চলন্ত ট্রেনে ভিড়ের মধ্যে থেকে বেশ জোরেই কথা বলতে হচ্ছিল তাকে। “মাথায় ছিল রেজাল্টটা ভাল করতে হবে। প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। পরীক্ষাও ভাল হয়েছিল। তবে এতটা ভাল হবে ভাবিনি। এটা আমার কাছে বিরাট প্রাপ্তি। খুব আনন্দ হচ্ছে।’’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল থানারপাড়া হাজী মুসলিম হাই মাদ্রাসার ছাত্র রেজওয়ানুল হক মণ্ডল, বা রেজা একটু দম নিল বুঝি। এ বারের হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় ৭২৭ নম্বর পেয়েছে সে। বাংলা ৮২, ইংরেজি ৮০, অঙ্ক ৯৮, ভৌতবিজ্ঞান ৯৬, জীবনবিজ্ঞান ৯৭, ইতিহাস ৯৬, ভূগোল ৯৮ ও ইসলাম পরিচয়ে সে পেয়েছে ৮০।
রেজওয়ানুল হক। |
খবরটা শোনার পরেই বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন প্রতিবেশি, আত্মীয়স্বজন ও স্কুলের শিক্ষকরা। শুভেচ্ছা জানিয়ে একের পর এক ফোন এসেই যাচ্ছে। কিন্তু যাকে নিয়ে এত হইচই সে কোথায়? ছেলের স্কুলেরই পার্শ্বশিক্ষিকা মা রেহেনা বেগম। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেকে নিয়ে ওর বাবা কলকাতা থেকে ট্রেনে বাড়ি ফিরছে। স্কুলে এখনও রেজাল্ট এসে পৌঁছয়নি। ইন্টারনেটেই দেখে নিয়েছি রেজাল্টটা। খুব আনন্দ হচ্ছে। পরিশ্রমের ফলটা ও পেল।’’
স্কুল থেকে সামান্য দূরেই রেজওয়ানুলের বাড়ি। বাবা আব্দুল হক বারবাকপুর দারুল হাদিস হাই মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক। বোন কিসমা জুমানা থানারপাড়া হাজী মুসলিম হাই মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। দাদার মতোই সেও পড়াশোনায় ভাল। এ বারে ষষ্ঠ শ্রেণীতে প্রথম স্থান দখল করেছে সে। রেহেনা বেগম জানালেন,‘‘ পরীক্ষার কয়েক মাস আগে থেকে বাড়িতে এক জন ইংরেজীর শিক্ষক পড়াতে আসতেন। তাছাড়া সেইভাবে নিয়মিত কোন্ গৃহশিক্ষক ছিল না ওর। কোন বিষয়ে অসুবিধা হলে স্কুলের শিক্ষকরাই ওকে সাহায্য করতেন। আর বাড়িতে আমিই পড়াতাম। নির্দিষ্ট কোন সময় ধরে ও পড়ত না।’’ তিনি বলেন, ‘‘পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধূলা, গল্পের বই, বোনের সঙ্গে খুনসুটি সবই ছিল। তবে টেস্টের পর থেকে রেজওয়ানুল খুব সিরিয়াস হয়ে গিয়েছিল। অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করত।’’
স্কুলের প্রধানশিক্ষক ওয়াশিফ আলি বলেন,‘‘ রেজওয়ানুল রাজ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে। ও আমাদের স্কুলের গর্ব। পড়াশোনা তো বটেই, তার বাইরেও সবদিক থেকে রেজওয়ানুল খুবই ভাল ছেলে।’’ এত ভাল রেজাল্ট করেও আবেগে ভাসতে রাজি নয় রেজওয়ানুল। সে বলে,‘‘ একটা পর্ব মিটল। এবারের লক্ষ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স। তার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছি। ইচ্ছে রয়েছে মেডিক্যালে ভাল র্যাঙ্ক করে চিকিৎসক হওয়ার।’’ |