আইপিএল প্লে অফ থেকেই স্পট ফিক্সিং কলঙ্কের ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পড়ছে ভারতীয় বোর্ড। রবিবাসরীয় চেন্নাইয়ে বোর্ডের জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়ে গেল যে প্লে অফ পর্ব থেকেই বোর্ডের কয়েক দফা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে ক্রিকেটারদের।
সেগুলো কী কী?
মোটামুটি তিন দফা নির্দেশ মেনে চলতে হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের:
এক) প্রত্যেকর ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে এ বার থেকে এক জন করে বোর্ডের দুর্নীতিদমন শাখার সদস্য থাকবেন। পেপসি আইপিএলের প্লে-অফ থেকেই এঁদের দেখা যাবে বিভিন্ন টিমের সঙ্গে।
দুই) ম্যাচের সময় ক্রিকেটাররা ড্রেসিংরুম আর মাঠের বাইরে কোথাওই আর ঘোরাঘুরি করতে পারবেন না।
তিন) ক্রিকেটাররা কে কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে দেখা করছেন, সব কিছুর উপরই কড়া নজরদারি রাখবে বোর্ড।
বোর্ড মনে করছে, ঠিকঠাক এগোতে পারলে ক্রিকেটারদের সামলানো তবু সম্ভব। কিন্তু বুকিদের নয়। এ দিন বৈঠকের পর বোর্ড প্রেসিডেন্ট এন শ্রীনিবাসন স্পষ্টই বলে দেন, “কিছুটা হলেও প্লেয়ারদের সমলানোর ক্ষমতা আমাদের আছে। কিন্তু বুকিদের সামলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই।” |
তবে ক্রিকেটারদের কাজ-কর্মকে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। ঠিক হয়েছে এ বার থেকে ক্রিকেটারদের এজেন্টেরও আলাদা করে অ্যাক্রিডিটেশন করাতে হবে। নিজেদের যাবতীয় নথিপত্র জমা দিতে হবে বোর্ডের কাছে। বোর্ড সে রকম বুঝলে, এজেন্টদের উপরেও বিধিনিষেধ জারি করতে পারে।
বোর্ড এ দিনের বৈঠকে থাকার জন্য বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছিল রবি শাস্ত্রীকে। এবং সেখানে শাস্ত্রী দু’টো প্রস্তাব দেন। প্রথমত বলেন যে, ক্রিকেটারদের একেবারে ছোট থেকে বলে দিতে হবে যে গড়াপেটার মতো কোনও অপরাধের সঙ্গে কখনও জড়িয়ে পড়লে কড়া শাস্তি অপেক্ষা করে থাকবে। শাস্ত্রী আরও বলেন, বোর্ডকে একটা হ্যান্ডবুক তৈরি করতে হবে। যেখানে কী করা যাবে আর কী যাবে না, পরিষ্কার লেখা থাকবে। অনূর্ধ্ব ক্রিকেট শুরু করার সময় যেটা ধরিয়ে দিতে হবে উঠতিদের। বৈঠকের মাঝে আবার টেলিকনফারেন্সে ধরা হয় অনিল কুম্বলেকে। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক প্রস্তাব দেন, ডোপ করলে যেমন অ্যাথলিটদের পদক কেড়ে নেওয়া হয়, ঠিক একই রকম ভাবে দোষী ক্রিকেটারদের যাবতীয় পরিসংখ্যানও মুছে দেওয়া যায় কি না। |
কী করছে |
• বোর্ডের দুর্নীতিদমন শাখার প্রধান রবি সাওয়ানিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
• ফ্রাঞ্চাইজিদের বলা হচ্ছে প্রত্যেক টিমের জন্য এক জন করে দুর্নীতিদমন অফিসার নিয়োগ করতে। যাঁরা ক্রিকেটারদের উপর নজর রাখবেন।
• ক্রিকেটারের এজেন্টকে বোর্ডের নথিভুক্ত হতে হবে।
• কারা ক্রিকেটারদের কাছে আসা যাওয়া করছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।
• ক্রিকেটারদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। |
কী করতে পারবে না |
• গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী এখনই অভিযুক্ত তিন ক্রিকেটারকে আজীবন সাসপেন্ড করতে পারছে না বোর্ড।
• বুকিদের সামলানোর কোনও রাস্তা নেই বোর্ডের কাছে। |
|
রবিবাসরীয় বৈঠকের আগেই মোটামুটি বোঝা গিয়েছিল যে, শ্রীসন্ত সহ তিন অভিযুক্ত ক্রিকেটারকে আজীবন নির্বাসনে এখনই পাঠানো সম্ভব নয়। কোনও কোনও সদস্য দাবি তুললেও ব্যাপারটা এগোয়নি, কারণ শ্রীসন্তদের গড়াপেটা কাণ্ড এখনও বিচারাধীন বস্তু। এ দিন বোর্ড আবার নিজস্ব তদন্তের জন্য রবি সাওয়ানির এক সদস্যের কমিশনকে দায়িত্ব দিয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত রাজস্থান রয়্যালস প্রতিনিধিকে নির্দেশ দেওয়া হয়, তিন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে। কারণ, দিল্লি পুলিশ যে বিধিতে তিন ক্রিকেটারকে গ্রেফতার করেছে, তা মূলত প্রতারণার অভিযোগে। বোর্ডের বক্তব্য, শ্রীসন্তরা সবচেয়ে আগে প্রতারণা করেছেন ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে। তাই রাজস্থান রয়্যালসকে শুধু এফআইআর করলেই চলবে না, শ্রীসন্তরা যদি তার বিরুদ্ধে জামিনের আবেদন করেন, সেটাও যাতে খারিজ করা যায়, তা দেখতে হবে। বোর্ডের নির্দেশ মতো এ দিন এফআইআর করেও দিয়েছে রাজস্থান টিম ম্যানেজমেন্ট। |
শাস্ত্রীর সুপারিশ
অনূর্ধ্ব ১৬ থেকেই গড়াপেটা সম্পর্কে সচেতন করা। বুঝিয়ে দেওয়া, গড়াপেটায় জড়িয়ে পড়লে কী ধরনের শাস্তি অপেক্ষা করে থাকবে। কী করা যাবে আর কী করা যাবে না, এই নিয়েও একটা হ্যান্ডবুক তৈরি করতে হবে। |
কুম্বলের সুপারিশ
ডোপ করলে যেমন অলিম্পিকে পদক কেড়ে নেওয়া হয়, তেমনই গড়াপেটা করলে যাবতীয় ক্রিকেটীয় পরিসংখ্যান মুছে দিতে হবে। |
|