কেঁদে ফেললেন শ্রীসন্ত, অঙ্কিতও
লোভ সামলাতে পারেননি। তাই ভুল করে ফেলেছেন। পুলিশি জেরায় ভেঙে পড়ে জানালেন শান্তাকুমারন শ্রীসন্ত এবং অঙ্কিত চহ্বাণ। রাজস্থান রয়্যালসের ধৃত আর এক ক্রিকেটার অজিত চান্ডিলাও দোষ কবুল করেছেন বলে পুলিশের দাবি।
এই স্বীকারোক্তিতে পুলিশ নিশ্চিন্ত তো নয়ই, বরং শীর্ষকর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, আরও কিছু ক্রিকেটার ও বুকির নাম হয়তো শীঘ্রই প্রকাশ্যে আসবে। স্পট ফিক্সিংয়ের রাহুগ্রাস যে শুধু আইপিএল সিক্সের তিনটে ম্যাচেই সীমাবদ্ধ, এমনও ভাবা হচ্ছে না। এ পর্যন্ত রাজস্থানের সব ম্যাচকেই আতসকাচের তলায় ফেলতে চলেছে দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল। এর ফলে রাজস্থান ছাড়াও তাদের প্রতিপক্ষ দলগুলিরও কিছু সন্দেহভাজন ক্রিকেটারের নাম পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আজই আবার চেন্নাইয়ে অন্য একটি বেটিং চক্রের ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
দিনের চমক অবশ্য অমিতকুমার সিংহ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত ১১ বুকির অন্যতম অমিত গত মরসুমেও রাজস্থানের হয়ে আইপিএল খেলেছেন। রাজস্থানের প্রথম অধিনায়ক শেন ওয়ার্ন পর্যন্ত মুগ্ধ ছিলেন এই মিডিয়াম পেসারের প্রতিভায়। গুজরাতের এই ক্রিকেটারকে সাসপেন্ড করেছে বোর্ড।
আজ সকাল থেকেই শ্রীসন্তদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। জেরা চলাকালীন কেঁদে ফেলেন অঙ্কিত। বলেন, “স্যার, ভুল করে ফেলেছি। লোভ সামলাতে পারিনি।” জেরায় অঙ্কিত রাজস্থানের এক ভারতীয় ও এক অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারের নাম করেন বলে দিল্লি পুলিশ সূত্রের দাবি।
শ্রীসন্তের বাবার কান্না। ছবি: পিটিআই
শ্রীসন্ত-ঘনিষ্ঠরা গোড়া থেকেই বলে আসছিলেন, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশের বক্তব্য, আজ ভেঙে পড়েন শ্রীসন্তও। “বলেন, ভুল করেছি। আমি অনুতপ্ত। জিজু জনার্দন আমায় লোভ দেখিয়েছিল।” সকালের দিকে অজিত চান্ডিলার আইনজীবীও জোর গলায় দাবি করেছিলেন, দিল্লি পুলিশই তাঁকে এই মামলায় জড়িয়েছে। কিন্তু পরে অজিতও দোষ স্বীকার করে নেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের ওই সূত্রটি। অঙ্কিত তাঁকে গড়াপেটায় জড়ানোর জন্য অজিতকেই সরাসরি দায়ী করেছেন। পুলিশ সূত্রের দাবি, অমিত সিংহ এবং মুম্বইয়ের বুকি চন্দ্রেশ পটেল মিলে প্রথমে অজিতকে হাত করেছিলেন। দুই বিদেশি এবং এক ভারতীয় ক্রিকেটারকে একটি পার্টিতে ডেকে দলে টানার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অজিতকে। কিন্তু ওই ক্রিকেটাররা ফাঁদে পা দেননি।
পুলিশের কাছে চন্দ্রেশ দাবি করেছে, ক্রিকেটারদের সঙ্গে তাদের প্রধান যোগসূত্র ছিলেন অজিত। জিজুর মাধ্যমে শ্রীসন্তের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল মানান নামে আর এক বুকি। আজই শোনা যায়, সুনীল অভিচন্দানি ওরফে সুনীল দুবাই নামে এক বুকির সঙ্গে কিছু দিন আগেই এক উড়ানে দেখা গিয়েছিল শ্রীসন্তকে। একদা মুম্বইয়ের বাসিন্দা এই সুনীল এখন দুবাইয়ে বসে আনিস ইব্রাহিমের বেটিং চক্র চালায়। পুলিশের দাবি, মুম্বই থেকে যে বুকিদের ধরা হয়েছে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করছিল সুনীলই।
গড়াপেটা চক্রের মুম্বই-যোগের কথা মাথায় রেখেই আজ থেকে মুম্বই পুলিশের সঙ্গে যৌথ তদন্ত শুরু করেছে দিল্লি
পুলিশ। যদিও ১৫ মে ওয়াংখেড়ের ম্যাচের পর মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের সাহায্যেই বান্দ্রা ওয়েস্টের এক পাব পর্যন্ত শ্রীসন্ত-অঙ্কিতকে ধাওয়া করেছিল দিল্লি পুলিশ। মিঠানিয়া নামে এক বুকির সঙ্গে ওই পাবে দেখা করেছিলেন দু’জনে। অঙ্কিত গ্রেফতার হন হোটেলে ফিরে। শ্রীসন্তের গাড়ি পুলিশ আটকায় মোতি মহলে। গাড়িতে তখন ছিলেন তিন মহিলাও। পুলিশের সন্দেহ, মহিলা-চক্রের লোভ দেখিয়েও ক্রিকেটার তোলার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে বুকিরা।
অতএব পুলিশের মতে, শ্রীসন্ত-পর্ব হিমশৈলের চূড়ামাত্র। যার রেশ টেনে মুম্বই পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) হিমাংশু রায় বলেছেন, “আমাদের ধারণা, আরও ক্রিকেটার ও বুকি এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। অপেক্ষা করুন, কিছু দিনের মধ্যেই তাঁদেরও নাম প্রকাশ্যে আসবে।” আইপিএলে এই কাণ্ড অনেক বছর আগে থেকেই চলছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন হিমাংশু। আরও বলেছেন, বুকিদের সঙ্গে দাউদ ইব্রাহিমের যোগাযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। দিল্লির পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমারও সদর দফতর ছাড়ার আগে বলে যান, “বিদেশের পাণ্ডাদের সঙ্গে বুকিদের কথার রেকর্ড আছে আমাদের।” অজিতের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর টেলি-কথোপকথনও আজ প্রকাশ করেছে পুলিশ। যেখানে অজিতের স্ত্রী তাঁকে বলছেন, দল হারলেও তিনি এত টাকা পাচ্ছেন কী করে। অজিত বলছেন, “যা দিচ্ছি, রেখে দাও।”
“লোভের শিকার হওয়ার দুর্ভাগ্যজনক কাহিনি” বলছেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসন। রবিবার চেন্নাইয়ে তড়িঘড়ি কার্যকরী সমিতির জরুরি বৈঠক ডেকেছে বিসিসিআই। সানরাইজার্স ম্যাচ দেখতে হায়দরাবাদ রওনা হওয়ার পথে রাজস্থান রয়্যালস মালিক রাজ কুন্দ্রা টুইট করেছিলেন, “নতুন দিন, নতুন শুরু।” ম্যাচ শুরুর আগে অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়ও বলেন, “বিতর্ক আমাদের আরও একজোট করে দিয়েছে।”
শেষ পর্যন্ত অবশ্য জিততে পারেনি রাজস্থান। ভেতরটাই চুরমার হয়ে গিয়েছে যে!

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.