|
|
|
|
এ শহর নিয়ে স্ক্রিপ্ট লিখেছি |
হিন্দি গল্পের নাম ‘ওহ্ কলকাতা’। পরিচালক ওনির। শুনলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
এ বার কলকাতাতে এসে ‘ওহ্ ক্যালকাটা’তে তো গেলেন না? না। কলকাতাতে এলে তো বাড়িতেই বাঙালি খাবার খাই। মুম্বইতে আমি যখনই কলকাতাকে মিস করি, তখনই ‘ওহ্ ক্যালকাটা’তে চলে যাই। লুচি, কষা মাংস, মাছের চপ আর পায়েস আমার দারুণ পছন্দের।
সেটা মাথায় রেখেই নতুন স্ক্রিপ্টটার নাম রেজিস্টার করলেন নাকি? না না। আমার একটা কলকাতার পটভূমিতে হিন্দি ছবির স্ক্রিপ্ট মাথায় এসেছে। সেটাই রেজিস্টার করেছি। ‘ক্যালকাটা’ না দিয়ে কলকাতা রেখেছি। স্ক্রিপ্টটা রেজিস্টার করেছি ‘ওহ্ কলকাতা’ নামে। ওটা একটা হিন্দি ছবির স্ক্রিপ্ট। ইটস অ্যাবাউট ফুড, সেক্স অ্যান্ড রেন। খাবার, যৌনতা আর বৃষ্টি নিয়ে লেখা স্ক্রিপ্ট। অনেকগুলো গল্প একসঙ্গে মিলিয়ে স্ক্রিপ্টটা লেখা। ‘বম্বে টকিজ’য়ের মতো আলাদা আলাদা গল্প নয়। রসিকতা আছে। ‘টাঙ অ্যান চিক’ হিউমার। ব্ল্যাক কমেডি বলব না ঠিক। যাদের ভাল লাগে, আমরা কিন্তু তাদেরই পিছনে লাগতে ভালবাসি।
ছবিটা কলকাতার জীবন নিয়ে। এখানে বাঙালিরা আছে। অবাঙালিরাও আছে। আর কলকাতা থাকলে খাবার তো থাকবেই। তা সে ট্যাংরার চাউমিন হোক, কী পার্ক স্ট্রিটের রোল। নিদেন পক্ষে বেগুনি আর তেলেভাজা তো থাকবেই। সেটাই রেখেছি ছবিতে।
আর যৌনতা? কলকাতা খানিকটা হলেও, ইজ অ্যাবাউট রিপ্রেসড সেক্সুয়ালিটি। সেটাই দেখানোর চেষ্টা। অনেকের সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই। বা যেটা মনের ইচ্ছে, সেটা লোকের সামনে বলতে কোথায় যেন একটা বাধে। এই হিপোক্রিসিটাই ধরতে চাই ছবিতে। তবে সিরিয়াস ক্রিটিসিজম করে দেখানো নয়। সবটাই ভালবেসে। আফটার অল হিপোক্রিসি তো খালি কলকাতার নয়। এটা গোটা ভারতের সমস্যা।
বিশেষ কিছু বলতে চাইছেন কি? এই সিনেমার জগৎটাই দেখুন না। আমি যখন একটা বিষয়কে সিরিয়াসলি ডিল করছি, অমনি সেন্সর বোর্ড কেমন রে রে করে ছুটে আসছে। ‘আই অ্যাম’ ছবিটিতে যা দেখানো হয়েছে তাতে এমন কী আছে যার জন্য তার A সার্টিফিকেট থাকা দরকার? ‘গজনী’তে তো কত ভায়োলেন্স রয়েছে। কই, সেটা তো সবাই, এমনকী বাচ্চারাও বসে দেখল। আমার ছবিতে তো অত ভিস্যুয়াল ভায়োলেন্স ছিল না। ‘ফেভিকল সে’-র গানের কথায় যৌনতা নিয়ে যা লেখা আছে, তার পরেও তো ওটা নিয়ে কারও কোনও আপত্তি হয়নি। কিন্তু আমার ছবিতে অ্যাডাল্ট রেটিং! এমনকী ছবিটি টেলিভিশনে দেখানোর জন্য দরকার ছিল U/A রেটিং। আমাকে বলা হল যে সেটা দেওয়া হবে যদি আমি ‘স্পার্ম’ শব্দটা ব্যবহারের সময় বিপ লাগিয়ে দিই। এটা কী অদ্ভুত লজিক বলুন তো!
আর ‘ভিকি ডোনর’ ছবিটির সময় দেখলাম সেই স্পার্ম নিয়ে কত কথা! ছবিটি নিয়ে আমার কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আশ্চর্য হলাম যে ওই ছবিটি হলে দেখানোর সময় U/A রেটিং দেওয়া হয়েছিল। আরও আছে... |
|
মানে? এই যে ‘বম্বে টকিজ’ ছবিটি। ওখানে তো কর্ণ জোহরের ছবিটিতে দু’টো পুরুষ চরিত্রকে চুমু খেতে দেখানো হয়েছে। তার পরেও ছবি হলে দেখানোর জন্য CFBC/UA রেটিং দিয়েছে। ‘আই অ্যাম’-এও এ রকম দৃশ্য ছিল। তার জন্য A রেটিং। আবার বলা হয়েছিল যে টেলিভিশনে ছবিটি দেখানোর জন্য যদি U/A রেটিং চাই, তা হলে যেন আমি ওই দৃশ্য তুলে দিই। শুধু তাই নয়, আমি এটাও দেখাতে পারব না যে দু’জন পুরুষ মানুষ দু’জনের দিকে রোম্যান্টিক্যালি তাকিয়ে আছেন! আমি সত্যি সারপ্রাইজড্। ‘আই অ্যাম’ মুক্তি পেয়েছিল ২০১১তে। ‘বম্বে টকিজ’ ২০১৩তে। দু’বছরে কি সেন্সর এতটাই প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গিয়েছে? না কি এ সবই হয়েছে কারণ ছবিটি একটি বড় স্টুডিয়ো বানিয়েছে। আর নির্মাতারা হলেন চার জন হেভিওয়েট পরিচালক।
এত কিছু লেখালিখি হচ্ছে। সিনেমার জগৎ নাকি অনেক বেশি খোলামেলা সমকামিতা বিষয়ক ছবি বানানো নিয়ে, কিন্তু এই তো সে দিন শুনলাম ভারতের গে রাজপুত্র, প্রিন্স মানবেন্দ্র সিংহের ঘটনা। উনি একটা গুজরাতি ফিল্মকে সমর্থন করেছিলেন। ওটি গে-ইস্যু নিয়ে। ছবিটি গুজরাতে ট্যাক্স-ফ্রি করার আবেদন করা হয়েছিল।
সেই আবেদনের পর নাকি বলা হয়েছিল যে ছবি থেকে ‘গে’, ‘হোমোসেক্সুয়াল’, ‘হিজড়া’ শব্দগুলো বিপ করে দিতে হবে!
একটু অন্য প্রসঙ্গে আসছি। আপনি কি ‘লাইফ...ইন আ মেট্রো’র সিক্যুয়েলটা পরিচালনা করছেন? অনুরাগ বসুর সঙ্গে আমার এ বিষয়ে প্রথম কথা হয় গোয়াতে। অনুরাগ আর ওর স্ত্রী আমাকে জানায় যে ওরা ছবি প্রোডাকশনে নামছে। আমাকে ‘লাইফ... ইন আ মেট্রো’র সিক্যুয়েলটা পরিচালনা করতে বলে ওরা। আমি রাজি হয়ে যাই। এর মাঝে কিছু দিন কথা হয়নি। মুম্বইয়ে ফিরে গিয়ে আবার অনুরাগের সঙ্গে মিটিংয়ে বসার কথা। কিন্তু আপাতত আমি কলকাতাতে। আমার মা অসুস্থ। আইসিইউতে আছেন। মা বাড়িতে ফিরলে আমি মুম্বই ফিরে গিয়ে অনুরাগের সঙ্গে কথা বলব।
প্রসেনজিতের সঙ্গে ছবির কী হল? কান থেকে প্রসেনজিৎ ফিরলেই সই হবে। ছবিটির জন্য আমি অক্টোবর মাসে জুহি চাওলার ডেট বুক করেছি। শ্যুটিং করব সিকিম বা কালিম্পংয়ে।
কেন? কলকাতাতে শ্যুট করবেন না? না। ‘ওহ্ কলকাতা’ পটভূমি হল কলকাতা। আর এই ছবিটার অনেকটাই হল চরিত্রদের ‘ইনার ল্যান্ডস্কেপ’ নিয়ে। আমার পাহাড় খুব পছন্দ। বড় হয়েছি ভুটানে। তাই পাহাড়েই শ্যুট করতে চাই। ছবিটি হল এক বয়স্ক দম্পতির। ভদ্রলোক বাঙালি। মহিলা পঞ্জাবি। ছেলেমেয়ে বড় হয়ে যাওয়ার পরে ওঁরা ঠিক করেন যে, ডিভোর্স করবেন। ছবিতে এঁদের ডিভোর্স হওয়ার আগের ছ’মাস ধরতে চেয়েছি। তখন তাঁরা বুঝতে পারেন নিজেদের সম্পর্কটা কোথায় দাঁড়িয়ে।
এ ছাড়াও তো ‘হ্যামলেট’ রয়েছে। হ্যাঁ। ওটা তো অনেক দিন থেকেই করার কথা।
আচ্ছা, এত ছবির নাম আপনার সঙ্গে জড়িয়ে। বন্ধুরা নাকি ইয়ার্কি করে বলছেন আপনি ‘কিং অব অ্যানাউন্সমেন্ট’! দেখুন, আমাদের দেশে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টরদের অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে হয়। আমার প্রথম স্ক্রিপ্ট ছিল ‘শাব্দ’। আজও ইচ্ছে আছে ওটা বানানোর। ‘চশমে বদ্দুর’ বানানোর কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। ‘সরি ভাই’ বানিয়েছিলাম ২০১০য়ে। তিন বছর ধরে তো আর আমি একটা ফিল্মেই আটকে থাকব না। তাই বিভিন্ন ধরনের ছবির কথা ভাবছি। |
|
|
|
|
|