|
|
|
|
মোদী-ঘনিষ্ঠের হাতে উত্তরপ্রদেশ, বাংলায় বরুণ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
লোকসভা জয়ের জন্য যে উত্তরপ্রদেশের উপর সব থেকে বেশি নজর বিজেপির, বকলমে আজ তার দায়িত্ব নিজের হাতে নিলেন নরেন্দ্র মোদী। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলার জামাই বরুণ গাঁধীকে।
সভাপতি হওয়ার পর আজই বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ বিভিন্ন রাজ্যের দায়িত্ব দলের কার কার হাতে দেওয়া হবে, তা ঘোষণা করেন। বরুণ গাঁধীকে যেমন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তেমনই উত্তরপ্রদেশকে তালিকার সব থেকে শীর্ষে রেখে সে রাজ্যের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে মোদীর ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহকে। নিজের নতুন দল ঘোষণার সময়ে অমিত শাহকে সাধারণ সম্পাদক করে এনেছিলেন রাজনাথ। এ বারে সরাসরি তাঁকে উত্তরপ্রদেশের সংগঠন সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হল। বিজেপি নেতাদের মতে, অমিত শাহ উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব পাওয়ার অর্থ সরাসরি সেটি মোদীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া। রাজনাথ নিজে উত্তরপ্রদেশের নেতা। মোদী ও রাজনাথের মধ্যে সংযোগের কাজটিই করবেন অমিত শাহ।
এ দিকে এবিপি নিউজ ও এ সি নিয়েলসেন-এর সমীক্ষা অনুযায়ী আজই লোকসভা নির্বাচন হলে এই উত্তরপ্রদেশের ৮০টির মধ্যে বিজেপি ২৩টি আসন পাবে। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১০টি আসন পেয়েছিল। সমীক্ষা অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশে সব থেকে বড় দল হিসাবে সমাজবাদী পার্টি উঠে এলেও, তারা বিজেপির থেকে মাত্র একটি বেশি আসন পেতে পারে। বিজেপি সূত্রের মতে, যতই নেতৃত্বের লড়াই থাকুক, মোদী-বিরোধিতা হোক, এই মুহূর্তে দলে মোদীর মতো জনপ্রিয় নেতা আর নেই। ধাপে ধাপে তাঁর উত্থানের যে নকশা তৈরি হয়েছে, উত্তরপ্রদেশে তাঁর ঘনিষ্ঠের দায়িত্ব পাওয়াও তার অঙ্গ। সমীক্ষার ফল অনুসারে এখনই ভোট হলে হয়তো উত্তরপ্রদেশে গত বারের চেয়ে ১৩টির বেশি আসন পাওয়া যাবে না। কিন্তু মোদী সে রাজ্যের দায়িত্ব তুলে নিয়ে প্রচার শুরু করলে সময়ে এই অঙ্কও ছাপিয়ে যাওয়া যাবে। অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রাক্তন নির্বাচনী কেন্দ্র লখনউ থেকে মোদীকে প্রার্থী করার চাপ রয়েছে। সেখানে মোদীর পক্ষে সওয়াল করে পোস্টারও সাঁটা হয়েছে। বারাণসী থেকে মোদীর লড়া নিয়েও জল্পনা চলছে।
এবিপি নিউজ-এ সি নিয়েলসেন-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, নির্বাচনে মূল্যবৃদ্ধি, ধারাবাহিক বড় দুর্নীতি, আর্থিক মন্দা ও সরকারের শীর্ষ স্তরের সিদ্ধান্তহীনতার শিকার হতে পারে কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এমনকী দিল্লিতেও কংগ্রেস ভোটে ধাক্কা খেতে পারে। উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ১১টি আসন পেলেও এ বারে সেটি নেমে আসতে পারে ৬টিতে। দিল্লিতে গত বার কংগ্রেস ৭টি আসনের সব ক’টি পেলেও এ বার তাদের থেকে ৫টি আসন ছিনিয়ে নিতে পারে বিজেপি। মহারাষ্ট্রেও কংগ্রেস-এনসিপি জোটের আসন কমছে, বাড়ছে বিজেপি-শিবসেনা। মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরলে নীতীশ কুমার যদিও জোট ছাড়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন, কিন্তু তিনি জোটে থাকলে আসন বাড়তে পারে। কিন্তু লালু যদি কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলান কিংবা জেডি(ইউ) জোট ছেড়ে কংগ্রেসের সঙ্গী হয়, তা হলে বিজেপি বেশি আসন আনতে পারবে না।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপির ভরসা গোবলয়ে তাদের চিরাচরিত ভোটব্যাঙ্ক। পূর্ব ও দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বিজেপির অবস্থা এখনও শোধরায়নি। তার উপর দক্ষিণে দখল করা প্রথম রাজ্য কর্নাটকও সম্প্রতি হাতছাড়া হয়েছে, যেখানে গত লোকসভা আসনে সর্বাধিক আসন পেয়েছিল বিজেপি। ফলে বিজেপি নেতৃত্ব এ বারে সব চেয়ে জোর দিচ্ছেন উত্তরপ্রদেশের ওপরেই। লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো নেতারা বারবার বলে এসেছেন, উত্তরপ্রদেশে ঘাঁটি গাড়তে না পারলে দেশের ক্ষমতা দখলের স্বপ্নও অধরা থেকে যাবে। এই অবস্থায় রাজনাথ সিংহ দলের অঘোষিত মুখ নরেন্দ্র মোদীর হাতেই রাজ্যটির দায়িত্ব তুলে দিলেন। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “রামমন্দির আন্দোলনের পর বাজপেয়ী সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলেও বিজেপির অনেক পুরনো ভোটারের মোহভঙ্গ হয়েছে। কারণ, এনডিএ সরকার রামমন্দির নির্মাণ করতে উদ্যোগী হয়নি। মোদী সেখানে গিয়ে উগ্র হিন্দুত্বের কথা না বললেও সেই ভোটারদের মধ্যে উদ্দীপনা তৈরি হবে। আর বিরোধীরা সাম্প্রদায়িক তাস খেললেও বিজেপির ক্ষতি নেই।” যদিও মোদী ঘনিষ্ঠ বিজেপির মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখির দাবি, “অমিত শাহকে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার কারণেই। গুজরাতে তিনি কাজ দেখিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশেও তিনি যদি নির্বাচন জেতাতে পারেন, ক্ষতি কী?”
রাজনাথ গোবলয়ের পাশাপাশি দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলকেও বাড়তি জোর দিয়েছেন। এর আগে চন্দন মিত্র পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকলেও তাঁকে ওড়িশায় পাঠানো হয়েছে। বরুণ গাঁধী আগে অসমের দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে সুরিন্দর সিংহ অহলুয়ালিয়াকে পাঠানো হয়েছে। গাঁধী পরিবারের এই তরুণ সদস্যকে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ প্রসঙ্গে বলেন, “বরুণ গাঁধী দায়িত্ব পাওয়ার পর রাজ্যের ভাল হবে। পশ্চিমবঙ্গে যুব সমাজকে আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে বরুণ যথেষ্টই উপযোগী হবেন।”
|
মতিগতি |
উত্তরপ্রদেশ |
বিহার |
ইউপিএ ১১
এনডিএ ২৩
বিএসপি ২১
সপা ২৪
অন্যান্য ১ |
ইউপিএ ৩
এনডিএ ৩৪
(বিজেপি ১০ জেডিইউ ২৪) |
মহারাষ্ট্র |
ইউপিএ ১৬
এনডিএ ২৯ |
এবিপি নিউজ-এসি নিয়েলসেনের সমীক্ষা *আসনের হিসেব |
|
|
|
|
|
|