তারাবাজি
হোয়াটসঅ্যাপ শ্রীসন্ত
ত পাঁচ দিন ধরেই লোকের মুখে মুখে শ্রীসন্ত আর হোয়াটসঅ্যাপ। খবরের শিরোনামেও এই দু’টো নাম।
হবে না-ই বা কেন? আইপিএল-এ স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে শ্রীসন্ত, অজিত চাণ্ডিলা আর অঙ্কিত চহ্বাণের গ্রেফতার হওয়ার পিছনে অনেকটাই যে হোয়াটসঅ্যাপের হাত।
বেশ কয়েক দিন ধরে ৭০টা ফোনের ওপর নজরদারি চালাচ্ছিল দিল্লি পুলিশ। সেই ফোনগুলো থেকে পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ এবং বিবিএম মেসেজগুলোই এখন স্পট ফিক্সিং কাণ্ডের অন্যতম সূত্র।
শ্রীসন্তকে প্রায় সবাই চেনে। কিন্তু এই হোয়াটসঅ্যাপকে চেনে ক’জন?
হোয়াটসঅ্যাপ হল এক ‘ক্রস প্ল্যাটফর্ম মেসেজিং’ অ্যাপস। মানে, এমন এক অ্যাপস যেটা আইফোন-ব্ল্যাকবেরি-অ্যান্ড্রয়েড-উইনডোজ, সব ফোনেই ইন্সটল করা যায়। আর তার পর বিনা পয়সায় দেদার মেসেজ পাঠানো যায় হোয়াটসঅ্যাপ ইন্সটল করা অন্য ফোনে।
এতক্ষণ পড়ে নিশ্চয়ই ভাবছেন, এ তো এসএমএস-এও হয়। হ্যাঁ, হোয়াটসঅ্যাপ অনেকটা এসএমএস-এরই মতো, তফাত হল এতে মেসেজ পাঠাতে কোনও বাড়তি খরচ করতে হয় না। টেক্সট মেসেজের মতো মাল্টিমিডিয়া মেসেজও পাঠানো যাবে নিখরচায়। দরকার শুধু মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ।

আমার তো টাকা লাগল না
বিনা পয়সায় মেসেজ পাঠানোটা যে জেন ওয়াইকে হোয়াটসঅ্যাপ-এর দিকে ঠেলে দিয়েছে এ কথা মানছেন অনেকেই। “আলাদা করে আর কেন এসএমএস-এর জন্য খরচ করব? ফেসবুক-ট্যুইটারের জন্য তো মোবাইলে ডেটা প্ল্যান নিতেই হয়। মেসেজের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ইন্সটল করে নিলেই হল।
ব্যস, মেসেজও ফ্রিতে পাঠানো যায়। বন্ধুরা সবাই তো হোয়াটসঅ্যাপে আছে,” জানালেন আশুতোষ কলেজের দেবারতি দেব।
মোবাইল বিশেষজ্ঞরাও কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হিসেবে এই ব্যাপারটাকেই দেখছেন। Asicion-এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে ১৮-২৫ বছর বয়সিরা সপ্তাহে গড়ে ১৩৩টা টেক্সট মেসেজ পাঠায়। কোনও টেক্সট মেসেজ প্ল্যান নিলেও মাসে ১০০ টাকা খরচ হয়। আর স্বাভাবিক ভাবে সে টাকা তাদের পকেটমানি থেকেই দেয়। কিন্তু ডেটা প্ল্যানের সঙ্গেই যদি এসএমএসের খরচ চলে আসে, তাহলে তো কোনও কথাই থাকে না।
এই সুযোগটাই নিয়েছে মোবাইল মেসেজিং অ্যাপস নির্মাতারা।
অ্যাপসের সমাজতন্ত্র
“আমার হোয়াটসঅ্যাপ ভাল লাগে, কারণ এটা যে কোনও ফোনেই ইন্সটল করা যায়। সেটা আইফোন হোক, কী ব্ল্যাকবেরি বা অ্যান্ড্রয়েড। বিবিএম বা আইমেসেজে তো সেই সুবিধা নেই,” বললেন প্রেসিডেন্সির মনীষা ভট্টাচার্য। সদ্য ব্ল্যাকবেরিতে হোয়াটসঅ্যাপ ইন্সটল করেছেন। জানালেন, “সবার তো আর বিবিএম নেই, কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ সবার আছে। তাই ওটা ইন্সটল করতেই হল।”
হোয়াটসঅ্যাপও কিন্তু ওয়েবসাইটে এই ‘ক্রস প্ল্যাটফর্ম’ ব্যাপারটাকে সগর্বে জানাচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপেও বানিয়ে নেওয়া যায় গ্রুপ। আর গ্রুপের মধ্যে শুধু তো টেক্সট মেসেজ নয়, অডিয়ো আর ভিডিয়ো মেসেজও আদান-প্রদান করা যায়।

একা রামে রক্ষে নেই

হোয়াটসঅ্যাপ একা হলে নয় হত, এখন তো এই রকম ২৫টারও বেশি অ্যাপস আছে, যারা বিনা পয়সায় টেক্সট মেসেজ আদান-প্রদান করতে দেয়। দরকার মোবাইলে শুধু ইন্টারনেট সংযোগ। এই সব মোবাইল মেসেজিং অ্যাপসের বেশির ভাগই আবার বিনা খরচেই ইন্সটল করা যায়। (আইফোনে অবশ্য হোয়াটসঅ্যাপ ইন্সটল করতে ৫০ টাকা লাগবে, বাকি সব অপারেটিং সিস্টেমে প্রথম বছর বিনা পয়সাতেই ইন্সটল করা যাবে, দ্বিতীয় বছর থেকে ৫০-৫৫ টাকা দিতে হবে)।
সব মিলিয়ে তাই এত জনপ্রিয় হোয়াটসঅ্যাপ। সন্দেহ নেই কেন মাসে ২০ কোটিরও বেশি লোক হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন। ফেসবুক-ট্যুইটারের থেকে যে সংখ্যাটা প্রায় দশ গুণ। আর সমস্ত মোবাইল মেসেজিং অ্যাপস মিলিয়ে মোট সদস্য সংখ্যা ২৫০ কোটি।

চাচ্ছি তবু পাচ্ছি কই
সত্যিই কি তবে হোয়াটসআপ-ই টেক্সট মেসেজিংয়ের ভবিষ্যৎ? কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ-এর জন্য প্রথমে তো একটা স্মার্টফোন চাই। কিন্তু ভারতে মোট মোবাইলের মাত্র ১০ শতাংশই তো খালি স্মার্টফোন (আমেরিকা বা ব্রিটেনে যে সংখ্যাটা ৮০ শতাংশের কাছাকাছি)। সেখানে কি এসএমএস-কে এত তাড়াতাড়ি মিউজিয়ামে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে?
“আমারও তো সেটাই প্রশ্ন, স্মার্টফোন ছাড়া তো আর অ্যাপস ইন্সটল করা যাবে না। ক’জনের কাছে স্মার্টফোন আছে?” বললেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অরুণ রায়।
অরুণের এই প্রশ্নকে অবশ্য অনেকেই গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। চার-পাঁচ হাজার টাকাতেই যেখানে স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে স্মার্টফোন মালিকের সংখ্যাটা আর কোনও সমস্যা হবে না। আর মোবাইল পরিষেবা সংস্থার ব্যুফের মতো ‘আনলিমিটেড ডেটা প্ল্যান’য়ে এসএমএসের মৃত্যুঘণ্টাই শুনছে টেক স্যাভি জেন ওয়াই।
একুশ বছরে নতুন অনেক কিছুই আমদানি করেছে এসএমএস।
নতুন কবিতা, নতুন গল্প, নতুন প্রেম... এমনকী নতুন ভাষা, এসএমএস লিঙ্গো।
কিন্তু বছর চারেকের হোয়াটসঅ্যাপ-এর ঠেলায় নিজেই এখন অস্তিত্বের সংকটে এসএমএস।
তাই বলে একুশ বছরেই ‘মিডল এজ ক্রাইসিস’। গত ডিসেম্বরেই তো এসএমএস-এর কুড়িতম জন্মদিনে আবিষ্কর্তা নিল প্যাপওর্থ সংবাদ মাধ্যমকে টেক্সট করেছিলেন, ‘IMHO, SMS is still the GR8ST :-)’।
এই ডিসেম্বরে কি তবে মতটা পাল্টাতে হবে প্যাপওর্থকে?


ইন্সটলের পর
হোয়াটসঅ্যাপ-এ চ্যাট হিস্ট্রি স্বাভাবিক ভাবে কোনও সার্ভারে থাকে না। মানে ফোন থেকে ডিলিট হয়ে
গেলে সেটা আর ফেরত পাবেন না। তাই প্রথমেই অ্যাপস সেটিংস থেকে চ্যাট হিস্ট্রি নিজেকে
মেল করে রাখুন বা অন্য কোনও ক্লাউড নেটওয়ার্কে স্টোর করে নিন


হোয়াটসঅ্যাপ-এ চ্যাটের মতো কথা বলা যায়, স্টেটাসে ছবি দেওয়া যায়— এটা তো আকর্ষণ করেই। আর এতে তো শুধু টেক্সট মেসেজ নয়, ছবি, ভিডিয়োও পাঠানো যায়... এটাই বড় ফান্ডা

বিবিএম তো আর সবার ফোনে থাকে না। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপের সুবিধে হল যে কোনও স্মার্টফোনেই এই অ্যাপসটা ব্যবহার করা যায়। এর জন্যই আমি হোয়াটসঅ্যাপ পছন্দ করি


আমি তো হোয়াটসঅ্যাপ আসার পর আর এসএমএস করি না। বিনা পয়সায় যেখানে মিটে যাচ্ছে,
সেখানে কেন খামখা টাকা খরচ করবে? পাঁচ হাজার টাকার ফোনেও তো হোয়াটসঅ্যাপ থাকে। কাজের ক্ষেত্রেও
খুব সুবিধা। ইন্টারভিউয়ের প্রশ্ন হোয়াটসঅ্যাপে আসে, আমি ফিল ইন দ্য ব্ল্যাঙ্কসের মতো উত্তর দিই



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.