মাদ্রাসার মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষায় রাজ্যে নজরকাড়া ফল করল দক্ষিণ দিনাজপুরের বেলপুকুর হাই মাদ্রাসার ছাত্র মাসুদ রেজা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৩৩। এই স্কুলের আরও দু’জন ছাত্র উল্লেখযোগ্য ফল করেছে। এরা হল আজিজার রহমান (৭২৩) এবং সঞ্জয় ভুঁইয়া (৭১৭)।
জেলার বংশীহারী ব্লকের অধীন বেলপুকুর হাই মাদ্রাসার ওই তিনজনই খেত মজুর ও ছোট চাষি পরিবার থেকে উঠে এসেছে। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী আঞ্জুমান খাতুন ৬২৮ নম্বর পেয়ে স্কুলে ছাত্রীদের মধ্যে প্রথম হয়েছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলি বলেন, “এ বারে মোট ১৯২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৭৬ জন পাশ করেছে। তার মধ্যে ছাত্রীদের পাশের হার প্রায় ৭৫ শতাংশ।” রাজ্যের মাদ্রাসা বোর্ডের সচিব নুরুজ্জামান বলেন, “সার্বিক ফল ভাল। ৭০ শতাংশের উপর পাশের হার। জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যান জানানো হবে।” |
অভাবী পরিবারে থেকেও ওই তিন পড়ুয়া যে ভাবে পরিশ্রম করে সাফল্য পেয়েছে তা এখন এলাকায় আলোচনার বিষয়। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রশাসন থেকে জনপ্রতিনিধিরাও ওই ছাত্রদের সম্বর্ধনা দেওয়ার কথা ভাবছেন। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের আইন পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্র বলেন, “একাগ্রতা ও অধ্যবসায় দিয়ে ওরা প্রতিকূলতা জয় করে জেলার মুখ উজ্জ্বল করেছে।” খুশি দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “উচ্চশিক্ষার জন্য প্রশাসন ওদের পাশে থেকে সবরকম সাহায্য করবে।”
পাড়ার ছেলে মাসুদ রেজার ভাল ফলের খবরে খুশির জোয়ারে ভাসছেন কুশমন্ডির একডালা এলাকার বাসিন্দারা। পেশায় ছোট চাষি আফসার আলি ছোট ছেলে মাসুদকে ঠিকমতো গৃহশিক্ষক দিতে পারেননি। তিনি বলেন, “অঙ্ক ও ইংরেজির দু’জন গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা করাতে পেরেছিলাম।” মাসুদের কথায়, “বাকি বিষয় স্কুলের শিক্ষকেরা দেখিয়ে দিতেন। দিনে ৮ ঘন্টা পড়তাম।” ইঞ্জিনীয়ারিং নিয়ে পড়ার ইচ্ছা মাসুদের। স্কুলের কাছে বেলপুকুর গ্রামে বাড়ি আজিজার রহমান ও সঞ্জয়ের। দুজনের বাবাই ছোট চাষি। গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা করাতে পারেননি। স্কুলের শিক্ষকেরা দুই ছাত্রকে বাড়তি পড়িয়েছেন। স্কুলের সহ শিক্ষক জয়নাল আবেদিন সহ শিক্ষকদের সহায়তার কথা অভিভাবকদের। সঞ্জয়ের বাবা বুধুয়া ভুঁইমালির কথায়, “অন্যের জমিতে মজুরি খাটি। গৃহশিক্ষক ঠিক মত দিতে পারিনি। স্কুলের শিক্ষকেরা খুব সাহায্য করেছেন।” |