একশো দিন পর সেনসেক্স আবার ঘর বেঁধেছে ২০ হাজারে। মাত্র কিছু দিন আগেই মুম্বই সূচক নেমে গিয়েছিল ১৮ হাজারের ঘরে। বিশ্ব অর্থনীতির সামান্য উন্নতির আভাসে সেখান থেকে হঠাৎই দ্রুত উত্থান। পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে আশার আলো দেখা দিয়েছে ভারতেও। কিছুটা হলেও শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি, মূল্যবৃদ্ধির হারে পতন, রেপো রেট তৃতীয় বার ২৫ বেসিস পয়েন্ট হ্রাস, বিশ্ব বাজারে সোনা ও জ্বালানি তেলের দাম কমা, স্বাভাবিক বর্ষার পূর্বাভাস ইত্যাদি অনেকটা শক্তি জুগিয়েছে শেয়ার বাজারকে।
তবে এতটা উত্থান সত্ত্বেও আমরা ‘বুল বাজারে’ ফিরে এসেছি, তা এখনই বলা যাবে না। কারণ অর্থনীতি নিয়ে দুশ্চিন্তা কিছুটা থেকে গিয়েছে। ডিজেলের দাম ফের বাড়ানো হয়েছে লিটারে ১ টাকা। বিদেশি লগ্নিকারীদের এ খবর উৎসাহিত করলেও মূল্যবৃদ্ধিকে তা আবার উস্কে দিতে পারে। যে সম্ভাবনা আগাম মাথায় রেখেই সুব্বারাও সম্ভবত এক লপ্তে রেপো রেট ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর পথে হাঁটেননি। বাজার উঠেছে বিদেশি লগ্নিকারীরা নতুন করে বিনিয়োগের পথে নামায়। ভারতীয় লগ্নিকারীরা কিন্তু এখনও তেমন ভাবে এই উত্থানে সামিল হননি। বরং অনেকেই বসে আছেন দাম আর একটু বাড়লেই বিক্রি করতে নামবেন বলে। লাভ ঘরে তোলার তাগিদে বিক্রির চাপ এলে বাজার আবার ঝুঁকে পড়তেই পারে। সে ক্ষেত্রে অবস্থা অনেকটাই নির্ভর করবে বিদেশি লগ্নিকারীরা ক্রেতা হিসাবে কত দিন বাজারে থাকছে তার উপর।
সূচক ২০ হাজারের শৃঙ্গ জয় করলেও সব শেয়ার কিন্তু এই ঊর্ধ্বচাপে সামিল হয়নি। তবে অনেকটা পতনের পর গত কয়েক দিনে বহু মিড ক্যাপ ও স্মল ক্যাপ শেয়ারকে উঠতে দেখা গিয়েছে। আশামতো সুদ কমেনি বলে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে ব্যাঙ্ক শেয়ারগুলি। শুক্রবার হঠাৎই তেজি ভাব ফিরে আসে গাড়ি ও মোটরবাইক নির্মাণকারী সংস্থার শেয়ারে। দ্রুত ১৭০০ টাকার মাত্রা ছাড়ায় মারুতি সুজুকি। শনিবার বাজার খোলা ছিল প্রযুক্তির ব্যাপারগুলি পরীক্ষা করার জন্য। এ দিনও সূচক খানিকটা এগিয়েছে। বিশেষ করে বেড়েছে তথ্য প্রযুক্তি শেয়ার। মার্কিন অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরার ইঙ্গিতে একটু একটু করে তেজি হয়ে উঠছে ভারতের আইটি শেয়ারগুলি। এরই মধ্যে ন্যাসডাক ও ডাও জোন্স পৌঁছেছে রেকর্ড উচ্চতায়। এর সুফল আসছে ভারতীয় বাজারেও। শনিবার সেনসেক্স ও নিফটি বন্ধ হয় যথাক্রমে ২০,১২২ ও ৬,১০৭ অঙ্কে।
শেয়ার বাজার হঠাৎ কিছুটা চাঙ্গা হয়ে ওঠায় কম-বেশি ন্যাভ বেড়েছে বেশির ভাগ ইক্যুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল প্রকল্পের। ন্যাভ বাড়েনি বলে বহু দিন ধরে হতাশ হয়ে বসে ছিলেন যে সমস্ত লগ্নিকারী, তাঁরা এই বাজারের সুযোগ নিতে পারেন। বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে শেয়ারের দাম বাড়ায় যে সব মিউচুয়াল প্রকল্পের টাকা বিদেশি শেয়ারে লগ্নি করা হয়, অনেক দিন পর ন্যাভ বেড়েছে সেই সব ইউনিটেরও। শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফের রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমালেও ঋণে সুদ কমেনি। ব্যাঙ্কগুলির বক্তব্য, আমানতে সুদ কমানো না হলে ঋণে সুদ কমানো সম্ভব নয়। এই ব্যাপারে আইডিবিআই ব্যাঙ্ক অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। সরকারি মালিকানার এই ব্যাঙ্ক বিভিন্ন মেয়াদের জমায় সুদ কমাচ্ছে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে। অন্যান্য কিছু ব্যাঙ্কও এই পথে হাঁটতে পারে। ঋণে সুদ কমতে শুরু করলে তা অর্থনীতির পক্ষে শুভ হবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ফের ঋণনীতির পর্যালোচনা করবে জুনে। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, এর মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি আরও একটু কমলে রেপো রেট ফের ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমতে পারে। আর সত্যিই যদি সেটা হয়, তবে বাজারে চাঙ্গা ভাব বজায় থাকবে বলে আশা করছে তারা। |