আশ্বাস উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর |
ইচ্ছে করেই গতি মন্থর এসজেডিএ তদন্তের, সন্দেহ |
খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়ার তিন দিন পরেও শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) প্রায় ৫০ কোটি টাকা নয়ছয়ের মামলায় পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি। ইতিমধ্যে এসজেডিএ-এর নানা কাজে যুক্ত ঠিকাদারদের কয়েক জনের অভিযোগ, যে সব যন্ত্রাংশ না-কিনেই কেনা হয়েছে বলে দেখিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে, সেই সব সরঞ্জাম রাতারাতি কিনে এনে ওই সব প্রকল্প এলাকায় রেখে আসার ছক কষেছে একটি প্রভাবশালী মহল।
এসজেডিএ-এর অফিসার-ইঞ্জিনিয়ারদের কয়েক জনের আশঙ্কা, অভিযোগ লঘু করে দিতেই রাতের অন্ধকারে প্রকল্প এলাকায় ওই যন্ত্রাংশ রাতারাতি কিনে এনে রাখা হতে পারে। পুলিশের একাংশ অভিযুক্তদের গ্রেফতারে ঢিলেমি দেখিয়ে ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ দিচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এসজেডিএ-এর ওই অফিসার-ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকেই। যা শোনার পরে উদ্বিগ্ন রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি তথা শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের তদারককারী অফিসার অনুজ শর্মা। রবিবার বিকেলে আইজি বলেন, “অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করতে আগেই বলা হয়েছে। এখনও একজনও গ্রেফতার হয়নি বলে শুনেছি। পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলব।”
প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের দাবি, “সংস্থার কোনও সদ্য প্রাক্তন কর্তাই প্রভাব বিস্তার করে তদন্তের গতি মন্থর করে দিচ্ছেন কি না, সে সংশয় তৈরি হয়েছে। তাঁকে প্রশাসনের প্রভাবশালী মহল আড়াল করছে এমন সন্দেহও রয়েছে আমাদের।” আইজি অনুজবাবু কিন্তু পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, “দুর্নীতিতে অভিযুক্তরা কেউ ছাড় পাবেন না। তাঁদের আড়াল করার চেষ্টা কেউ করলেও লাভ হবে না।”
এসজেডিএ-র বর্তমান চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও জানান, দুর্নীতির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কোনও দিন আপস করেননি। করবেনও না। অভিযোগপত্র তৈরি থেকে এফআইআর করাতে গিয়ে কী হয়েছে সবই মুখ্যমন্ত্রী জেনেছেন। গত শুক্রবার তিনি নিজে উত্তরবঙ্গের আইজির সামনে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারকে ওই তদন্তের কাজ দ্রুত করার নির্দেশও দিয়েছেন। গৌতমবাবুর কথায়, “এই অবস্থায় কেউ কাউকে আড়াল করার চেষ্টা করলেও লাভ হবে না। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। সময় হলেই যথাস্থানে জানিয়ে দেব।”
বৃহস্পতিবার এসজেডিএ-এর তরফে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানায় ওই দুর্নীতি নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সংস্থার চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) শরদ দ্বিবেদী। তাঁর অভিযোগ, সংস্থার তরফে মালবাজার, বাগডোগরা ও ময়ানগুড়িতে তিনটি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর প্রকল্পে যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হয়নি কিন্তু কাগজেকলমে তা কেনা হয়েছে বলে দেখিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি ঠিকাদার সংস্থা। আর একটি অভিযোগে লেখা হয়েছে, মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় থাকা দূষণ মুক্ত নিকাশির ব্যবস্থার জন্য দু’টি পর্যায়ে (এসটিপি-৩ ও এসটিপি-৪) প্রায় ২০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ, সরঞ্জাম না-কিনে তার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এসজেডিএ-এর বিভাগীয় তদন্তে তো বটেই, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের তদন্তেও ধরা পড়ে। প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট দুজন অন্যতম ইঞ্জিনিয়র মৃগাঙ্কমৌলিক সরকার ও সপ্তর্ষি পালের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। এরই মধ্যে মৃগাঙ্কমৌলিবাবুকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
|