বিক্ষোভে তপ্ত আদালত চত্বর, সুদীপ্ত ফের পুলিশ হেফাজতে
সারদা কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে মানুষের ক্ষোভ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, রবিবার প্রথম তার আঁচ পেলেন সুদীপ্ত সেন।
এ দিন দফায় দফায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বারুইপুর আদালত চত্বর। আগাম সতর্কতা এবং যথেষ্ট পুলিশি ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীদের সামলাতে রীতিমতো নাজেহাল হয় পুলিশ। পুলিশি লাঠিচার্জে মাথা ফেটে যায় এক এজেন্টের। এই উত্তপ্ত আবহাওয়ার মধ্যেই আদালতের ভিতরে সুদীপ্তকে হেফাজতে চেয়ে নেয় দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশ। সুদীপ্ত নিজেও এজলাসে দাঁড়িয়ে সরাসরি বিচারককে বলেন, “আমার পুলিশ হেফাজতে থাকতেই সুবিধে হচ্ছে।”
নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষের অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত মামলায় টানা ২৩ দিন পুলিশ হেফাজতে ছিলেন সুদীপ্ত। শনিবারই বিধাননগর আদালতে বিধাননগর কমিশনারেট জানিয়েছিল, তাদের আর সুদীপ্তকে হেফাজতে রাখার
পুলিশের লাঠির আঘাতে জখম সারদার এজেন্ট রহিম ঢালি।
প্রয়োজন নেই। ফলে শনিবার সুদীপ্তকে দমদম জেলে পাঠানো হয়।
কিন্তু তখনই ঠিক ছিল, রবিবার সুদীপ্তকে বারুইপুর আদালতে তুলে নিজের হেফাজতে নেবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশ। বারুইপুরের নতুনপাড়ার বাসিন্দা তথা সারদার এজেন্ট ও আমানতকারী মানিক চক্রবর্তী-সহ প্রায় তিন হাজার আমানতকারী সুদীপ্ত-দেবযানীদের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণা-সহ চারটি ধারায় মামলা করেছেন। সেই মামলায় এ বার সুদীপ্তদের জেরা করবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশের তিনটি দল।
রবিবার সওয়া ১টা নাগাদ দমদম জেল থেকে বারুইপুর আদালতে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং তাঁর গাড়ির চালক অরবিন্দ চৌহানকে নিয়ে আসে পুলিশ। তার অনেক আগে থেকেই আদালত চত্বরে জড়ো হচ্ছিলেন আমানতকারীরা। ছিলেন স্থানীয় বিজেপি এবং কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরাও। বিক্ষোভের আঁচ পেয়ে সুদীপ্তরা পৌঁছনোর অনেক আগেই আদালত চত্বর ঘিরে ফেলে পুলিশ বাহিনী-সহ র্যাফ এবং কমব্যাট ফোর্স। আসেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কঙ্করপ্রসাদ বারুই, ডিএসপি (অপরাধ) সলিল ভট্টাচার্য-সহ জেলার পদস্থ পুলিশ কর্তারাও। সুদীপ্ত সেনের গাড়ি ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে শুরু করে দেন। পুলিশ কোনও রকমে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে কোর্ট লক-আপে ঢুকিয়ে দেয় সুদীপ্তদের। কিন্তু কোর্ট চত্বরে বিক্ষোভকারীদের স্লোগান চলতেই থাকে। শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে আদালত চত্বরের বাইরে পাঠিয়ে আদালতের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয় পুলিশ। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে সওয়া তিনটে নাগাদ সুদীপ্ত সেন এজলাস থেকে বেরনোর সঙ্গে সঙ্গে ফের বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। বিজেপি ও কংগ্রেস সমর্থকেরা সুদীপ্ত সেনকে জুতোর মালা পরানোর জন্য গাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে যান। পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় তাঁদের। কোনও রকমে সুদীপ্তদের নিয়ে পুলিশের গাড়ি আদালত ছাড়ে।
কিন্তু বিক্ষোভ চলতেই থাকে। শেষে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে র্যাফ এবং
কমব্যাট ফোর্স। লাঠির ঘায়ে জখম হন সারদার এজেন্ট, মগরাহাটের বাসিন্দা রহিম ঢালি। বিকেল চারটে নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও সন্ধ্যা অবধি এলাকায় উত্তেজনা ছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
এ দিন অভিযোগকারী মানিক চক্রবর্তী আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, “প্রতি মাসে প্রায় ৩০ কোটি টাকার আমানত বারুইপুর অফিসে জমা হত। আমরা প্রতারিত হয়েছি।” অথচ সুদীপ্ত এর আগে পুলিশি জেরায় যা বলেছেন, সেটাই এ দিন আদালতেও বলেন। সুদীপ্তর বক্তব্য, তিনি নিজেও প্রতারিত হয়েছেন।
পুলিশের কাছে সুদীপ্ত অভিযোগ করেছেন, বারুইপুর অফিসের ডিভিশনাল ম্যানেজার অরিন্দম দাস ওরফে বুম্বা ব্যবসার অনেক ক্ষতি করেছেন। জমি কিনে তা বিক্রি করে দিয়েছেন। নিজের নামেও জমি কিনেছেন। সে কথারই প্রতিধ্বনি করে সুদীপ্ত এ দিন এজলাসে দাঁড়িয়ে বলেন, “আমার সংস্থার ব্যবস্থায় অনেক গাফিলতি ছিল। বারুইপুরের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এখানেও দুর্নীতি হয়েছে। সব কিছুই আমি পুলিশকে বলতে চাই।” শুধু বুম্বা নয়, নিজের দলের আরও অনেকেই তাঁকে ডুবিয়েছে বলে সুদীপ্তর দাবি।
বারুইপুর আদালতে ঢোকার মুখে সুদীপ্ত সেন।
তাঁর অভিযোগ, “আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে অনেকেই আমাকে ডুবিয়েছে। পাসওয়ার্ড চুরি করে টাকা মেরে দিয়েছে। মাস আটেক আগে আমি তা জানতে পারি।”
বারুইপুরের অতিরিক্ত দায়রা আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট দেবদীপ মান্নার সামনে সুদীপ্তর আইনজীবী সমর পালও এ দিন বলছিলেন, তাঁর মক্কেল দুর্নীতি করেননি। বিভিন্ন গাফিলতির জন্যই সংস্থা ডুবে গিয়েছে। অনেক সংস্থাই অতীতে এ ভাবে ডুবেছে। তাঁর মক্কেলের প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে। জমি-সহ বেশ কিছু স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হদিসও পেয়েছে পুলিশ।
সমরবাবু আরও বলেন, টানা ২৩ দিন পুলিশ হেফাজতে ছিলেন সুদীপ্ত। ফের তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে। এই সময় হঠাৎই তাঁকে থামিয়ে নিজে বিচারককে কিছু বলার অনুমতি চান ঘিয়ে রঙা পাজামা-পাঞ্জাবি পরে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো সুদীপ্ত।
অনুমতি পেয়ে দু’হাতে লকআপের গরাদ ধরে দাঁড়িয়ে সুদীপ্ত বলেন, “আমার পুলিশ হেফাজতে থাকতেই সুবিধে হচ্ছে। হৃদযন্ত্রের সমস্যা আছে আমার। পরের বার আপনি বরং একটু দেখবেন।”
প্রায় আড়াই-তিন মিনিট কথা বলেন সুদীপ্ত। ইংরেজিতে বলেন, “আমার আইনজীবী একটু ভুল বলেছেন। আমার নামে কোনও জমি ছিল না। জমি এবং সম্পত্তি যা ছিল, সবই সংস্থার নামে। যা সম্পত্তি হস্তান্তর হয়েছে, তা সংস্থার নামেই হয়েছে।”
আদালত থেকে বের হওয়ার সময়েও সুদীপ্ত এ দিন ফের দাবি করেন, তাঁর নিজের টিমই তাঁকে ডুবিয়েছে। তিন মাস পরে সব তথ্য প্রকাশ হবে।
এর আগে সিবিআইকে দেওয়া চিঠিতে সুদীপ্ত রাজনৈতিক নেতাদের দিকে আঙুল তুলেছিলেন। এ দিন কিন্তু তাঁর অভিযোগের তির আগাগোড়া নিজের লোকেদের দিকেই ছিল। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে টাকা দেওয়ার প্রসঙ্গটি কিছুটা লঘু করে দিয়ে তিনি বলেন, “এই ধরনের ব্যবসা রাজনৈতিক দলকে টাকা দিয়েই করতে হয়। রাজনৈতিক দলগুলির নানা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হয়। না হলে ব্যবসা করা যায় না।”
বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ সুদীপ্ত ও অরিবন্দকে নিয়ে নিউটাউন থানার উদ্দেশে রওনা দেয় পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের হেফাজতে গিয়েও নিউটাউন থানাতেই থাকবেন সুদীপ্তরা। শনিবার রাতেই বিধাননগর কমিশনারেটের কাছে এই মর্মে আবেদন করেছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশ।
রবিবার সকালে আবেদন মঞ্জুর করে কমিশনারেট। কেন? দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার এক পুলিশ-কর্তার কথায়, “সোনারপুর ও বারুইপুর থানায় সুদীপ্ত ও অরবিন্দকে রাখার ঝুঁকি রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা থানায় হামলা চালাতে পারে। সেই কারণে নিউটাউন থানাতেই ওদের দু’জনকে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” এ দিন সন্ধেয় বারুইপুরের এসডিপিও দীপক সরকারের নেতৃত্বে সুদীপ্তকে এক প্রস্ত জেরা করা হয়েছে।
—নিজস্ব চিত্র
পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.