এক বছর আগে ঝড়ে ক্ষতি হয়েছিল কোচবিহার জেলার ১০টি প্রাথমিক স্কুলে। ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলি মেরামত না হওয়ায়, কোথাও খোলা আকাশের নীচে ক্লাস করছে পড়ুয়ারা, কোথাও আবার ক্লাসঘরের অভাবে গাদাগাদি করে একই ঘরে চলছে বিভিন্ন শ্রেণির পঠনপাঠন। এতে ক্ষুদ্ধ অভিভাবকরা।
জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল ঝড়ে জেলা সদর, দিনহাটা ও মাথাভাঙা মহকুমার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক স্কুল বাড়ির টিনের চাল উড়ে যায়। কয়েকটি স্কুল নিজেদের তহবিল থেকে মেরামতির কাজ করলেও, ১০ স্কুলের ক্ষেত্রে মেরামতির কাজ করা হয়নি। প্রতিটি স্কুল কর্তৃপক্ষেরই দাবি, ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ায় খরচ বহন করা স্কুলের তহবিল থেকে সম্ভব নয়। কোচবিহারে জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদ চেয়ারপার্সন কল্যাণী পোদ্দার বলেন, “পরিদর্শনের পর আধিকারিকরা মেরামতির খরচের তালিকা করে জমা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ৫ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। শীঘ্রই স্কুলগুলিকে মেরামতি কাজে টাকা বরাদ্দ করা হবে।”
বছর খানেক আগের ওই ঝড়ে ক্ষতির তালিকায় শীর্ষে ছিল কোচবিহার ২ ব্লক। ব্লকের ধলগুড়ি এপি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধনাই ওরাওঁ প্রাথমিক বিদ্যালয়, খোল্টা এপি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইচ্ছামারি এপি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালজানি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ দিনহাটা, মাথাভাঙা মহকুমার বেশ কয়েকটি স্কুলের ক্ষতি হয়। ধলগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক কর্মকার বলেন, “গত বছর ঝড়ে স্কুলের একটি ক্লাসঘরের চাল উড়ে যায়। ফলে এখন দুইটি ক্লাস রুমে চারটি শ্রেণির ক্লাস চালাতে হচ্ছে। সমস্যার কথা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।” একই কথা বলেন ইচ্ছামারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মৃদুলা মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “ঝড়ে ক্লাসঘরের ক্ষতি হওয়ায় আমাদের স্কুলে দুইটি শ্রেণির পড়ুয়াদের গাদাগাদি করে একটি ঘরে ক্লাস নিতে হচ্ছে।” এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের অভিযোগ, নতুন ক্লাসঘর তৈরির জন্য নানা খাত থেকে ফি বছর মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দেওয়ার কথা হলেও গত এক বছর থেকে এতগুলি স্কুল বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকলেও সংসদ কর্তৃপক্ষ উদাসীন। ধলগুড়ির এক অভিভাবক রীতেন কার্জি বলেন, “একটা ঘরে বাচ্চাদের দুটি ক্লাস চালাতে হচ্ছে। হট্টগোলে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।”
সরব শিক্ষক সংগঠনের নেতারাও। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কোচবিহার জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দত্ত বলেন, “শিক্ষা দফতরে জানিয়েও লাভ হচ্ছে না। তাই আন্দোলনের কথা ভাবছি।” নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক নিখিল দাস বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলি সারাই না হওয়ায় বেশ কিছু থেকে পড়ুয়াদের অন্য স্কুলে সরিয়ে নেওয়ার ঘটনাও হয়েছে। কিন্তু সংসদ থেকে প্রশাসন, সবাই নীরব।” |