দ্রুত মজুরি বিলিতে নয়া পদ্ধতি চালু হল হুগলিতে |
নয়া পদ্ধতিতে মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পে (১০০ দিনের কাজ) রাজ্যের শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া শুরু হচ্ছে। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের কাজের খতিয়ান এবং মজুরির তালিকা-সহ মাস্টার-রোল ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠানো হবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরে। ওই দফতর তা খতিয়ে দেখে শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠিয়ে দেবে মজুরির টাকা। এই পদ্ধতির পোশাকি নাম ‘ইলেকট্রনিক ফান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (ইএফএমসি)। গত বুধবার রাজ্যের মধ্যে হুগলি জেলার চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের দেবানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েত দিয়ে শুরু হল ওই ব্যবস্থা রূপায়ণের কাজ। সে দিনই একটি পুকুর পুনর্সংস্কারের জন্য ২৬ জনের মাস্টার-রোল পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে।
কেন চালু হচ্ছে নয়া পদ্ধতি?
১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের রাজ্য কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার বলেন, “মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে গতি আনতে চালু হচ্ছে নয়া ব্যবস্থা। প্রথম দফায় হুগলিতে চালু হল ওই পদ্ধতি। উত্তর ২৪ পরগনাতেও এ ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ক্রমশ সব জেলার সব পঞ্চায়েতকেই এই ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” ওই প্রকল্পের হুগলি জেলার নোডাল অফিসার পুলক সরকার বলেন, “মাস্টার রোল পাঠানোর দু’এক দিনের মধ্যেই শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মজুরির টাকা চলে আসবে। এতে প্রকল্প সার্বিক ভাবে গতি পাবে। এত দিন কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে শ্রমিকদের মজুরি পেতে অনেক সময় মাস তিনেক গড়িয়ে যায়। নয়া ব্যবস্থায় তা হবে না।”
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রকল্পে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের চালু পদ্ধতি হল পঞ্চায়েত মাস্টার-রোল পাঠায় জেলা প্রশাসনে। জেলা প্রশাসন তা পাঠায় রাজ্য প্রশাসনের কাছে। রাজ্য প্রশাসনের হাত থেকে সেই মাস্টার-রোল যায় কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে। তার পরে কেন্দ্র টাকা মঞ্জুর করে। সেই টাকা রাজ্য প্রশাসনের হাত থেকে পেয়ে জেলা প্রশাসন পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় অনেক সময়েই শ্রমিকদের মজুরি পেতে দেরি হয়। অথচ, প্রকল্পের আইন অনুযায়ী, কাজের ১৫ দিনের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি পাওয়ার কথা। কিন্তু দেরির কারণে অনেক সময়েই গরিব শ্রমিকেরা কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। অনেক ক্ষেত্রে মজুরি বিলিতে অস্বচ্ছতা এবং টাকা পড়ে থাকার অভিযোগও ওঠে। সে সব এড়াতেই চালু হচ্ছে নতুন পদ্ধতি। প্রাথমিক ভাবে যে সব শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাঁদের নামই কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হচ্ছে এই ব্যবস্থায়। আপাতত পুরনো ব্যবস্থাও চালু থাকছে। যে সব শ্রমিকদের ডাকঘর বা পঞ্চায়েত সমিতিতে অ্যাকাউন্ট আছে, ধীরে ধীরে তাঁদেরও নতুন ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে।
তৃণমূল পরিচালিত দেবানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কাজিডাঙায় মল্লিকপুকুর পুনর্সংস্কারের কাজ দিয়ে বুধবার ‘ইএফএমসি’ পদ্ধতির সূচনা হয়। প্রধান তাপসী রুইদাস বলেন, “শ্রমিকদের মজুরি প্রদানের নতুন বন্দোবস্তের পরে এলাকায় কাজের চাহিদা বাড়ছে।” পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক বিপাশা মালিক জানান, নথিভুক্ত ১৩৯২ জন শ্রমিকের মধ্যে ২৬ জনের কাজের খতিয়ানই কেন্দ্রের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই শ্রমিকেরা তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মজুরির টাকা পেয়ে যাবেন বলে মনে করছেন প্রকল্পের জেলার নোডাল অফিসার পুলক সরকার। |