খুনি বাইরে থেকে আসেনি বলে প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছিল পুলিশ। তা হলে কি মা, বাবা ও মাসিকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছে ছোট ছেলে? যদি তা-ই হয়, এই সপরিবার খুনের কারণ কী? নাকি পিছনে আছে পঞ্চম কোনও ব্যক্তি? যদি থাকে, সে কি পরিবারেরই কেউ, নাকি বাইরে থেকে এসেছিল?
বৃহস্পতিবার রাতে হাওড়ার সাঁকরাইলে একই পরিবারের চার জনের রহস্যজনক মৃত্যুর পরে এই প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। শুক্রবার রহস্যের কিনারা করতে নেমে এই সব প্রশ্ন সামনে রেখেই তথ্যপ্রমাণ যাচাই করেন তদন্তকারীরা। পরিবারের বড় ছেলেকেও সন্দেহের বাইরে রাখছেন না তাঁরা। এ দিন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এসেছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের হাতে। সেই তথ্য দেখে ধন্দে পড়ে গিয়েছে পুলিশ। পরিবারের সকলের পারস্পরিক সম্পর্ক কতটা স্বাভাবিক ছিল, সেই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে তাদের।
বৃহস্পতিবার রাতে সাঁকরাইল থানা এলাকার দুইল্যা বাদামতলায় একটি বাড়ি থেকে চারটি রক্তাক্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন বিশ্বনাথ সিংহ (৫৪), তাঁর স্ত্রী কল্পনা সিংহ (৪৬), তাঁদের ছোট ছেলে সুমিত সিংহ (২২) এবং কল্পনাদেবীর বোন কৃষ্ণা বসু (৪২)। বিশ্বনাথবাবু রাজ্যের খাদ্য-সরবরাহ বিভাগের কর্মী ছিলেন। সুমিত পড়তেন আন্দুল কলেজে। বাদামতলায় বিশ্বনাথবাবুর দোতলা বাড়ির পাশের বাড়িতেই থাকতেন কৃষ্ণাদেবী। একটি ঘরে তাঁকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি প্রতিবন্ধী ছিলেন। |
বিশ্বনাথবাবুর বড় ছেলে সুমন সিংহ কর্মসূত্রে লখনউয়ে থাকেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ লখনউ থেকে বাড়ি ফেরেন তিনি। বাড়ির দরজা ভেঙে সুমন দেখেন বাবা, মা ও ভাই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তাঁদের বাড়ির লাগোয়া মাসির বাড়িতে গিয়ে দেখেন, পড়ে আছে মাসির নিথর দেহ। পুলিশ সুপার ভরতলাল মীনা-সহ হাওড়া গ্রামীণ পুলিশের কর্তারা রাতেই ঘটনাস্থলে যান। তদন্তে নামে সিআইডি-ও। খবর দেওয়া হয় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের। সব ক’টি দেহেই ধারালো অস্ত্রের ক্ষত ছিল। পুলিশের ধারণা, বাইরের কেউ আসেনি। চার জনেরই কেউ অন্যদের খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন।
শুক্রবার দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সিআইডি তদন্ত শুরু করেছে। গোয়েন্দারা কথা বলছেন প্রতিবেশীদের সঙ্গে। যে-বাড়িতে খুন হয়েছে, তার পাশের বাড়িটি হল নেপালচন্দ্র সরকারের। নেপালবাবু জানান, সিংহ পরিবারের সঙ্গে তাঁদের মেলামেশা বিশেষ ছিল না। দরজা-জানলা প্রায় সব সময়েই বন্ধ রাখতেন বিশ্বনাথবাবুরা। গত তিন দিনে ওই বাড়ি থেকে কোনও ঝগড়া বা চিৎকার শোনেননি বলে জানান নেপালবাবু। ময়না-তদন্তের পরে বিকেলে পুলিশ জানায়, প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, চার জনের মধ্যে তিন জনকে কণ্ঠনালিতে তীক্ষ্ন ফলাযুক্ত কোনও অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে খুন করা
হয়েছে। শুধু সুমিতের গলার বাঁ দিকে একটি মাত্র গভীর ক্ষত পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা, সম্ভবত চার জনের মধ্যে কেউ তিন জনকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন। সুমিতকে প্রথম থেকেই সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু তিনি কেন খুন করবেন, তা এ দিনও তাঁদের কাছে পরিষ্কার হয়নি। তাই ঘটনার দিন ঘরের ভিতরে পঞ্চম কোনও ব্যক্তি ছিলেন কি না, সেটাই এখন খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
|