লেখাটা ঠিক কোন অভিব্যক্তি দিয়ে শুরু করা উচিত, বুঝতে পারছি না। কেকেআরের ষোলোটা ম্যাচের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তৈরি করতে হবে। রাগ হচ্ছে। দুঃখ হচ্ছে। যন্ত্রণাও পাচ্ছি। কিন্তু সব ভেবেচিন্তে মনে হচ্ছে, নিষ্ঠুর কয়েকটা প্রশ্নই বোধহয় সবার আগে তোলা উচিত।
গৌতম গম্ভীরকে, কেকেআর ম্যানেজমেন্টকে জিজ্ঞেস করতে চাই, কীসের চ্যাম্পিয়ন টিম তোমাদের, যে একটা মর্যাদার ম্যাচও বার করা যায় না? জিজ্ঞেস করতে চাই, কোন যুক্তিতে ম্যাচের পর ম্যাচ ফ্লপ করে তোমাদের ব্যাটিং? কেন তোমরা ম্যাচের পর ম্যাচে বসিয়ে রেখেছিলে সামি আহমেদকে? কোন যুক্তিতে খেলিয়ে যাচ্ছিলে বালাজিকে? চূড়ান্ত ব্যর্থ হচ্ছে দেখেও!
আসলে প্ল্যানিং বলে কিছু না থাকলে যা হয়। আমি তো মাঝে-মাঝে এটাও বুঝে পাই না, টিমের কোচটা আসলে কে? ট্রেভর বেলিস নাকি বিজয় দাহিয়া? সামি যে ইয়র্কারে থিসারা পেরিরাকে বোল্ড করল, দেখেছেন? ও যে বোল্ড হয়েছে, পেরিরা নিজেও বুঝতে পারেনি। ওই ওভারে সামির আরও কয়েকটা ইয়র্কার কিন্তু একেবারে নিখুঁত জায়গায় পড়েছিল। পেরিরা বা ডারেন স্যামিকে নড়তে দেয়নি। |
আমি জানি না, যে প্লেয়ার ইন্ডিয়ার হয়ে খেলছে তাকে কেন বসিয়ে বালাজিকে খেলিয়ে যাওয়া হল। মানছি, বালাজির হাতে ভেরিয়েশন অনেক। কিন্তু সামি ফর্মে আছে। ওকে বসিয়ে রাখাটা ম্যানেজমেন্টের বোকামিই বলতে হবে। পুরনো বলে ভাল বোলিং করে, নতুন বলে সুইংটাও করাতে পারে সামি।
সামিকে মোটে তিনটে ম্যাচ খেলানো হয়েছে। পরিসংখ্যান হয়তো ওর হয়ে কথা বলছে না, কিন্তু এই ছেলেটা উইকেট টেকার। যে কোনও সময় উইকেট নিয়ে বিপক্ষকে চাপে ফেলে দেবে। এ দিন যেমন করল। রবিবার যদি আর একটু রান হাতে থাকত, তা হলে কেকেআর ম্যাচটা জিতেও মাঠ ছাড়তে পারত। শেষ দিকে সামি আর সুনীল নারিন ভাল রকম চাপে ফেলে দিয়েছিল হায়দরাবাদকে। কিন্তু ১৩০ দিয়ে আর কতটা কী সম্ভব?
কেকেআরের ব্যাটিং গোটা টুর্নামেন্টে যা, শেষ ম্যাচেও তাই। চূড়ান্ত ফ্লপ। তবে ব্যাটসম্যানদের আসল বারোটা বাজিয়েছে ইডেনের উইকেট। বিশেষ করে কালিসদের মতো বিদেশিদের ক্ষেত্রে। কেন এ রকম একটা স্লো টার্নার তৈরি করা হল যেখানে কিনা ব্যাটসম্যানদের রান তুলতে কালঘাম ছুটবে? ওরা বলতে পারে যে সুনীল নারিন, সচিত্র সেনানায়কের কথা ভেবে। তা ছাড়া গত বারও এ রকমই উইকেট ছিল। টিমটা চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। আমি ওদের তা হলে মনে করিয়ে দেব, গত বার গৌতম গম্ভীর কী ফর্মে ছিল একটু ভেবে দেখো। এ বার ওর মধ্যে সেই বারুদ কোথায়?
ঘরের মাঠে ও রকম টার্নারে খেললে ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা লাগবেই। অ্যাওয়ে ম্যাচে খেলতে গিয়েও সেটা বারবার ধরা পড়েছে। আইপিএলের প্রত্যেকটা বড় টিমে একজন করে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার থাকে। মুম্বইয়ে পোলার্ড, রোহিত। চেন্নাইয়ে হাসি, রায়না, ধোনি। বেঙ্গালুরুতে গেইল, কোহলি, ডে’ভিলিয়ার্স। কেকেআরে কেউ ছিল কি? একমাত্র ইউসুফ পাঠানের নামটা উঠতে পারে। টুর্নামেন্টের শেষ দিক ছাড়া ওকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া ফর্মে ফেরার জন্য যে রকম পিচ দরকার, সেটাও ইডেন ওকে দিতে পারেনি। |
স্ট্র্যাটেজিরও মাথামুণ্ডু নেই। জাক কালিস খুব বড় টেস্ট, ওয়ান ডে ক্রিকেটার। ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে কি না জানি না, তবু বলছি টি-টোয়েন্টিতে ও চলে না। একশো-একশো দশ স্ট্রাইক রেট নিয়ে ব্যাট করলে চাপটা অসহ্য হয়ে দাঁড়ায় মিডল-লোয়ার মিডল অর্ডারের উপর। আমি বিপক্ষ ক্যাপ্টেন হলে তো টিমকে বলতাম, কালিসকে আউট করার দরকার নেই। ওকে রেখে দাও, রান এমনই উঠবে না! ওখানে মনোজকে খেলানোই যেত। আমার বিশ্বাস, ওর উপর আর একটু বেশি আস্থা রাখলে মনোজ ডোবাত না। ওপেনাররা এক দিন ভাল খেলছে, তো পরের দিনই ডোবাচ্ছে। তা ছাড়া টিমে একজন এক্সপ্রেস পেসার ছিল না বলে, স্লগে বেদম মার খেয়েছে কেকেআর। আমার মতে, টানা দুই স্পিনার খেলিয়ে যাওয়ার কোনও দরকারই ছিল না। ব্রেট লিকে খেলানো যেত, বিদেশি না চাইলে সামি ছিল। টিমটার স্পিরিটেও সমস্যা আছে।
এত ভুলভ্রান্তি করলে কোনও টুর্নামেন্ট জেতা যায় না। তাই কেকেআরের সাত নম্বরে শেষ করাটা একেবারেই আশ্চর্য লাগছে না। বরং স্টেইনকে ছয় মেরে ইউসুফ পাঠানের হাততালির দৃশ্যটা দেখে বেশ অবাকই লাগল। পাঠানকে একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হচ্ছে। বিশ্বের এক নম্বর ফাস্ট বোলারকে ছয় মেরে হাততালি দিচ্ছ, খুব ভাল কথা। কিন্তু তোমার এই আগ্রাসনটা এত দিন ছিল কোথায়? পুণে ম্যাচটা জিতিয়ে দিতে পারলে, কে বলতে পারত তোমরাই আজ হায়দরাবাদে ভিকট্রি ল্যাপটা দিতে না?
|
প্রথম চার দল চেন্নাই (১৬ ম্যাচে ২২ পয়েন্ট), মুম্বই (১৬ ম্যাচে ২২), রাজস্থান (১৬ ম্যাচে ২০, নেট রানরেট ০.৩২২) ও সানরাইজার্স (১৬ ম্যাচে ২০, নেট রানরেট ০.০০৩) প্লে অফে উঠল। আরসিবি ১৬ ম্যাচে ১৮ পয়েন্টে পঞ্চম হওয়ায় ছিটকে গেল। সবার শেষে দিল্লি (১৬ ম্যাচে ৬)।
|