নিয়ম না-মেনে ‘অস্বচ্ছ’ কারবার চালানোর জন্য সারদা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এফআইআর করার পরামর্শ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চিঠি দিয়েছিল সেবি। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে দাখিল করা হলফনামায় সেবি’র দাবি, গত ২৩ এপ্রিল রাজ্যকে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার সে পরামর্শ এখনও মানেনি বলে তাদের অভিযোগ।
রাজ্য অবশ্য এ বিষয়ে যথোপযুক্ত পদক্ষেপের আশ্বাস দিচ্ছে। হাইকোর্ট-সূত্রের খবর: সারদা সংক্রান্ত জনস্বার্থ-মামলায় এ দিন রাজ্যের দাখিল হলফনামায় বলা হয়েছে, প্রশাসন ইতিমধ্যে সারদা-কাণ্ডের তদন্তে বিশেষ দল (সিট) গড়েছে। সিট-ই সেবি’র পরামর্শমতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে হলফনামায় জানিয়েছে মহাকরণ। প্রসঙ্গত, সুদীপ্ত সেন-সহ সারদার তিন জনকে পুলিশ কাশ্মীরে গ্রেফতার করেছে যে অভিযোগটির ভিত্তিতে, সেটি দায়ের করেছিলেন সারদারই কয়েক জন কর্মী। তাঁদের নালিশ ছিল বেতন না-পাওয়ার।
সেবি-সূত্রের খবর: ২০১০-এর এপ্রিলে রাজ্যের তদানীন্তন বামফ্রন্টের সরকারের অর্থ দফতরের অধীনস্থ আর্থিক দুর্নীতি দমন শাখার (ইকনমিক অফেন্স উইং) তরফে সারদা-সহ মোট চারটি সংস্থার বিরুদ্ধে সেবি’র কাছে অভিযোগ পাঠানো হয়েছিল। যার ভিত্তিতে বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় সারদা গোষ্ঠীর কাছে তাদের ব্যবসা সম্পর্কিত নানা তথ্য তলব করেছিল সেবি। অর্থলগ্নি সংস্থাটির কাছ থেকে কোনও বারই সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি বলে সেবি-র অভিযোগ। কী রকম?
সেবি’র এক কর্তা জানিয়েছেন, ২০১০-এর অক্টোবরে তাঁরা সারদা-কর্তৃপক্ষের কাছে সংস্থার ব্যবসায়িক কাজকর্ম সম্পর্কে জানতে চান। পাক্কা এক বছর বাদে, ২০১১-র অক্টোবরে তার ‘জবাব’ দেয় সারদা। সঙ্গে পাঠায় চব্বিশটি পেটিতে বোঝাই ‘নথি।’ কিন্তু কাগজপত্র দেখে সেবি’র কর্তারা আদৌ সন্তুষ্ট হননি। বরং তাঁরা সারদা-কে কড়া ভাষায় চিঠি লিখে জানিয়ে দেন, যে সব প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হচ্ছে, তার জবাব ওই নথিতে নেই।
এবং এর পরেই সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন সেবি’র হর্তা-কর্তাদের সঙ্গে দেখা করার সময় প্রার্থনা করেন বলে সেবি-সূত্রের দাবি। সূত্রটির খবর: ২০১২-র নভেম্বরে দিল্লির সেবি-অফিসে যান সুদীপ্ত। তবে মুখোমুখি বসেও তিনি সেবি-র অফিসারদের সন্তুষ্ট করতে পারেননি। বৈঠকে সেবি-কর্তারা যে সব তথ্য চেয়েছিলেন, সুদীপ্ত অধিকাংশের উত্তর দিতে পারেননি। “সুদীপ্ত তখন যুক্তি দেখিয়েছিলেন, ওঁদের কম্পিউটারের যে সার্ভারে ওই সব তথ্য মজুত, সেটি আমেরিকায়। তাই তথ্যগুলো এখনই জানানো সম্ভব হচ্ছে না।” বলেন এক সেবি-কর্তা।
সারদা-কর্ণধারের এ হেন যুক্তিতে চিঁড়ে ভেজেনি। সেবি-সূত্রের দাবি: ২০১২-র ডিসেম্বরে সারদা-কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, তাদের বিরুদ্ধে সেবি এ বার আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে চলেছে। সেই পথে এগিয়ে শেষ পর্যন্ত সারদা’কে শো-কজ করা হয়। কী অভিযোগে?
সেবি-র বক্তব্য: সারদা গোষ্ঠী রেজিস্ট্রেশন ছাড়া অর্থলগ্নির কারবার চালাচ্ছিল, সেবি-আইনের ১১(এএ) ধারা মোতাবেক যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির তরফে সারদা’কে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রশাসনিক অনুমতি বিনা সাধারণ মানুষের থেকে এ ভাবে টাকা তোলার (কালেক্টিভ ডিপোজিট) কোনও অধিকার তাদের নেই। তা সত্ত্বেও সারদা গোষ্ঠী কেন ওই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, সুদীপ্তদের তার কারণ দর্শাতে বলেছিল সেবি। কিন্তু সারদা গোষ্ঠীর তরফে এর কোনও উত্তর আসেনি বলে তাদের অভিযোগ।
শো-কজের জবাব না-পেয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু হয়। সেবি-সূত্রের দাবি, তাদের তরফে গত ২৩ এপ্রিল সারদা গোষ্ঠীর সরকারি ঠিকানায় একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। তার মূল বক্তব্য: সারদা গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক নথিতে স্পষ্ট যে, তারা স্বচ্ছ ভাবে ও আইন মেনে ব্যবসা করছে না। তাই আমানতকারীদের টাকা দ্রুত ফেরাতে হবে। রাজ্য সরকারকেও চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছিল। আর তারই সঙ্গে রাজ্যের প্রতি সেবি’র পরামর্শ ছিল, সারদা গোষ্ঠীর নামে প্রশাসনের তরফে এফআইআর দায়ের করা হোক।
যা এখনও মানা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন সেবি-কর্তারা। |