|
|
|
|
কংগ্রেসকে বার্তা |
চিনকে চিনতে অগ্রণী সিপিএম, ফের বিতর্ক |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
অনেক দশক আগে প্রমথনাথ বিশির কলম থেকে বেরিয়েছিল ‘হরেকৃষ্ণ কোঙার, লাল ঘোড়ে পে সওয়ার। বঙ্গদেশে রঙ্গ কেন? খোলা চিনের খোঁয়াড়’!
যুগ আলাদা। প্রসঙ্গও আলাদা। তবে চিন-বিতর্ক জারি রয়েছে এ দেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে। চিনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াঙের প্রথম ভারত সফরের সময় সিপিএমের অন্দরে পুরনো বিতর্ক বরং আবার নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে!
কমিউনিস্ট চিনের উল্টো পথে হেঁটে সিপিএমের যে কেন্দ্রীয় কমিটি এ দেশে মৃত্যুদণ্ড তুলে দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তারাই চিনের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে শংসাপত্র দিয়েছে মনমোহন সিংহের ইউপিএ সরকারকে। দলের একাংশের মতে, চিনকে উপলক্ষ করে আসলে লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের জন্য আরও একটি মোড়কে কৌশলী বার্তা পাঠিয়ে রেখেছেন প্রকাশ কারাটেরা। যার প্রেক্ষিতে সিপিএমের অন্য একটি অংশ আবার আশঙ্কা করছে, সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঘিরে জটিলতার মধ্যে চিন এবং ইউপিএ-র পিঠ চাপড়াতে গিয়ে হিতে না বিপরীত হয়!
দলের অভ্যন্তরীণ এই বিতর্কের মাঝেই চিনের প্রধানমন্ত্রীকে দিল্লিতে আপ্যায়নের সময় সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এবং রাজ্যসভার দলনেতা সীতারাম ইয়েচুরিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইউপিএ সরকার। প্রোটোকলের মধ্যে থেকেই ইয়েচুরি ওই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বিদেশি অতিথি এবং দেশি আপ্যায়নকারীদের কাছে ‘সুসম্পর্কের বার্তা’ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, “মধ্যাহ্নভোজ এবং নৈশভোজে দলের আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান ইয়েচুরি আমন্ত্রিত। তবে পৃথক কোনও বৈঠকের ব্যবস্থা নেই।” প্রসঙ্গত, রবিবারই দিল্লিতে পা রেখেছেন লি। প্রধানমন্ত্রী, ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী ছাড়াও লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী, বিজেপি-র সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও চিনের প্রধানমন্ত্রীর আলাদা করে কথা বলার কথা।
প্রোটোকল মেনেই লি বিরোধী দলনেত্রীর সঙ্গে বৈঠক তাঁর সূচিতে রেখেছেন বটে। কিন্তু বিজেপি-কে দুষেই মূলত সিপিএম তাদের দলের অন্দরে ইউপিএ-র পাশে দাঁড়ানোর অবস্থান নিয়েছে। চিনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার প্রশ্ন বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন মহল থেকে অন্ধ স্বদেশিকতা ও উগ্র জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগ তৈরি করার যে চেষ্টা চলছে, তা স্তিমিত করা দরকার। ইউপিএ সরকার এই ব্যাপারে সংযত অবস্থান নিয়েছে। তারা জানে, দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত (১৯৯৩ ও ১৯৯৬) অতীতের সমঝোতার উপরে ভিত্তি করেই আলোচনার পথে এই সমস্যা সামলানো সম্ভব’। লাদাখে সীমান্ত পেরিয়ে চিনা সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশের অভিযোগ ঘিরে সম্প্রতি যে সমস্যা তৈরি হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতে বিজেপি এবং সমাজবাদী পার্টি অকারণ উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করছে বলে কেন্দ্রীয় কমিটির ওই রাজনৈতিক রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়েছে। সংসদ চলাকালীন একই কথা শোনা গিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের মুখেও। ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা’কে কেন্দ্র করে উদ্ভূত সমস্যা সমাধান এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানোর জন্য দু’দেশের সরকার ১৯৯৩-এর সেপ্টেম্বর ও ১৯৯৬-এর নভেম্বরে যে সমঝোতাপত্র গ্রহণ করেছিল, তার কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির ওই দলিলে। সাম্প্রতিক সমস্যায় ইউপিএ সরকারের পাশাপাশি চিনের সামরিক কর্তৃপক্ষের ভূমিকাকেও ইতিবাচক বলে দেখানো হয়েছে।
ওই রিপোর্টের প্রেক্ষিতেই সিপিএমের তিন শক্ত ঘাঁটি ত্রিপুরা, কেরল ও পশ্চিমবঙ্গের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের একাংশের প্রশ্ন, লোকসভা ভোটের আগে নানা সমস্যায় ইউপিএ যখন জর্জরিত, সেই সময় যেচে চিন-বিতর্ক খুঁচিয়ে তোলার কি দরকার ছিল? এমনিতেই, ছয়ের দশকের সেই যুদ্ধের সময় থেকে এ দেশের কমিউনিস্টদের গায়ে ‘চিনের দালাল’ তকমা সেঁটে গিয়েছে। সে যুগে চিন-সম্পর্ক নিয়ে কমিউনিস্টদের মস্করা করে কার্টুনও হত বিস্তর! এখন একটি দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে চিনের পক্ষে দাঁড়াতে এত দূর না এগোলেও চলত। দলেরই অন্য অংশের বক্তব্য, চিনের থেকেও এই ক্ষেত্রে ইউপিএ-র প্রতি বার্তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেই কয়লা-দুর্নীতির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি না করে ইউপিএ-র প্রতি নরম অবস্থান নিয়েছেন কারাট। চিন-প্রশ্নকেও একই আলোয় দেখতে হবে বলে দলের এই অংশ মনে করছে।
কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “চিন-প্রশ্নে অবশ্যই ঝুঁকি আছে। তবে তৃতীয় ফ্রন্টের চেয়ে কম!”
|
|
|
|
|
|