হাতের মোবাইলে খোলা রয়েছে একটি ওয়েবসাইট। এবং চোখ রয়েছে টিভি-র ক্রিকেট ম্যাচে। খেলা যত এগোচ্ছে, ততই ঘন ঘন বদলে যাচ্ছে সাইটের তথ্য। এবং তা দেখেই মোবাইল ফোনে বাজি লড়ছেন জুয়াড়িরা।
সম্প্রতি সাইবার দুনিয়ার হাত ধরে এ ভাবেই বদলে গিয়েছে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার বেটিং চক্রের কারবার। চলতি আইপিএল-এও এ ভাবেই বেটিং চলেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত হাওড়ার এক যুবক জানান, মোবাইলের ওই সাইটটির দরের সঙ্গে বুকিদের দরের হুবহু মিল থাকে না। ২-৫ শতাংশ কম বেশি হয়। তবে আন্তর্জাতিক জুয়া চক্রের কাছে কোন দল ‘ফেভারিট’ এবং কোন দল পিছিয়ে, সে বিষয়ে আঁচ মেলে। সেই তথ্য দেখেই ফোনে-ফোনে জুয়া খেলা হয়ে যায়।
কী ভাবে চলে এই চক্র? শহরের কয়েক জন বুকি জানান, ক্রিকেট জুয়া পুরোটাই চলে বিশ্বাসে। তবে নতুন খেলুড়েদের জন্য প্রয়োজন এক জন ‘গ্যারান্টার’। ফোন করে বাজির দর লাগানো হয়। খেলা শেষের পর অন্তত ১২ ঘণ্টার মধ্যে টাকা লেনদেন হয়। বুকিদের এজেন্টরা এই টাকা দেওয়া-নেওয়া করে। অনেক পরিচিত খেলুড়েরা নিজেরাই বুকিদের সঙ্গে টাকা লেনদেন করে। এবং এই পুরো লেনদেনটাই হয় নগদ টাকায়। হাওয়ালা মারফৎ তা পৌঁছে যায় উপরের স্তরে।
একটি সূত্রের খবর, খেলা অনুযায়ী দরের হেরফের হয়। ম্যাচ চলাকালীন বাজির দর ওঠানামা করতে থাকে। কোনও সময় ১০০ টাকায় ২০ টাকা বেশি মেলে, কখনও ৬০। কখনও কখনও জুয়া হয় প্রতি বল নিয়েও। তাতে প্রতি ১০০ টাকায় দ্বিগুণ টাকা মেলে। |
জুয়াড়িদের সূত্রের খবর, বুকিরা নিজেদের মধ্যে একটি বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা সংস্থার ফোন ব্যবহার করে। ওই সংস্থার পরিষেবায় নিজেদের মধ্যে ‘ফ্রি কল’-এর সুবিধা থাকায় খেলা চলাকালীন নিজেদের মধ্যে সর্বক্ষণ কথা হয় তাদের। দরাদরিও চলে।
বেটিং চক্র সূত্রের খবর, হাতের মোবাইলে ওয়েবসাইট থেকে অবিরত দর জেনে যাওয়ায় জুয়াড়িদেরও আর বুকিদের উপর ততটা নির্ভর করতে হয় না। তাঁরা নিজেরাই চটজলদি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
ওই বিদেশি ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই প্রতি মুহূর্তে জুয়ার দরের আঁচ পাচ্ছেন হাওড়া বা মধ্য কলকাতার অলিগলিতে বসে থাকা জুয়াড়িরাও। তাঁদের বক্তব্য, “হাতে একটি উন্নত প্রযুক্তির মোবাইল থাকলেই হল। ব্যস, জুয়ার খবর জানতে পারবেন আপনিও।” হাওড়ার বেটিং চক্রের সঙ্গে যুক্ত এক যুবক জানান, রবিবারের আইপিএল ম্যাচের দরও ওই ওয়েবসাইটে রয়েছে। তবে শ্রীসন্তরা ধরা পড়ার পর থেকে এ রাজ্যের বুকিরা ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন বলে এ দিন দাবি করা হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, অনলাইনে এমন জুয়া নিয়ে পুলিশ কেন নিরুত্তর? পুলিশের একটি সূত্রের খবর, ওই সাইটটি একটি ইওরোপীয় দেশের আইনে স্বীকৃত। যদিও ভারতে জুয়া বেআইনি। তা হলে এ দেশে সেটা দেখা যাচ্ছে কী করে?
রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, ইন্টারনেটে এ ভাবে কোনও ওয়েবসাইট বন্ধ করার রীতি নেই। তবে ভারত যদি মনে করে, ওই ওয়েবসাইটটি এ দেশে বন্ধ করা প্রয়োজন, তা হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট সংস্থাকে বিষয়টি জানাতে হবে। এবং এ দেশের কোনও সার্ভারকে যাতে ওই ওয়েবসাইটে ঢোকার অনুমতি না দেওয়া হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
কলকাতা পুলিশের এক গোয়েন্দা কর্তা বলছেন, কোনও জুয়াড়ি ইচ্ছা করলে ‘প্রক্সি সার্ভার’ (অন্য কোনও দেশের সার্ভার) ব্যবহার করে ওই ওয়েবসাইটটি খুলতেই পারে। ফলে এ ভাবে নজরদারি চালিয়ে বিশেষ লাভ হবে না বলেই তাঁর মত। |