লক্ষণগুলো ভালর দিকেই যাচ্ছিল। সৃষ্টি হচ্ছিল একটি ভাল লাগার পরিবেশ। আগুনে ঘি পড়ল তখনই, যখন জানা গেল সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি ৫ শতাংশেরও নীচে পৌঁছে গিয়েছে। অতএব বাজার ধরেই নিল, ১৭ জুন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমাচ্ছে। এই আশায় ভর করে বুধবার সেনসেক্স এক লাফে বাড়ে ৪৯০ অঙ্ক। অল্প হলেও বাজার ওঠে পরের দু’দিনও। সূচক পৌঁছে যায় ৩০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ জায়গায়।
সুদ যে-কমতে পারে, তার ইঙ্গিত মিলেছে স্বয়ং সুব্বারাওয়ের মুখ থেকেই। যে-কারণে বাজারে তৈরি হয় উৎসবের পরিবেশ। চুটিয়ে সওদা করতে নামে বিদেশি লগ্নিকারীরা। ফলে সূচককে আর নীচের দিকে তাকাতে হয়নি। গরম বাজারে তেতে উঠেছে ব্যাঙ্ক, গাড়ি, এমনকী মূলধনী পণ্য-সহ বেশ কিছু শিল্প শেয়ার।
আসছে ভাল কোম্পানি ফলাফলের খবরও। আশার তুলনায় অনেকটাই ভাল ফল উপহার দিয়েছে অগ্রণী এফএমসিজি কোম্পানি আইটিসি। সুদ কমার আশা যতদিন জিইয়ে থাকবে, বিশ্ব বাজার যতদিন তেজী থাকবে, বিদেশি লগ্নিকারীরা যতদিন ক্রেতার ভূমিকায় থাকবে বাজার ততদিন শক্তি ধরে রাখতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু বাজার হঠাৎ এতটা উঠে আসায় লাভ ঘরে তোলার তাগিদে কিছুটা বিক্রির চাপও আসবে। তবে মোটের উপর পরিবেশ এখন ভালর দিকেই যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। |
শেয়ার বাজার আশা জাগালেও ক্রমাগত মূল্য পতনে হতাশ অবস্থা সোনায় লগ্নিকারীদের। বিশ্ব বাজারে পড়েই চলেছে এই হলুদ ধাতুর দাম। প্রথম দিকে সরকার ভেবেছিল, সোনার দাম কমায় আমদানি খরচ কমবে। কিন্তু দাম কমায় চাহিদা এমন বেড়ে গিয়েছে, যার জেরে সরকার এখন বিশেষ ভাবে চিন্তিত। এই পরিস্থিতিতে সরকার এখন সোনা আমদানির উপর বাড়তি নিয়ন্ত্রণ আনার কথা ভাবছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে ভারতে সোনার চাহিদা বেড়েছে ২৭ শতাংশ, যখন গোটা বিশ্বে চাহিদা কমেছে ১৩ শতাংশ। এক দিকে মূল্যপতন এবং অন্য দিকে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকদের চাহিদার হাত ধরে এ দেশে সোনার চাহিদা এতটা বেড়ে ওঠে। বিশ্ব বাজারে সোনার দাম আরও কমতে পারে বলে ইঙ্গিত আসছে। যার প্রভাব ভারতেও পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে সরকার যদি সোনা আমদানির উপর আরও নিয়ন্ত্রণ জারি করে এবং তার প্রভাবে যদি আমদানি হ্রাস পায়, তবে ভারতে সোনার দাম আবার বাড়তেও পারে।
গত সপ্তাহের আর একটি বড় খবর হল, মূল্যবৃদ্ধি সূচক বন্ড (ইনফ্লেশন ইনডেক্স বন্ড) ইস্যুর কথা ঘোষণা। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে গৃহস্থ যাতে যুঝতে পারেন, সে কথা মাথায় রেখে এই বন্ডের কথা বলা হয়েছিল এ বারের বাজেটে। জুন মাসের ৪ তারিখে প্রথম ইস্যু করা হবে এই বন্ড। প্রথম দফায় এই বন্ড ইস্যু করা হবে শুধু মাত্র প্রাতিষ্ঠানিক লগ্নিকারীদের জন্য। খুচরো লগ্নিকারীরা এই বন্ডে লগ্নি করার সুযোগ পাবেন অক্টোবর মাস থেকে। এক বারে না-করে দফায় দফায় ইস্যু করা হবে ইনফ্লেশন ইনডেক্স বন্ড। চলতি আর্থিক বছরে মোট ইস্যু করা হতে পারে ১২,০০০ কোটি থেকে ১৫,০০০ কোটি টাকার বন্ড। এ বার একনজরে দেখে নেওয়া যাক এই বন্ডের বৈশিষ্ট্য:
১) এই বন্ডের মেয়াদ হবে ১০ বছর।
২) ঘোষিত সুদের হার গোটা মেয়াদে একই থাকবে। মূল্যমান অনুযায়ী পাল্টাবে বন্ডের মূল দাম, যার উপর কষা হবে সুদ। মূল্যমান বৃদ্ধি পেলে বাড়িয়ে দেওয়া হবে বন্ডের মূল্য, যাতে প্রকৃত সুদ বৃদ্ধি পায়। উল্টোটা করা হবে পণ্যের বাজার দর কমলে। একটি উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করা যাক। ধরা যাক বন্ডের ফেস ভ্যালু ১,০০০ টাকা এবং ঘোষিত সুদের হার ৭ শতাংশ। প্রথম বছরের শেষে যদি মূল্যবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হয়, তবে বন্ডের মূল দামকে ১,০৮০ টাকা ধরে নিয়ে তার উপর সুদ কষা হবে। অর্থাৎ প্রথম বছরে ৭০ টাকা সুদের জায়গায় দ্বিতীয় বছরে পাওয়া যেতে পারে ৭৫.৬০ টাকা সুদ। দ্বিতীয় বছরের শেষে যদি সূচক বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ হয়, তবে সুদ কষার জন্য বন্ডের দাম ধরা হবে ১,১৮৮ টাকা। এর উপর দেওয়া হবে ৭ শতাংশ সুদ। উদাহরণটি কাল্পনিক। বন্ড ইস্যুর শর্ত দেখে আরও ভাল করে বোঝা যাবে সুদ কষার অঙ্ক।
৩) সুদ কষার জন্য বন্ডের মূল্য নির্ধারণ করা হবে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধিকে (পাইকারি মূল্য সূচককে) ভিত্তি করে।
৪) সুদ করযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
৫) মোট ইস্যুর ২০ শতাংশ সংরক্ষিত রাখা হবে খুচরো লগ্নিকারীদের জন্য।
৬) কেনাবেচার জন্য এই বন্ড বাজারে নথিবদ্ধ হবে কি না, সেই ইঙ্গিত এখনও পাওয়া যায়নি।
|