ে টুকরোদুটিকে জুড়ে দেওয়া হয় এবং বেরিয়ে আসা জেলির টুকরোগুলোকেও কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। তবে অপারেশন করালেই কর্মক্ষমতা ফিরে আসবে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। ডাক্তারেরা এ ধরনের অপারেশন করা কমিয়েও দিয়েছেন আজকাল। বরং আধুনিক ‘পেন ম্যানেজমেন্ট’ অনুযায়ী কম কাটা-ছেঁড়া করে আধুনিক এক্স-রে মেশিনের সাহায্যে ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ুগুলির নির্দিষ্ট অংশে ওষুধ দিয়ে রোগ সারিয়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে অনেকক্ষেত্রেই।
তবে রোগ এতটা বাড়ার আগেই ঘরোয়া কিছু উপায়ে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। খেলোয়াড়েরা খেলতে নামার আগে শরীররের পেশি ও অস্থিসন্ধিকে নমনীয় করতে যেমন গা ঘামিয়ে নেন, তেমনই চাষবাস বা এই ধরণের শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করার আগে হালকা ব্যায়াম করতে পারলে ভাল হয়।
এছাড়া প্রতি আধ ঘণ্টা অন্তর দু-এক মিনিটের জন্য সোজা হয়ে দাঁড়ানো বা দু-চার পা হাঁটাহাঁটি করাটাও খুব জরুরি। কাছাকাছি জলাশয় থাকলে দিনে দশ-পনেরো মিনিট সাঁতারও মেরুদন্ডকে সুস্থ রাখে। ব্যথা শুরু হলে মাটিতে বসা বা শোওয়াও যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। সম্ভব হলে কমোড বা টুল ব্যবহার করা উটিত।
আর যোগাসন করতে পারলে তো সবচেয়ে ভাল। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রশিক্ষিত যোগশিক্ষকের কাছে জেনে নেওয়া উচিত শরীরের কী প্রয়োজন। সাধারণভাবে শলভাসন, ধনুরাসন, ভুজঙ্গাসন, পবনমুক্তাসন-এগুলি শিরদাঁড়ার জন্য ভাল।
গবেষণায় উঠে এসেছে আরও অনেক তথ্যও। দেখা গিয়েছে, যাঁরা ধূমপান করেন তাঁদের মধ্যে এই মেরুদন্ডের ‘স্লিপ-ডিস্ক’ রোগের সম্ভাবনা আরও বেশি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.