ঝোপ থেকে উদ্ধার এক সদ্যোজাতকে ভর্তি করানো নিয়ে টানাপোড়েন হল বর্ধমান থানার পুলিশ ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। পুলিশের দাবি, শিশুটিকে প্রথমে ভর্তি নিতে চায়নি হাসপাতাল। অনেক আবেদন-নিবেদন করা হলে বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে তাকে ভর্তি নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষের আশ্বাস, ভর্তি নিতে দেরির কারণ খতিয়ে দেখা হবে।
শুক্রবার ভোরে বর্ধমানের কাঞ্চননগরে সাইফন মোড়ে সদ্যোজাত ওই কন্যা সন্তানকে উদ্ধার করা হয়। শহরের ধোকরাশহিদের বাসিন্দা শুভ্র রায় বলেন, “প্রতি দিন সকালে আমি সাইফনের কাছে বেড়াতে যাই। এ দিন সেখানে একটি ঝোপ থেকে কান্নার আওয়াজ পাই। কাছে গিয়ে দেখি, সাদা কাপড়ে জড়ানো অবস্থায় পড়ে রয়েছে একটি শিশু। পুলিশকে তৎক্ষণাৎ খবর দিই।” বর্ধমান থানার মোবাইল ভ্যান ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। শিশুটিকে নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান ওই ভ্যানে থাকা এএসআই সুব্রত ঘোষ। অভিযোগ, সমস্ত ঘটনার কথা শুনেও হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসক ওই সদ্যোজাতকে ভর্তি নিতে চাননি। ওই চিকিৎসক জানান, শিশুটি সুস্থই রয়েছে। তাই তাকে ভর্তি করানোর কোনও দরকার নেই। শিশুটির শরীর থেকে তখনও নাড়ি কাটা হয়নি, তা দেখানো সত্ত্বেও তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিতে চাননি বলে অভিযোগ পুলিশের। |
বর্ধমান থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, বিপাকে পড়ে পুলিশ অফিসারেরা হাসপাতালের সুপার অসিতবরণ সামন্তের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশের দাবি, সুপার ছুটিতে ছিলেন। তবে তিনি পুলিশকে জানান, শিশুটিকে ভর্তি নেওয়া উচিত। শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানায়, শিশুটিকে ভর্তি করাতে হলে লিখিত আবেদন করতে হবে। পুলিশ সেই আবেদন করার পরে ওই সদ্যোজাতকে ভর্তি করানো হয়। তত ক্ষণে পেরিয়ে গিয়েছে কয়েক ঘণ্টা, দাবি পুলিশের।
সুপার ছুটিতে থাকায় তাঁর নির্দেশ মিলছে না, এমন দাবি করে সম্প্রতি শ্বশুরবাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হওয়া এক বধূর জবানবন্দি না নিতে চাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে। দুই মানসিক প্রতিবন্ধী মহিলাকে ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবা না দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালে। সুপার অসিতবরণবাবুর বক্তব্য, “আমরা অভিযোগ পেলেই খতিয়ে দেখি। ওই বধূর ঘটনাটির পরেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এই ধরনের গুরুতর আহত কেউ জবানবন্দি দিতে চাইলে তা দ্রুত নিতে হবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকদের। তবে আদালতের নির্দেশ ছাড়া মানসিক প্রতিবন্ধীদের ভর্তি করা সম্ভব নয়।”
হাসপাতালের ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষ বলেন, “সদ্যোজাতকে ভর্তি করানো হয়েছে। কেন দেরি হয়েছে, তা খোঁজ নেব। তবে পুলিশকে বলা হয়েছে, শনিবারই শিশুটিকে কোনও সরকারি হোমে পাঠাতে। এই ধরনের শিশুদের হাসপাতালে দীর্ঘদিন রাখা সম্ভব নয়।” |