|
|
|
|
মৃণাল ভুবন ২ |
চিরকালই তিনি তার্কিক। স্রোতবিরুদ্ধ। বিশ্বাস-অবিশ্বাসে কট্টরবাদী। তিনি মৃণাল সেন। ১১ ফেব্রুয়ারির ‘পত্রিকা’য়
জন্মদিন সাক্ষাত্কারে ছিলেন একই রকম বিস্ফোরক। তাঁর অকপট মন্তব্যে উত্তাল টলিউড। কান পাতলেন জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায় |
মৃণাল সেনের বিখ্যাত কলকাতা ট্রিলজি-র প্রথম ছবি, ‘ইন্টারভিউ’। রঞ্জিত মল্লিকের প্রথম অভিনয়। ১৯৭১ সাল। গল্প বলার চেনা ছকে বিপুল ভাঙচুর। হইহই কাণ্ড।
জাম্পকাট।
মৃণাল সেনের ৯১তম জন্মদিন উপলক্ষে পত্রিকার পাতায় ইন্টারভিউ। ২০১৩। আবার ভাঙচুর। হইহই কাণ্ড। ভাঙচুরটা এ বার টালিগঞ্জের শান্তিপ্রিয় ভাতঘুমে। চিরবিদ্রোহী মৃণাল যে বোমা ফাটালেন, তাতে বাংলা ছবির মহারথীরা কেউ বাদ নেই। সত্যজিত্-ঋত্বিক-উত্তম-সৌমিত্র, আর কী চাই? ব্যোমকেশ-ফেলুর মধ্যেও যুদ্ধ বাধল বলে!
এই বিস্ফোরণটাই দরকার ছিল, বলছেন অঞ্জন দত্ত। মৃণালের প্রিয় নায়ক। “গৌতমবাবুও (ভট্টাচার্য) মৃণালদাকে স্ট্যাচু বানিয়ে প্রশ্ন করেননি, মৃণালদাও ‘সেফ’ খেলার ধার দিয়ে যাননি। যেটা ভাল লেগেছে, বলেছেন। যেটা ভাল লাগেনি, সেটাও বলেছেন। প্রত্যেকের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলেছেন।”
অঞ্জনের মতে, এই ব্যাপারটাই চলে গিয়েছে এখন। “এখন সব ‘ইনিও ভাল, উনিও ভাল, সবাই ভাল থাকুন, সবাই এক রকম বলুন’য়ের যুগ।” এ ব্যাপারে সব্যসাচী চক্রবর্তীর যুক্তি অবশ্য আলাদা। “মৃণালদা এক জন ওয়ার্ল্ড ফিগার! ওঁর যে বয়স, যে উচ্চতা, যে অভিজ্ঞতা, সেই জায়গা থেকে উনি অনেক কথা বলতে পারেন। ওঁকে মানায়। আমরা বলতে গেলে কানমলা খাব!”
অঞ্জন বলে চলেন, যা মনে করেন, সেটা স্পষ্ট বলাই মৃণালদার স্বভাব, “ঋত্বিক মৃণালদার খুব কাছের বন্ধু কিন্তু তার জন্য ঋত্বিকের কিছু ছবির সমালোচনা করতে ওঁর আটকায়নি। মৃণালদা বরাবরই মনে করতেন, ঋত্বিক অতিনাটকীয়, সেল্ফ-ইন্ডালজেন্ট। সত্যজিত্বাবুকে ওঁর অনেক বেশি আধুনিক মনে হত। আবার সেই সত্যজিত্কেই মুখের ওপর বলতে পারতেন, স্তাবকেরা থাকলে যাব না।” অঞ্জনের মতে, মৃণাল যে এ কথা বলতে পারতেন, কারণ উনি নিজে ওই রকম, “ওঁর বাড়ি গিয়ে কখনও দেখা যাবে না, চারটে লোক গালে হাত দিয়ে বসে আছে।”
সত্যজিত্ সম্পর্কে মৃণালের এই উক্তি আবার একেবারেই মানতে পারছেন না বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।
“মৃণালদা যা বলেছেন, সেটা একান্তই ওঁর ব্যক্তিগত মতামত। আমার ব্যক্তিগত মত হল, মানিকদা স্তাবকতা গ্রহণ করতেন না। স্তাবকতা করার সুযোগই দিতেন না।” কী রকম? বুদ্ধদেব বলেন, “সমর সেন, কমলকুমার মজুমদারের মতো ব্যক্তিত্বকে দেখেছি একঘর লোকের সামনেই মানিকদার ছবি সম্পর্কে ভাল-মন্দ সব রকম উক্তি করতেন! অথচ মৃণালবাবু বলছেন, সত্যজিত্ কোনও প্রশ্ন-সমালোচনা গ্রহণ করতেন না!” বুদ্ধদেব উত্তেজিত। বলেন, “মৃণালবাবু নিজে কখনও সমালোচনা নিতে পারতেন? ওঁকে বলেছিলাম, আমার ‘জেনেসিস’ ভাল লাগেনি। আমি চলে যাওয়ার পরে পরিচিত পাঁচ-ছ’জনকে উনি আমার সম্পর্কে যথেষ্ট কড়া কড়া কথা বলেছিলেন।” এর পর রীতিমতো বোমা ফাটালেন তিনি। বললেন, “‘উত্তরা’ ভেনিসে শ্রেষ্ঠ পরিচালনার পুরস্কার পাওয়ার পরে মৃণালদা আমার এক আত্মীয়াকে ফোন করে বলেছিলেন, ওটা কোনও অ্যাওয়ার্ডই নয়। এটা সত্যজিত্বাবু কখনও কারও সঙ্গে করতেন না। হ্যাঁ, মণি (কল)-কুমার (সাহনি)দের ছবি সম্পর্কে উনি ভাল কথা বলেননি। সে তো উনি গোদার-কেও পছন্দ করতেন না। তার কারণ, সত্যজিত্ গল্প বলাতেই বিশ্বাস করতেন। গল্প ভাঙায় নয়।” |
|
এত কথার পরও মৃণাল সেনের ছবি নিয়ে কিন্তু অসম্ভব শ্রদ্ধাশীল বুদ্ধদেব আজও। নিঃসঙ্কোচে বলেন, “মৃণালদার বহু ছবি আমার প্রিয়। ‘বাইশে শ্রাবণ’ সেরা দশটা বাংলা ছবির মধ্যে থাকবে।” কিন্তু ব্যক্তি মৃণাল নিয়ে কোথায় যেন থমকে যান তিনি। বললেন, “মৃণালদার প্রতি শ্রদ্ধা নিয়েই বলছি, সত্যজিত্-ঋত্বিক দু’জনের প্রতিই ওঁর একটা অসূয়ার বোধ বরাবর ছিল। একটা ইনসিকিওরিটিতে ভুগতেন। গীতাদি (সেন) কিন্তু অসাধারণ মানুষ। উনি সব সময় সামলেছেন মৃণালদাকে। কত বার বলেছেন, এ রকম করে কথা বলছ কেন?” বুদ্ধদেব ফিরে তাকান ঋত্বিকের স্মৃতিতে। বললেন, “মজা কী জানেন, প্রশংসা বা নিন্দা যাঁকে সত্যিই স্পর্শ করত না, তিনি ঋত্বিক! সত্যিই যা মনে হত, তা-ই বলতেন! এন টি ওয়ানে ‘যুক্তি, তক্কো আর গপ্পো’-র প্রথম স্ক্রিনিংয়ের পরে কী উত্তেজিত! বললেন, ঢ্যাঙা এ রকম পারবে?”
এই ঋত্বিকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’র আইকনিক শেষ দৃশ্যের সমালোচনা করেছেন মৃণাল। বলেছেন, মেলোড্রামাটিক। ঋত্বিক নিজেও তা-ই বলতেন। বলেওছিলেন, “মেলোড্রামা ইজ মাই বার্থরাইট!” প্রশ্ন করাতে ‘মেঘে ঢাকা তারা’-র নায়িকা সুপ্রিয়া বললেন, “মেলোড্রামা ছাড়া জীবন হয় নাকি! মা যখন সন্তানকে জন্ম দেন, যন্ত্রণায় ছটফট করেন। চিত্কার করেন। সেটা তো মেলোড্রামা। কেউ যখন মারা যান, তাঁর আত্মীয়স্বজন পাড়াপড়শি মিলে যে কান্নাকাটি-চেঁচামেচির পরিবেশ তৈরি হয়, সেটাও তো তাই! মৃণালদা খুবই শ্রদ্ধেয় মানুষ। কিন্তু বাঁচার জন্য নীতার যে আকুতি সেটা যদি মেলোড্রামা বলে খাটো করতে হয়, আমার কিছু বলার নেই।”
মৃণালের ‘একদিন প্রতিদিন’-এ অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল শ্রীলা মজুমদারের। সেটাও চাকরি করতে বেরোনো মেয়েরই গল্প। মৃণালের সঙ্গে ঠিক একমত হতে পারছেন না তিনিও। বললেন, “আমার বারবার মনে হয়েছে, ‘মেঘে ঢাকা তারা’ যেখানে শেষ হয়, সেখান থেকেই যেন ‘একদিন প্রতিদিন’য়ের গল্প শুরু। ‘মেঘে ঢাকা তারা’র শেষ দৃশ্য আমার আলাদা করে অতিনাটকীয় লাগে না। ছবিটার যে ছন্দ প্রথম থেকেই তৈরি হয়ে গিয়েছে, যে ভাবে দৃশ্যগুলো পর পর এসেছে, তাতে শেষ দৃশ্যটা ও রকমই হওয়া উচিত ছিল।” কিন্তু মৃণালকে খুব কাছ থেকে দেখার সুবাদে শ্রীলা জানেন, “মৃণালদাই কিন্তু পারেন, নিজে যা মনে করেন সোজাসুজি বলতে। ওটাই উনি। ইন্টারভিউটা পড়লে বোঝা যায়, মৃণালদার মেজাজটা আসলে এখনও উনিশ বছরের যুবকের মতো।”
সেই মেজাজটাকেই শ্রদ্ধা করতে চান ঋতুপর্ণ ঘোষ। বললেন, “মৃণালদা আমাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতম। ওঁর জন্মদিনকে সেলিব্রেট করে যে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে, তাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি করলে ওঁকে অসম্মান করা হয়। আমি তার মধ্যে যাব না।” ওঁর কথার সাপেক্ষে কিছু বলতে চান না ঋতুপর্ণ। কিন্তু পৃথক ভাবে ওঁর মত চাইলে বলেন, “‘মেঘে ঢাকা তারা’য় নীতার ওই সংলাপটা শুধু অনিল চাটুজ্জের কথার প্রতিক্রিয়ায় বলা, তা আমার মনে হয় না।” এ প্রসঙ্গে মৃণাল সেন বলেছিলেন, “(ওই দৃশ্যে) অনিল হঠাত্ করে মোটা চামড়ার লোকের মতো বোনের ভরা সংসারের কথা বলতে শুরু করে দিল।...এটা যেন দাদা আমি বাঁচতে তাই বলানোর জন্যই বলা।” ঋতুপর্ণর কিন্তু আদপেই এমনটা মনে হয় না। “নীতা তো অনেক দিন আগে থেকেই জীবন-নির্বাসিত ছিল। অসুখটা ধরা পড়ার পর সেটা একটা এপিক মাত্রা পায়।
অনিল ওঁর কথাগুলো সুন্দর করেই বলেন। তার মধ্যে সব কিছুকে ক্ষমা করে দিয়ে একটা প্রশান্তির দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত আছে। ওই কথাগুলো যদি অনিল নীতার কাছে চেপে যেতেন, তাতেই বরং চরিত্রটা খাটো হয়ে যেত।” বুদ্ধদেবের মন্তব্য, “মেঘে ঢাকা তারা-র ওই দৃশ্যটা একটা মিথ। এমনই শক্তি ওটার! মৃণালদা আগেও অনেক বার ঋত্বিক প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বেশ একটু অবিচারই করেছেন।”
অবিচার শব্দটা ব্যবহার করেননি ঠিকই। কিন্তু উত্তমকুমার প্রসঙ্গে মৃণাল সেনের বক্তব্য পড়েও সুপ্রিয়া দেবীর গলায় যথেষ্ট ক্ষোভ। ’৮০-র জুলাইয়ে চলে গিয়েছেন বাংলা ফিল্মের ‘ম্যাটিনি আইডল’। ‘এভারগ্রিন মহানায়ক’। গড় দর্শক থেকে পোড় খাওয়া বহু ফিল্মি তাত্ত্বিক এই একটা নামে এসে উইকেট দিয়ে ফেলেন। |
তাঁর মতে |
• সত্যজিত্ রায় থাকতেন স্তাবক পরিবৃত হয়ে
• ঋত্বিক মেলোড্রামাট্রিক। বিশেষ করে ‘মেঘে ঢাকা তারা’র সেই বিখ্যাত দৃশ্যে ... ‘দাদা আমি বাঁচতে চাই, বাঁচতে চাই...
• অভিনেতা হিসেবে উত্তমকুমারের চেয়ে এগিয়ে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
• ‘ফেলুদা’ সুপারফিসিয়াল। চরিত্রটার মধ্যে কোথাও সমাজটাকে দেখতে পাওয়া যায় না। যেটা দেখা যায় ব্যোমকেশের মধ্যে |
|
সুপ্রিয়া যেন তাঁদেরই একজন হয়ে বললেন, “যে মানুষটা নেই, তার সম্পর্কে এই সব মন্তব্য কেন, আমি তো এটাই বুঝতে পারি না। এমনি এমনি উনি কি মহানায়ক হয়েছেন, দর্শক কি বোকা!” সৌমিত্র-উত্তম বিতর্কে আজও তিনি একই রকম স্পর্শকাতর। বললেন, “সৌমিত্র আমার খুব ভাল বন্ধু, ভাল অভিনেতাও। কিন্তু উত্তমের আশেপাশে কেউ নেই। উত্তমের মধ্যে যে ডেডিকেশন ছিল, তা আর কারও দেখিনি। আমার নিজেরও ছিল না।” এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথা বললেন তিনি, “এক বার মনে আছে, আমি চান করতে গিয়েছি। ঘরে উত্তম একা ছিল। চান করতে করতে শুনতে পাচ্ছি, তিন জন লোক কথা বলছে! আমি ভাবছি, কারা আবার এল? বেরিয়ে দেখি, উত্তম একা তিন জনের পার্ট বলে যাচ্ছে! এই হচ্ছে ডেডিকেশন। মানুষটাকে না চিনে, না জেনে কথা বলা কি ঠিক? আমি তো খুব কাছ থেকে চিনেছি ওঁকে! গৌরীদিও ততটা চেনেননি।” শ্রীলা অবশ্য উত্তম-সৌমিত্রর মধ্যে তুলনায় যেতেই চান না, “উত্তমকুমারের যত ছবি দেখেছি, কখনও মনে হয়নি ওই চরিত্রটা অন্য কেউ করলে ভাল হত। সৌমিত্রর যত ছবি দেখেছি, সেখানেও মনে হয়নি সৌমিত্রর বদলে অন্য কেউ থাকলে ভাল হত!”
আপনি কী বলবেন উত্তম-সৌমিত্র নিয়ে? ঋতুপর্ণর উত্তর, “উত্তমবাবুর অভিনয় দক্ষতা কম ছিল, এটা কোনও মতেই বলা চলে না। সৌমিত্র যে ধরনের বড় পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন, উত্তম কিন্তু তা পাননি। তার মধ্যে গোড়ার দিকেও চিরকুমার সভা-র উত্তমকুমার যে অভিনয়টা করেছেন, যে ভাবে ওথেলো-র দৃশ্য করেছেন, তার তুলনা নেই।” কিন্তু তাই বলে কি সৌমিত্রর মহত্ত্ব কোথাও কমে যায়? “কখনওই না। সত্যজিতের ছবিগুলো সরিয়ে রাখলেও না।”
বুদ্ধদেব কিন্তু এই জায়গাটায় মৃণালের পাশে। সৌমিত্রকে এগিয়ে রাখছেন তিনিও, “মৃণালদা উত্তম-সৌমিত্র সম্পর্কে যা বলেছেন, সেটা
আমিও মানি। মেধা ও অভিনয় ক্ষমতার যে মিশ্রণ সৌমিত্রর মধ্যে দেখা যায়, সেটা উত্তমের নেই। তবে হ্যাঁ, ‘নায়ক’য়ে ওঁকে নিলে মানাত না। ওটার জন্য উত্তমই ঠিক ছিলেন।” অঞ্জন-সব্যসাচীও এ ব্যাপারে অনেকটাই সহমত। অঞ্জনের কথায়, “লিপস্টিক মাখা উত্তমকুমারকে আমার কোনও দিনই তেমন ভাল লাগেনি। কিন্তু পরের দিকে ‘বাঘবন্দি খেলা’, ‘অগ্নীশ্বর’, ‘যদুবংশ’র মতো ছবিতে উনি যে অভিনয়টা করেছেন, সেটা অসাধারণ।” বিপরীতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে ওঁর মত, “উনি প্রথম থেকেই অন্য ধরনের। মৃণালদা সব সময়ই বলতেন, ওঁর সৌমিত্রকে ভাল লাগে। কারণ সৌমিত্রর মধ্যে উনি ওই আধুনিকতা আর বুদ্ধিদীপ্ততা খুঁজে পেতেন।” অঞ্জনের মনে হয়, পৃথিবীর সেরা রোম্যান্টিক অভিনেতাদের মধ্যে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এক জন। এই রোম্যান্স দিয়েই ফেলুদা হয়ে ওঠা যায়! সব্যসাচী আর এক ধাপ এগিয়ে গেলেন, “উত্তমকুমার স্টার। অসামান্য ক্যারিশমা। কিন্তু অভিনেতা যদি বলতে হয়, তা হলে সৌমিত্র অনেক এগিয়ে। ব্যোমকেশ আর ফেলুদা দিয়েই দেখুন না! ‘চিড়িয়াখানা’তে উত্তম লেস ব্যোমকেশ, মোর উত্তম। ‘সোনার কেল্লা’য় সৌমিত্র মোর ফেলু, মাচ লেস সৌমিত্র।”
ব্যোমকেশ-ফেলুর কথাও তো উঠেছিল মৃণালের ইন্টারভিউতে। সোজা বলেছিলেন, ফেলুদা তাঁকে টানে না। ফেলুদার মধ্যে কোথাও সমাজের ছবি নেই। “নেই-ই তো!” বললেন সব্যসাচী। “থাকার তো কথাও নয়। ফেলুদা তো ছোটদের জন্য লেখা! সত্যজিত্ তো সোশ্যাল পার্সস্পেকটিভ-য়ের ব্যাপারটা সচেতন ভাবেই এড়িয়ে গেছেন!” তাঁর কাছে ফেলুদা অনেকটা সুপারম্যানের মতো। কৈশোর কী যৌবনের প্রথম পর্বের স্মৃতি হাতড়ে সব্যসাচী বললেন, “অন্তত আমাদের তো তাই মনে হত। আমরা ফেলুদাকে আইডলাইজ করতাম। ফেলুদা রাজনীতি নিয়ে কথা বলে না। সেই দেখে ছাত্রজীবনে ঠিক করে নিয়েছিলাম, আমিও রাজনীতির আলোচনায় থাকব না।”
নিজের গোয়েন্দা গল্প নিয়ে ছবি করছেন বুদ্ধদেব। ফেলু-ব্যোমকেশের তুলনার মধ্যে যেতে চান না। “ব্যোমকেশের কিছু গুণ আছে, যা ব্যোমকেশেরই। আর ফেলুদা অনেক নায়কতুল্য, তার গুণাগুণ আলাদা।” ব্যোমকেশের শু্যটিং সামলাতে সামলাতে ঋতুপর্ণ বলছেন, “ফেলুদা তো ব্যোমকেশ হতে চায়নি কখনও! ব্যোমকেশ সংসারী মানুষ। ফেলু-তোপসে-লালমোহনও একটা অন্য ধরনের সংসার কিন্তু! ক্যুইয়ার স্টাডিজ হয়তো কখনও বিষয়টাকে অন্য ভাবে ভাববে!”
এক ইন্টারভিউ-এ এতগুলো বোমা! কথা ফুরোতে চায় না! “বলুন তো, এই ইন্টারভিউ পড়লে কারও মনে হবে মৃণালদার বয়স ৯০? সত্যজিতের এ রকম কোনও ইন্টারভিউ পড়েছি আমরা?” স্বগতোক্তির মতো করে বললেন অঞ্জন।
|
|
মৃণালবাবু নিজে কখনও সমালোচনা নিতে পারতেন? ওঁকে বলেছিলাম, আমার ‘জেনেসিস’ ভাল লাগেনি। আমি চলে যাওয়ার পরে পরিচিত পাঁচ-ছ’জনকে উনি আমার সম্পর্কে যথেষ্ট কড়া কড়া কথা বলেছিলেন।
বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত |
যে মানুষটা নেই, তার সম্পর্কে এই সব মন্তব্য কেন, আমি তো এটাই বুঝতে পারি না। ... সৌমিত্র আমার খুব ভাল বন্ধু, ভাল অভিনেতাও। কিন্তু উত্তমের আশেপাশে কেউ নেই।
সুপ্রিয়া দেবী |
ফেলুদা তো ব্যোমকেশ হতে চায়নি কখনও! ব্যোমকেশ সংসারী মানুষ। ফেলু-তোপসে-লালমোহনও একটা অন্য ধরনের সংসার কিন্তু!
ঋতুপর্ণ ঘোষ |
ওঁর যে বয়স, যে উচ্চতা, যে অভিজ্ঞতা, সেই জায়গা থেকে উনি অনেক কথা বলতে পারেন। ওঁকে মানায়। আমরা বলতে গেলে কানমলা খাব!
সব্যসাচী চক্রবর্তী |
লিপস্টিক মাখা উত্তমকুমারকে আমার কোনও দিনই তেমন ভাল লাগেনি। পরের দিকে উনি যে অভিনয়টা করেছেন, সেটা অসাধারণ।
অঞ্জন দত্ত |
মৃণালদা যা মনে করেন সোজাসুজি বলেন। ইন্টারভিউটা পড়লে বোঝা যায়, মৃণালদার মেজাজটা আসলে এখনও উনিশ বছরের যুবকের মতো।
শ্রীলা মজুমদার |
|
|
|
|
|
|
|
|