নাইটদের হারিয়ে জয়ে ফেরার পরের সকালটা যেমন হওয়ার কথা ছিল, তেমন আর হল কোথায়? এক বন্ধুর ফোনে ঘুম ভাঙল এবং সেই ফোনেই ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির খবরটা কানে এল। সত্যিই অবিশ্বাস্য! বিশ্বাসই হয়নি, ক্রিকেটের মুখে চুনকালি মাখিয়ে গ্রেফতার হয়েছে ভারতের এক টেস্ট ক্রিকেটার। বন্ধুকে বললাম, সক্কালবেলা ইয়ার্কি হচ্ছে? যখন বুঝলাম, ব্যাপারটার মধ্যে এক ফোঁটাও মিথ্যে নেই, তখন যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। আরও বিস্ময়কর, প্রথম ঘটনাটা আমাদের পুণে ওয়ারিয়র্সেরই ম্যাচে। সে দিন এর ছিটেফোঁটাও টের পাইনি আমরা কেউ। জানতামই না যে, বিপক্ষের এক জন আমাদেরও কলঙ্কের পাঁকে ডুবিয়ে দিয়েছে।
জানি না ওদের কী হবে। শুনলাম দোষী সাব্যস্ত হলে ওদের জেল হতে পারে। এমনকী সাত বছরের জেল। তাই হোক। ওরা কঠিন শাস্তি পেলে এর পর থেকে আর কোনও ক্রিকেটার এমন জঘন্য অপরাধ করার সাহস পাবে না। ওরাই বা এই সাহসটা কোত্থেকে পেল, তা-ও তো মাথায় আসছে না!
বাকি দু’জনকে, তেমন ভাল ভাবে চিনি না। তবে শ্রীসন্তের মতো একটা শিক্ষিত ছেলে, যার একটা ভাল ‘ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড’ আছে, সে মাত্র ৪০ লক্ষ টাকার জন্য এমন জঘন্য অপরাধ করবে কেন, এই ধাঁধাটার সমাধান খুঁজে পাচ্ছি না। এত দিন ধরে টিমের সঙ্গে থেকে দেখেছি, ক্রিকেটারদের আশেপাশে বহু লোক ঘুরে বেড়ায়। অনেকে ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথাও বলে। এ সব হবেই। দীর্ঘ দু’মাসের একটা টুর্নামেন্টে তো একটা দলে কার্ফু জারি করা যায় না। তা ছাড়া, কোনও ক্রিকেটারই শিশু নয় যে, তাদের জোর করে স্পট ফিক্সিংয়ে টানবে কেউ। কিন্তু কারও নিজেরই মতিভ্রম হলে তো কিছু করার নেই। অমিত সিংহ নামের যে ক্রিকেটার এখন বুকিদের দলে নাম লিখিয়েছে, তাকে আমার একটাই প্রশ্ন, ক্রিকেটের প্রতি তোমার এত ঘৃণা কেন? নিজে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা সত্ত্বেও?
এমনিতেই ঘটনাটা আমাদের সবাইকে বিরাট ধাক্কা দিয়েছে। কিন্তু আসলে কেলেঙ্কারির জেরটাই আরও সাঙ্ঘাতিক। খবরটা পাওয়ার পর থেকেই আমাদের দলের ছেলেদের মধ্যে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন লক্ষ করছি। যেন সব সময় একটা চাপা আতঙ্ক, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সর্বত্র ‘প্যানিক’। ওদের কথায় মিশে রয়েছে রাগও। রাগ অপরাধীদের উপর। এই প্রচণ্ড গরমে খেলতে খেলতে এখন মাঠে কেউ তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছলেও যেমন প্রশ্ন উঠতে পারে, তেমন কোনও বোলারের টি-টোয়েন্টিতে এক ওভারে ২০ রান উঠলেও অনেকে সন্দেহের চোখে তাকাতে পারে। কারও হাত থেকে ক্যাচ পড়লে তো কথাই নেই, গ্যালারি থেকে ‘চোর’ মন্তব্যও উড়ে আসতে পারে। ক্রিকেটাররা যে কতটা চাপে রয়েছে, তা বলে বোঝাতে পারব না। তিনটে ছেলের জন্য প্রত্যেক ক্রিকেটারকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে সবাই।
একটা খবর বাতাসে ভাসছে। আরও দু’জন ক্রিকেটারকে গ্রেফতার করা হতে পারে। অথচ তাদের নাম স্পষ্ট বলা হচ্ছে না। ফলে একটা আতঙ্কের আবহাওয়া তৈরি হয়ে রয়েছে। কখন, কার গায়ে কলঙ্কের ছাপ লাগবে কেউ জানে না। যেমন আগের দিন হঠাৎ শেন ওয়াটসনের নাম ভেসে উঠেছিল! শেষে জানা গেল, ও এ সবের মধ্যে নেই। এ রকম আবার কার নাম কখন ভেসে ওঠে কে জানে বাবা! |