এক জন প্রতি মাসে কলেজের পঠনপাঠন চালানোর কাজে নিজের বেতনের টাকা দিচ্ছেন। অন্য জন সরকারি সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগী হয়েছেন। প্রথম জন দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের আরএসপি সাংসদ প্রশান্ত মজুমদার। দ্বিতীয় জন তৃণমূলের দক্ষিণ দিনাজপুরের সভাপতি বিপ্লব মিত্র। রাজনৈতিক ভাবে যুযুধান হলেও কলেজ গড়ার লক্ষ্যে দু’জনে যেন একই মঞ্চে আসীন। তাই জেলার তফশিলি ও আদিবাসী অধ্যুষিত তপন ব্লকে একটি কলেজের বাস্তব রূপ পেতে চলেছে। ওই যৌথ প্রচেষ্টায় ‘নাথানিয়েল মুর্মু মেমোরিয়াল’ নামাঙ্কিত ওই কলেজের সরকারি অনুমোদন মিলেছে। তপন দিঘির পাশে ১০ বিঘা জমিতে কলেজের স্থায়ী ভবন তৈরির কাজও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। |
বছর দু’য়েক ধরে কলেজের অস্থায়ী পঠনপাঠনের কাজ চলেছে তপন হাই স্কুলে। প্রথম বছর কলা বিভাগে ১২৪ জন ছাত্র ছাত্রী ভর্তি হয়েছিলেন। এ বছর প্রথম বর্ষে ভর্তি পড়ুয়ার সংখ্যা ১৪০ জন। কলেজের অতিথি অধ্যক্ষ সহ মোট ছ’জন অতিথি শিক্ষকের প্রতিমাসে বেতন ও যাতায়াত খরচ প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হচ্চে বলে জানা গিয়েছে। সাংসদ প্রশান্তবাবু নিজের বেতনের টাকা থেকে এই খরচ যোগাচ্ছেন। কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিধায়ক বিপ্লব মিত্র বলেন, “উন্নয়নের ব্যাপারে দলাদলি চাই না। যিনি কাজ করতে চান তাকে আমরা স্বাগত জানাই। প্রশান্তবাবুরা বাম আমলেই কলেজ গড়তে উদ্যোগ শুরু করেন। কিন্তু অনুমোদন পাননি। রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ওই কলেজের অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। এতে এলাকার ছাত্রছাত্রীদেরই উপকার হয়েছে” বিপ্লববাবুর বক্তব্য, “প্রশান্তবাবু নিজের বেতনের টাকা থেকে কলেজের খরচ চালাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন পেতে আমরাও চেষ্টা করেছি। কলেজ পরিচালন সমিতির সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে প্রশান্তবাবুকে বেচে নেওয়া হয়েছে।”
পরিচালন সমিতিতে তৃণমূলের দলের বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদার পাশাপাশি আরএসপির পঞ্চায়েত নেতৃত্বও রয়েছেন। বিপ্লববাবু বলেন, “আমরা তপনে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষিবাজার, আইটিআই কেন্দ্র গড়ার উদ্যোগ নিয়েছি” সাংসদ প্রশান্তবাবুও প্রতিপদে কলেজ উন্নয়নের বিষয় নিয়ে তৃণমূল বিধায়ক বিপ্লববাবুর সঙ্গে পরামর্শ করছেন বলে জানিয়েছেন। প্রশান্তবাবু বলেন, “বিপ্লব সবরকম সহায়তা করছেন। কলেজ উন্নতির বিষয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের কথা হচ্ছে। আমরা দু’জন মিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাছে কলেজের নথিপত্র জমা দিয়েছিলাম। এখন পাকাপাকিভাবে কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষ ও শিক্ষক নিয়োগ করে কলেজের সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব নিলে আমাদের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ সার্থক হবে।”
রাজনীতির ময়দানে পরস্পরের বিরুদ্ধে দু’জনে মুখোমুখি লড়াই করেছেন। ২০০৯ সালে বালুরঘাট লোকসভা আসনে অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন আরএসপির প্রশান্তবাব।ু তার বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে বিজিত প্রার্থী তৃণমূলের বিপ্লববাবু আদালতে মামলাও করেছিলেন। সেইসব এখন দু’জনের কাছেই অতীত।
তপনের আরএসপি সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত নাথানিয়েল মুর্মুর স্মৃতিতে ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে প্রশান্তবাবুরা কলেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। অছি পরিষদ গঠন করে সরকারি রীতি মেনে ২০ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কে জমাও করেন তাঁরা। পাশাপাশি প্রশাসন থেকে ১০ বিঘা খাস জমি কলেজ ভবন তৈরির জন্য বরাদ্দ করা হয়। পূর্তর্ দফতর ভবন তৈরির নকশা ও খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করে সাংসদ তার তহবিল থেকে দফায় দফায় প্রায় ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। প্রশান্তবাবু বলেন, “সাংসদ হওয়ার পরেই দিল্লির সেন্ট্রাল হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে কলেজের বিষয়ে কথা হয়। তিনি কলকাতায় তাঁর দফতরে নথিপত্র জমা দিতে বলেন।” এরপরই তৃণমূল বিধায়ক বিপ্লব মিত্রকে নিয়ে প্রশান্তবাবু মহাকরণে গিয়ে নথি জমা দিয়ে আসেন। ২০১১ সালের জুলাই মাসে কলেজের অনুমোদন মেলে। এখন উচ্চশিক্ষা দফতর থেকে অধ্যক্ষ এবং শিক্ষক পদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি কলেজ পড়ুয়াদের বই ও চেয়ার টেবিল তৈরি করতে সাংসদ ৩ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। |