বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির রমরমা ঠেকাতে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাগুলির ভূমিকা কী, খতিয়ে দেখতে চাইছে লোকসভার অর্থ বিষয়ক স্থায়ী কমিটি। সারদা-কাণ্ডের প্রেক্ষিতেই কেন্দ্রীয় অর্থ ও কোম্পানি বিষয়ক দফতরের আধিকারিকদের ডেকে পাঠিয়ে তাঁদের বক্তব্য জানতে চাইছে ওই কমিটি। আগামী ১৭ মে দিল্লিতে এই বিষয়ে ওই কমিটির প্রথম বৈঠক। তার পরে ২৪ মে দ্বিতীয় দফার বৈঠকে হাজির থাকতে বলা হচ্ছে সেবি এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের।
সারদা-কাণ্ড সামনে আসার পর থেকেই এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে আসছেন, এই ধরনের সংস্থা সংক্রান্ত আইন রয়েছে কেন্দ্রের হাতে।
বাম জমানার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তও বলছেন, এই জাতীয় সংস্থার অনুমোদন কোনও ভাবেই রাজ্য সরকারের হাতে নেই। এই প্রেক্ষিতেই অর্থ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রক এবং সেবি-র বক্তব্য জানার জন্য কমিটির চেয়ারম্যান, বিজেপি-র যশবন্ত সিন্হার কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত। যশবন্ত সেই প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন। তৃণমূলের তরফে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই কমিটির সদস্য। এখন যা পরিস্থিতি, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেছে কি না, তা নিয়ে তারা তৃণমূল এবং বামের যৌথ প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। প্রসঙ্গত, কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীও এই কমিটিতে আছেন।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকের জন্য যে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে, তাতে ‘চিট ফান্ডের কাজকর্ম’ আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের একাংশ মনে করছেন, কোম্পানি বিষয়ক দফতরের অধীন কোম্পানি নিয়ামকের কাছ থেকে যে কোনও সংস্থা হিসাবে অনুমোদন নিয়ে অনেকেই টাকা তোলার কাজ করছে। তাদের ওই কারবার সম্পূর্ণ বেআইনি। সেবি একটু সক্রিয় হয়ে খোঁজ নিলেই এদের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব ছিল। এরই পাশাপাশি, সংসদের আগামী অধিবেশনে চিট ফান্ড আইন সংশোধনের লক্ষ্যে একটি বেসরকারি বিল আনতে চাইছেন গুরুদাসবাবু। তাতে এমন কিছু প্রস্তাব রাখা হচ্ছে, যা মেনে নিলে এই ধরনের অর্থলগ্নি সংস্থার কারবার চালানোই দুরূহ হয়ে পড়বে। বাম এবং বিজেপি সাংসদদের একাংশের বক্তব্য, সারদা গোষ্ঠী তৃণমূলের রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করেছিল। রাজ্য সরকার তথা তৃণমূলের অন্যায় সারদার সঙ্গে মাখামাখি করা। কিন্তু তা-ই বলে আইনি দিক থেকে সেবি বা কোম্পানি বিষয়ক দফতর দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।
সারদার ঘটনা এবং রেলে মমতার আমলের কাজকর্মের সিবিআই তদন্ত চেয়ে বামেরা অবশ্য তৃণমূলের উপরে চাপ অব্যাহত রেখেছে। ক্যানিংয়ে রবিবারই কৃষক সভার আয়োজনে এক সভায় সিপিএম বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা বলেছেন, “রাজ্যের মতো কেন্দ্রেও কেলেঙ্কারির সরকার চলছে। সেখানে কয়লা কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে সিবিআই। এ রাজ্যেও সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত সিবিআই করলে সবাই ধরা পড়ত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সিবিআই তদন্ত চাইছেন না। তাতে অবশ্য আমাদের কিছু যায় আসে না!” |