আমি নিশ্চিত, অনেকে শুক্রবার রাতে ন্যায়বিচার চাইছিলেন। দেশজুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকের মনে নিশ্চয়ই ইচ্ছে ছিল, রাহুল দ্রাবিড়ের রাজস্থানের জয় দেখার। শেষ পর্যন্ত সেটা হল না। কিন্তু তবু বলব, মন খারাপ করবেন না। রাহুলের রাজস্থান হেরেছে সম্পূর্ণ ক্রিকেটীয় কারণে। হায়দরাবাদ উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে। শ্রীসন্তদের স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির প্রভাব টিমের মননে পড়তে দেয়নি। আমার অন্তত তাই মনে হয়েছে।
বরং আমি রাহুলকে সেলাম করব। আজকের পর থেকে আরও শ্রদ্ধা করব। কেন জানেন? রাহুল বুঝিয়ে দিয়েছে, বিপদে পড়ে পালিয়ে যাওয়ার লোক ও নয়। লড়তে জানে। চরম দুঃসময়েও টিমের ভিতর থেকে আগুন বার করে আনতে জানে। ভারতীয় ক্রিকেট কোনও দিন ওকে লড়াকু অধিনায়কের মর্যাদা দেয়নি। গড়াপেটার নোংরামির মধ্যে যদি রাহুল মাথা উঁচু করে আইপিএলটা শেষ করে, তা হলে মর্যাদা দেবে নিশ্চয়ই। |
অন্ধকূপ থেকে টিমকে বের করলেন, জেতাতে
পারলেন না। রান আউট দ্রাবিড়। ছবি: বিসিসিআই |
সত্যি বলতে কী, এ দিনের উইকেটটা বুঝতে পারলে ম্যাচটা রাজস্থান জিততেও পারত। সানরাইজার্স তো বলতে গেলে কিছুই রান করেনি। বলা ভাল, রাজস্থান করতে দেয়নি। তখন ওদের অসম্ভব চার্জর্ড দেখাচ্ছিল। সানরাইজার্সের এক-একটা উইকেট পড়ার পর স্যামসন-হজদের উৎসবের কথা ভাবুন তো? ফকনার এ সবের মধ্যে ফের পাঁচ উইকেট পেল। ক্যাপ্টেন রাহুলও তো সেই চেনা। শান্ত। একাগ্র। আগের দিন প্রেসকনফারেন্স করার সময় টিভিতে ওকে দেখে মনে হচ্ছিল, ভেঙে পড়েছে। এ দিন কিন্তু ওকে বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই ওর সংসারে কী রকম অশান্তি চলছে। ম্যাচের আগে প্র্যাক্টিস বন্ধ রেখে টিমটাকে রিগ্রুপ করেছে। শ্রদ্ধা তো এর পর করতেই হবে দ্রাবিড়কে। ওরা আজ হারলেও একটা জিনিস অন্তত বুঝিয়েছে। শ্রীসন্ত, চান্ডিলা বা অঙ্কিত চহ্বাণ-ই রাজস্থান রয়্যালস নয়। রাজস্থান মানে সঞ্জু স্যামসন। রাজস্থান মানে ওয়াটসন। রাজস্থান মানে দ্রাবিড়ও।
আইপিএলে স্পট-ফিক্সিং নিয়ে মহাবিতর্কের পর লোকে বলাবলি করছিল, আইপিএল শেষ। আর কেউ টুর্নামেন্টটা দেখবে না। ক্রিকেটার গাল চুলকোনো থেকে শুরু করে সানগ্লাস খোলা সব কিছুকেই মনে হবে ফিক্সিংয়ের সঙ্কেত। এ দিন বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে শুনলাম, রাহুলের জন্য নানা উৎসাহব্যঞ্জক পোস্ট পড়েছে। অনেকেই রাহুলের টিমের জয়ের জন্য প্রার্থনা করেছেন। অনেকে আমাকে প্রশ্ন করছেন, তা হলে কী উৎসাহটা আবার জায়গায় ফিরে এল? |
দেখুন, আইপিএলের দর্শক ক্রিকেট দেখতে মাঠে আসে ভাবার কোনও কারণ নেই। আসে বিনোদনের জন্য। মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে না গিয়ে মাঠে বসে সাড়ে তিন ঘণ্টার একটা ক্রিকেট শো দেখা। তাই এখানে নোংরামি ঘটলেও অতটা মনে প্রভাব ফেলে না, যতটা আমরা ভাবছি। লোকে ঠিকই মাঠে আসবে। টিভিতে ম্যাচও দেখবে। রাহুল শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়ে পাল্টা জবাবটা দিতে পারল কিনা, সেটাও তো একটা মুচমুচে ব্যাপার।
তবে তার জন্য রাহুলদের বাইরের উইকেটে জেতাটা শিখতে হবে। অ্যাওয়ে ম্যাচে ওদের রেকর্ড খারাপ। যা দেখছি, রাহুলের সামনে দু’টো রোগ। এক, গড়াপেটার অন্ধকার থেকে টিমকে বার করে আনা। দুই, টিমকে বাইরে জিততে শেখানো।
প্রথম রোগ থেকে মুক্তির খোঁজ একটু নয়, আমি বলব অনেকটাই পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় রোগের ওষুধ এখনও দেখছি না।
|
... রাহুলের ক্যাপ্টেন্সির কপালটাই খারাপ। যখন ও ভারতের অধিনায়ক ছিল কোচ পেয়েছিল গ্রেগ চ্যাপেলকে! আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের অধিনায়ক হয়ে টিমে পেল শ্রীসন্তকে! তবে এ বারের আইপিএলে রাহুল খুব ভাল ক্যাপ্টেন্সি করছে। আমার তো মনে হয়, ভারতের হয়ে টেস্ট আর ওয়ান ডে-তেও ও এত ভাল নেতৃত্ব দেয়নি। অথচ এ রকম একটা সময়েই ওর দলের ওপর এত বড় আঘাত এল। যার জন্য ধাক্কাটা আরও বেশি লেগেছে। তবে রাহুলের একটু পিছিয়ে যাওয়ার অভ্যেস আছে। কিন্তু এই সময় ওকে আরও বেশি করে সামনের দিকে তাকাতে হবে। আর তিন জন ক্রিকেটারের কেলেঙ্কারির জন্য গোটা আইপিএল খারাপ হয়ে যেতে পারে না। মনে রাখতে হবে, আইপিএলে একটা সচিন, একটা রাহুল, একটা গেইলও আছে।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় |
আমার মনে হয় এই সব বিতর্ক আমাদের আরও একজোট করে দিয়েছে। আমরা নিজেদের আরও কাছাকাছি এসেছি। আশা করছি ভাল পারফর্ম করতে পারব।
টস করতে এসে রাহুল দ্রাবিড় |
|