খাকি উর্দিতে ভয় নেই ওদের। তোয়াক্কা করে না লাঠি-ঢাল-বন্দুক। ইচ্ছে হলে ঘরে ঢুকে পড়ে। আবার ইচ্ছে হলে ফিরে চলে যায়। ধরার চেষ্টা পরের কথা। আলিপুরদুয়ার টাউন ফাঁড়ির পুলিশ কর্মীরা তখন পালিয়ে হাঁফ ছাড়েন।! ওরা যে মানুষ নয়। বিষাক্ত সাপ!
ফাঁড়ির চারপাশ ঝোপজঙ্গলে ভরা। সেখানে রয়েছে সাপের ডেরা। ভুতুড়ে বাড়ির মতো ফাঁড়ির ভেতরেও এখন ওই সরীসৃপের দল আস্তানা গেড়েছে। ফাঁড়ির পুলিশ কর্মীদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতির কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু হাল ফেরেনি। তাই ভয়ে সিটিয়ে থাকা ছাড়া কোনও উপায় আপাতত নেই। আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “টাউন ফাঁড়ির পরিস্থিতি সত্যি খারাপ। সেখানে ১২ জন পুলিশ কর্মী অনেক কষ্টে থাকেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” |
ফাঁড়ির দশা।—নিজস্ব চিত্র। |
আলিপুরদুয়ার শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ওই ফাঁড়ি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাধীনতার আগে শহরের চৌপথির কাছে একটি ছোট জেলখানা ছিল। পরে জেলখানাকে পুলিশ ফাঁড়ি করা হয়। এখনও সেটা ফাঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরনো দিনের ছাদ দেওয়া ইটের বাড়ি। মোট পাঁচটি ঘর রয়েছে। দুটিতে পুলিশ কর্মীরা থাকেন। সংস্কারের অভাবে দেওয়ালে নোনো ধরেছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ঝোপজঙ্গলে ভরা আশপাশ। ওই শ্বাপদ সঙ্কুল পরিবেশে পুলিশ কর্মীরা বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। এক পুলিশ কর্মী বলেন, “ঘরে ঢুকে নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নেওয়ার নেই। সব সময় ভয়ে থাকতে হয়।”
জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক অনুপ দাস বলেন, “দ্রুত ফাঁড়ি সংস্কারের কাজ শুরুর দাবিতে পুলিশ আধিকারিকদের স্মারকলিপি দেওয়া হবে।” স্থানীয় বাসিন্দা কুন্তল চক্রবর্তী ও সোমশঙ্কর দত্ত বলেন, “সংস্কারের অভাবে এতটাই বেহাল দশা হয়েছে যে সাপ ও পুলিশকে এক সঙ্গে বসবাস করতে হচ্ছে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন পুলিশ কর্মী জানান, সাপের ভয়ে শৌচাগারে যান না অনেকে। ফাঁড়ির ঘরের দরজার পাল্লা ভাঙা। পলিথিন ও টিনের টুকরো দিয়ে কোনও রকমে দরজার কাজ চলছে। |