সংগঠন জোরদার নয়। মাথার উপরে নিজেদের সরকার বা প্রশাসন নেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের তাণ্ডব রুখতে এ বার আধুনিক প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করতে চাইছে সিপিএম। নির্বাচনের আগে ঘটনার প্রকৃত ছবি তুলে ধরতে দলীয় কর্মীদের কাছে সব সময় মোবাইল ক্যামেরা রাখার পরামর্শ দিচ্ছে সিপিএম।
সিপিএম নেতৃত্বের আশঙ্কা, পঞ্চায়েত নির্বাচনের বাতাবরণ তৈরি হতেই বহু জায়গায় যে ভাবে শাসক দলের চাপা সন্ত্রাস শুরু হয়ে গিয়েছে, এর পরে তা আরও বাড়বে। শাসক দলের চাপেই পুলিশ-প্রশাসন বিরোধী নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন ঘটনায় মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর চেষ্টা করবে। সেই জন্যই বাস্তবে কী ঘটছে, তার ছবি গোপন ক্যামেরায় তুলে নির্বাচন কমিশন ও আদালতে পেশ করতে চায় সিপিএম। যাতে প্রশাসন বা শাসক দল পরে ঘটনা অস্বীকার করতে না পারে। সেই ছবি প্রচার মাধ্যমের হাতে চলে গেলেও যে তাঁদেরই সুবিধা, দলের অন্দরে সেই বার্তাও দিচ্ছেন তাঁরা।
গোটা রাজ্যে সিপিএমের প্রায় ৩৫০টি জোনাল কমিটি রয়েছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পরেই দলীয় কর্মীদের মোবাইল ক্যামেরা রাখার জন্য ওই কমিটিগুলির মারফত নির্দেশ জারি হচ্ছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “শুধু মোবাইল ক্যামেরা নয়। পেন ক্যামেরা, চাবির রিং জাতীয় গোপন ক্যামেরাও দলীয় কর্মীদের কাছে থাকবে।” ক্যামেরা-অস্ত্র ব্যবহারের এই কৌশল প্রথম পরিকল্পনা করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম-ই। বর্ধিত জেলা কমিটির বৈঠকে শুক্রবার ওই বিষয়ে আলোচনাও হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র।
জেলার নেতা এবং রাজ্য কমিটির সদস্য আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার কথায়, “গার্ডেনরিচ-কাণ্ড থেকে একটা শিক্ষা পাওয়া গিয়েছে।” গত ১২ ফেব্রুয়ারি গার্ডেনরিচের হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে নির্বাচনের মনোনয়নের সময় তৃণমূলের বরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবালের (মুন্না) এক শাগরেদের ছোড়া গুলিতে তাপস চৌধুরী নামে এক পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়। সিপিএম নেতৃত্বের যুক্তি, টেলিভিশন ফুটেজে আসল ছবি ধরা পড়ে না গেলে তৃণমূল নেতৃত্ব কংগ্রেসের ঘাড়ে ঘটনার দায় চাপিয়ে পার পেয়ে যেতেন। পুলিশ খুনের ঘটনায় ইকবালের হাজতবাস সম্ভব হত না। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই শাসক দলের সম্ভাব্য তাণ্ডব ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে চায় সিপিএম। বিভিন্ন গোপন ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়ে দলীয় সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে বলে সিপিএম সূত্রের খবর।
বর্ধিত জেলা কমিটির বৈঠকে সূর্যবাবু পরামর্শ দেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সারদা কাণ্ড-সহ পঞ্চায়েতে তৃণমূলের নানা দুর্নীতির প্রচার করতে হবে। রেজ্জাক বৈঠকে বলেন, এই প্রথম তাঁরা একটা পঞ্চায়েত ভোট লড়তে যাচ্ছেন, যেখানে মাথার উপরে নিজেদের সরকার নেই। এ বারের ভোট তাঁদের কাছে তাই বড় চ্যালেঞ্জ।
|