দশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বসানো হয়েছিল হাড়ের অস্ত্রোপচারের জন্য আধুনিক যন্ত্র। কিন্তু হাসপাতালে কোনও অস্থি বিশেষজ্ঞই নেই গত চার মাস। হাড়ের কোনও সমস্যায় নিয়ে হাসপাতালে গেলেই ‘রেফার’ করে দেওয়া হচ্ছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
মাসখানেক আগে প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এসেছে ডায়ালিসিসের যন্ত্র। চিকিৎসক ও উপযুক্ত টেকনিসিয়ানের অভাবে পড়ে রয়েছে তা-ও। এমনই নানা অভিযোগ দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের পরিকাঠামো নিয়ে।
হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নে নিজের তহবিল থেকে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন দুর্গাপুর (পূর্ব) কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। পেশায় চিকিৎসক নিখিলবাবুই ডায়ালিসিস যন্ত্র কেনায় জোর দিয়েছিলেন। তাঁর তহবিলের ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়েই কেনা হয় যন্ত্রটি। কিন্তু হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সেটি চালানোর জন্য যে চিকিৎসক এবং টেকনিসিয়ান প্রয়োজন, তা এখনও মেলেনি। ফলে যন্ত্রও এখই অবস্থায় পড়ে। কিডনির রোগে ভোগা রোগীদের পরিষেবার জন্য যেতে হচ্ছে নার্সিংহোমে। বিপাকে পড়ছেন বিশেষ করে দুঃস্থরা। সিটি সেন্টারে একটি সেলাইয়ের দোকান চালান কৃপাসিন্ধু মাঝি। তিনি বলেন, “আমার রোজগার সামান্য। অথচ সিটি সেন্টারের একটি নার্সিংহোমে আমার স্ত্রীর নিয়মিত ডায়ালিসিস করাতে হয়। সরকারি হাসপাতাল থেকে এই পরিষেবা পেলে বড় উপকার হবে।” |
দুর্গাপুর শহরের উপর দিয়ে যাওয়া ২ নম্বর জাতীয় সড়ক রীতিমতো দুর্ঘটনাপ্রবণ। দুর্ঘটনায় হাড় ভেঙে হাসপাতালে আসা রোগীর সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্থি বিশেষজ্ঞ নেই প্রায় মাস চারেক। প্রথমে সেই চিকিৎসক না জানিয়ে ছুটিতে চলে যান। এক সপ্তাহ তিনি না আসায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। এর পরে সেই চিকিৎসক হাসপাতাল থেকে পুরোপুরি অব্যাহতি নিয়ে নেন। তাঁর জায়গায় আর নতুন কোনও অস্থি বিশেষজ্ঞ আর আসেনি। ফলে হাড়ের যে কোনও সমস্যায় রোগীকে ‘রেফার’ করে দেওয়া হচ্ছে বর্ধমান মেডিক্যালে। হাড়ের আধুনিক চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছিল ‘সি আর্ম টেবিল’ যন্ত্র। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যন্ত্রে হাড়ের ভিতরের যে কোনও ত্রুটি সহজে ধরা পড়ে। হাড়ের ভিতরে স্ক্রু, প্লেট বসানোর কাজও সহজে ও নিখুঁত ভাবে করা যায়। কিন্তু অস্থি বিশেষজ্ঞই না থাকায় পড়ে রয়েছে এই যন্ত্রও।
হাসপাতালের এমন অব্যবস্থায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষজন। হাসপাতাল লাগোয়া বাজারে পড়ে গিয়ে পায়ের হাড়ে চিড় ধরেছিল এলাকারই বাসিন্দা সুমন বসুর। তিনি বলেন, “সবাই মিলে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। কিন্তু সেখান থেকে রেফার করা হল বর্ধমানে। আমি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করালাম। কিন্তু যাঁর সেই ক্ষমতা নেই তাঁর কি হবে?” হাসপাতালের চিকিৎসক তথা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সহ-সভাপতি মিহির নন্দী বলেন, “বিশেষ করে দুঃস্থ মানুষজন বিপাকে পড়ছেন। তা ছাড়া উন্নত যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত পড়ে থাকাও ঠিক নয়।” হাসপাতাল সুপার দেবব্রত দাস জানান, ইতিমধ্যে বিষয়গুলি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিধায়ক নিখিলবাবু বলেন, “আশা করি দ্রুত পরিস্থিতি পাল্টাবে।”
তাঁর মতোই আশায় দিন গুণছেন ভুক্তভোগী রোগীরাও। |