শিক্ষার দৌড় টেনেটুনে পঞ্চম শ্রেণি। দেখতেও ভাল। পরনের পোশাক কর্পোরেট হাউসের কর্তাকেও টেক্কা দেবে। ওই স্মার্ট যুবকের কথাবার্তায় কেকের মাথায় কাজু-কিসমিসের মতো গুঁজে দেওয়া থাকে কয়েকটি ইংরেজি ও হিন্দি শব্দ। আর তাতেই বাজিমাত।
বছর চল্লিশের ওই যুবক একের পর এক মহিলার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক পাতিয়ে তারপরে বিয়ে করার নাম কের টাকা হাতিয়ে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ। পাত্রীরা কিন্তু কেউ কলেজের শিক্ষিকা, কেউ উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষিকা। পাত্রীকে নিদেনপক্ষে হতেই হবে রাজ্য অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী। কিন্তু উচ্চশিক্ষিত মহিলারা ক্লাস ফাইভ পাস প্রতারকের পাল্লায় পড়েন কী ভাবে? মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের জবাব, “কথাবার্তায় ওই যুবক নিজের সম্বন্ধে এমনই একটা ধারণা তৈরি করে দেন, তাতে সহজে বোঝা দায় যে তাঁর বিদ্যা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। মহিলাদের কাছে নিজেকে তো সে কলকাতার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বলে তুলে ধরে। কথাবার্তায় যেমন চৌখস। চলনবলনও তেমনই।” |
সেই ফাঁদে পা গলিয়ে চাকুরিজীবী অনেক মহিলাই ফেঁসেছেন। পলাশ কাঞ্জিলাল নামে ওই যুবকের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরের ভাণ্ডারখোলায়। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের একটি বি-এড কলেজের শিক্ষিকা ও বেথুয়াডহরির উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার সঙ্গে প্রেম ও পরিণয়ের একই ষড়যন্ত্র করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন তিনি। দেবগ্রাম থেকে তাঁকে মুর্শিদাবাদ পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশ সুপার বলেন, “আশীর্বাদের দিনক্ষণ ঠিক করার পর মুর্শিদাবাদ জেলার এক কলেজ শিক্ষিকার কাছ থেকে সে ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।” তারপরই মা মারা গিয়েছেন এই মিথ্যা বলে আশীর্বাদের দিন পিছিয়ে দেন। পুলিশ জনায়, শিক্ষিকার সন্দেহ হয়। তিনি বেলডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে মোবাইল ফোনে আড়ি পেতে ও অন্য সূত্র ধরে বেলডাঙা থানার ও সি মহম্মদ জামালুদ্দিন মণ্ডল জানতে পারেন, বেথুয়াডহরির এক স্কুল শিক্ষিকার সঙ্গেও পাত্র সেজে একই ভাবে পলাশ প্রতারণা করেছেন। প্রতারিত হচ্ছেন তা কিন্তু ওই শিক্ষিকা বুঝতে পারেননি পলাশ গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত।
বেলডাঙার ও সি জামালুদ্দিন বলেন, “ইতিমধ্যে ওই শিক্ষিকার কাছ থেকে পলাশ ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা হাতিয়েছে। ফের বৃহস্পতিবার আরও ১ লাখ টাকা হাতানোর জন্য দেবগ্রামে একটি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের কাছে যায়।” সেখানে আগে থেকেই সহকর্মীদের নিয়ে হাজির ছিলেন ওসি জামালুদ্দিন। সেখানে পলাশ পৌঁছতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, পাত্র সেজে ওই যুবক অনেক মহিলাকে প্রতারিত করেছেন। পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার পরে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁর কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা হবে। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিজ করা হবে।” পুলিশ সুপার বলেন, পলাশের কাছ থেকে পাওয়া মোবাইল ফোনের ‘সিম’টি রয়েছে বর্ধমান জেলার এক মহিলার নামে। পলাশ বিবাহিত। বছর দেড়েকের এক সন্তানও রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, খবরের কাগজের পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন থেকেই পলাশ পাত্রীদের সন্ধান করত। ‘পাত্র চাই’ কলামে চাকরিজীবী পাত্রীর বিজ্ঞাপনে ফোন নম্বর দেওয়া থাকলে সেখানে ফোন করে পাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। পুলিশ সুপার বলেন, “সুপাত্র হিসাবে নিজেকে জাহির করতে পাত্রীদের কাছে সে নিজেকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসাব তুলে ধরে। কর্মস্থল কলকাতা। দেড়-দু’মাস চুটিয়ে প্রেম। তারপর আশীর্বাদ, নয়তো বিয়ের দিনক্ষণ স্থির হয়ে যায়। এরপর ঘর সাজানো, আসবাব কেনা বা ফ্ল্যাটের রেজিষ্ট্রি খরচ বাবদ চাকরিজীবী পাত্রীর কাছে থেকে এক-দু’লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে বলে তার মা মারা গিয়েছে। তাই অশৌচ চলছে। আপাতত বিয়ে, বা আশীর্বাদ বাতিল। তারপর সে ফোনের সিম পাল্টে ফেলে। এ ভাবে তারা দ্বারা অনেক মহিলা প্রতারিত হয়েছেন।”
মুর্শিদাবাদের অধ্যাপিকা ও বেথুয়াডহরির স্কুল শিক্ষিকার সঙ্গে কতদিন আলাপ? পলাশের জবাব, “মাস তিনেক।” এ পর্যন্ত কতজন পাত্রী প্রতারিত হয়েছেন? পাত্র এ বার নিরুত্তর! |