ভাঙ্গন রোধে বাঁধ বাঁধছেন গ্রামবাসীরাই |
নারায়ণ দে • আলিপুরদুয়ার |
পাশ দিয়ে বইছে গরম নদী। বছর পাঁচেক ধরে প্রশাসনের কাছে দাবি-দরবার জানিয়েও নদীর পাড় বাঁধিয়ে ভাঙন ঠেকাতে কেউ উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ। ক্রমাগত পাড় ভেঙে নদী একেবারে গ্রামের কাছে এসেছে। বসতি এলাকা আর নদীর মাঝখানে বড়জোর ফুট ছয়েকের রাস্তা। সম্প্রতি একবার গ্রাম পঞ্চায়েতের থেকে জেলা থেকে বাস্তুকাররা পরিদর্শনও করেছিল বলে জানা গিয়েছে। এর পরে কাজ হয়নি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। বর্ষায় ভারী বৃষ্টি হলেই রাস্তা ভেঙে নদী গ্রামে ঢুকবে বলে গ্রামবাসীদের আশঙ্কা। তাই বর্ষার আগে ভিটে-মাটি বাঁচাতে গ্রামবাসীরা নিজেরা নদীর পাড় বরাবর আড়াআড়ি করে বাঁশের খাচা তৈরি করে, স্বেচ্ছা-শ্রম দিয়ে, বালির বস্তা পাথর ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু করেছেন। ঘটনাটি আলিপুর দুয়ার ১ নম্বর ব্লকের বঞ্চুকামারি গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ বাইরাগুড়ি গ্রামে। সপ্তাহখানেক ধরে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরু হয়েছে এলাকায়। |
গ্রাম বাঁচানোর চেষ্টা গরম নদীতে। |
পঞ্চায়েত থেকে ভাঙন ঠেকাতে প্রায় ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। সেখানে নিজেরা হাজার ছয়েক টাকা চাঁদা তুলেই কাজ শুরু করেছেন বাসিন্দারা। গ্রামবাসীরা নিজেরাই তাদের বাঁশ ঝাড় থেকে বাঁশ কেটে এনেছে। জোগাড় হয়েছে প্রায় ৪০০ বাঁশ। ২০ থেকে ৫০ টাকা চাঁদা দিয়ে তহবিল তৈরি করে কেনা হয়েছে রাশি রাশি নাইলনের বস্তা, পেরেক, তার জালি। বস্তা ভর্তি বালি পাথর ফেলা হচ্ছে নদীতে আড়াআড়ি ভাবে তৈরি করা জালি ঘেরা বাঁশের খাঁচায়। সেচ দফতরের কার্যনির্বাহী বাস্তুকার অরূপানন্দ রায় জানান, “বাইরাগুড়ি এলাকায় কী ঘটনা ঘটছে সেটি খোঁজ নিতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যে সেখানে নদী ভাঙন ঠেকানোর কাজ করা হবে।” এলাকার সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য মাধব রায় বলেন, “ইতিমধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে এক লক্ষ টাকা বাঁধ তৈরির জন্য মঞ্জুর হয়েছে।”
দিন সাতেক আগে গ্রামবাসীরা বৈঠক করেছেন। বাসিন্দা বাবুলাল বাক্সলা বলেন, “আমার ছয় বিঘা জমি নদী গর্ভে গিয়েছে। এখন গ্রামের রাস্তার পাশেই নদী চলে এসেছে। এই বর্ষায় ভারী বৃষ্টি হলে যে কোনো সময়ে নদী রাস্তা ভেঙে গ্রামে ঢুকে পড়বে। সেই আশঙ্কাতেই নিজেরাই কাজ শুরু করেছি।” পূর্ণিমা মালি, মণিবালা বর্মন ও মিনতি অধিকারী বলেন, “বৃষ্টি হলে আমরা আতঙ্কে রাত জাগছি। বাড়ি থেকে নদী ত্রিশ ফুটেরও কম দূরত্বে রয়েছে।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা দীপঙ্কর দাস বলেন, “গ্রামবাসীরা পঞ্চায়েতে ভরসা করেছিলেন। পঞ্চায়েত কোনও উদ্যোগ নিতে পারেননি। প্রশাসনের কেউও উদ্যোগী হয়নি। বিষয়টি নিয়ে শীর্ষনেতাদের সঙ্গে আলোচনা করব।” |