দূষণ কমানোর পথে বাধা ট্যাক্সিমালিকেরা
দূষণে লাগাম দেওয়ার চেষ্টায় তৈরি হয়েছিল রূপরেখা। তা মানা দূরে থাক, বরং উল্টো পথেই হাঁটতে চাইছে কলকাতার ট্যাক্সি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা অনুযায়ী কথা ছিল, ২০১০-এর এপ্রিল থেকে কলকাতা-সহ দেশের ১৩টি বড় শহরে ছোট যাত্রিবাহী বাণিজ্যিক গাড়ি ‘ভারত স্টেজ (বিএস) ফোর’ ইঞ্জিনে চালাতে হবে। দেশের অন্যান্য শহরে এই প্রক্রিয়া চালু হয়েছে অনেক আগেই। পিছিয়ে কলকাতা। সরকার আগে জানিয়েছিল, এ শহরেও ২৭ মে-র পরে ‘বিএস থ্রি’ অর্থাৎ পুরনো ইঞ্জিনের ট্যাক্সির নয়া অনুমতি দেওয়া হবে না। এ বার এই নির্দেশ প্রত্যাহার করে ‘বিএস থ্রি’ ইঞ্জিন-নিয়ন্ত্রিত গাড়ির মেয়াদ ফের বাড়াতে উদ্যোগী হল মালিক সংগঠন।
যান-দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ইওরোপীয় ইউনিয়নের রূপরেখা মেনে সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯৯ সালে ‘ভারত স্টেজ’-অনুমোদিত ইঞ্জিন ব্যবহারের নির্দেশ দেয়। ২০০০ সালে ‘বি এস ওয়ান’, ২০০৩-এ ‘বি এস টু’ এবং ২০১০-এর অক্টোবর মাসে সারা দেশে চালু হয় ‘বিএস থ্রি’ ইঞ্জিনের ট্যাক্সি এবং বাণিজ্যিক বিলাস-গাড়ি। কথা ছিল, ২০১০-এর এপ্রিল থেকে ‘ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়ান’ ছাড়াও মুম্বই, কলকাতা, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, আমদাবাদ, পুণে, সুরাট, কানপুর, লখনউ, সোলাপুর এবং আগরায় ছোট যাত্রিবাহী বাণিজ্যিক গাড়ি (বিএস) ফোর’ ইঞ্জিনে চলবে। কলকাতা-বাদে অন্য শহরগুলি পর্যায়ক্রমে এই নির্দেশিকা মেনে নেয়।
জার্মানিতে ২০০৯-এর জানুয়ারি মাসেই মোট যাত্রিবাহী ছোট গাড়ির ৩৭.৩ শতাংশ (১ কোটি ৫৪ লক্ষ) ছিল ‘ইউরো ফোর’ ইঞ্জিনের। চিনের বেজিংয়ে ২০০৯-এর ১ জানুয়ারি চালু হয় এ রকম ইঞ্জিনের ট্যাক্সি। এ দেশেও এই মানের ট্যাক্সি চালু হয়েছে ২০১০-এ। কিন্তু কলকাতায় ‘বিএস ফোর’ মানের ইঞ্জিনের ট্যাক্সি প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে, নাইট্রোজেন এবং সালফারের মিশ্রণে অনেক বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হচ্ছে ট্যাক্সিগুলি থেকে।
কেন এই হাল কলকাতায়? পরিবহণ দফতরের ব্যাখ্যা, “ট্যাক্সি এবং লাক্সারি ট্যাক্সি হিসেবে এ শহরে মূলত স্থানীয় একটি গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থার মডেল চলত। তারা পর্যাপ্ত ‘বিএস ফোর’ ইঞ্জিনের গাড়ি সরবরাহ করতে পারছিল না। এই অবস্থায় কয়েক বছর আগে অপর দু’টি সংস্থার একটি করে মডেলকেও সরকারি স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু চালকেরা ওই দু’টি মডেলে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।” পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “জটিলতাটি নতুন নয়।
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি আমরা মহাকরণে সবিস্তার কথা বলেছি। দ্রুত সমাধানসূত্র খোঁজা হচ্ছে।”
কলকাতায় প্রায় ৩৪ হাজার ট্যাক্সির মধ্যে প্রায় সবই ‘বিএস থ্রি’ ইঞ্জিনের। বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিমল গুহ বলেন, “এগুলোর প্রায় সবই একটি নির্দিষ্ট প্রস্তুতকারকের এবং বিএস থ্রি’ ইঞ্জিনের। আমরা চাইলেও তারা ‘বিএস ফোর’ ইঞ্জিনের ট্যাক্সি দিতে পারেনি। বাকি যে দু’টি প্রস্তুতকারক সংস্থার দুই মডেলের গাড়ি সরকার অনুমোদিত, সব মিলিয়ে সেগুলো চালক-মালিকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়নি।”
ট্যাক্সির একচেটিয়া প্রস্তুতকারক সংস্থার এক পদস্থ অফিসার অবশ্য বলেন, “আমরা ‘বিএস ফোর’ ইঞ্জিনের ট্যাক্সি নামিয়েছি বেশ কিছু দিন আগেই। কিন্তু সেগুলো এলপিজি, সিএনজি এবং পেট্রোলে চলে। তাই বাজারে সে ভাবে গৃহীত হয়নি। এখন আমরা ডিজেলে চলে, এমন গাড়ি তৈরি করছি।” ট্যাক্সি-মালিক এবং সরকারি প্রতিনিধিদের কারখানায় নিয়ে গিয়ে সেগুলির কার্যকারিতা দেখানোর প্রস্তাবও দিয়েছে ওই প্রস্তুতকারক সংস্থা।
আর একটি নামী প্রস্তুতকারক সংস্থার পদস্থ আধিকারিক রাহুল দত্ত বলেন, “বিএস ফোর ইঞ্জিনের বিভিন্ন রকমের গাড়ি এ শহরে আমরা বেশ ক’বছর ধরেই বিক্রি করছি। এ সব গাড়ির দাম অতি-পরিচিত ট্যাক্সির মডেলের চেয়ে একটু বেশি হলেও গুণগত মান ভাল। প্রতি কিলোমিটারে চলেও বেশি।” এ রকম গাড়ির ব্যাপারে মালিকেরা কেন আগ্রহী নন? বিমল গুহর বক্তব্য, “বিএস থ্রি ইঞ্জিনের ট্যাক্সি বদল করে ওই নির্মাতার বিএস ফোর ইঞ্জিনের ট্যাক্সি নিলে সংস্থার তরফে ৫০ হাজার টাকা ছাড় দেয়। এ রকম সুযোগ না পেলে আমাদের দামি ট্যাক্সি কিনে টিকে থাকা মুশকিল। এ কারণেই বিএস থ্রি ইঞ্জিনের ট্যাক্সির মেয়াদ আবার বাড়াতে আর্জি জানাচ্ছি রাজ্য সরকারকে।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.