সম্ভাবনা ষোলো আনা। কিন্তু চিন্তা সেই জমিই।
রাজ্যে শিল্পায়নের পথে জমি-জটই যে বড় বাধা, এ বার তা স্পষ্ট জানাল ওএনজিসি-ও। শুক্রবার বেঙ্গল চেম্বার আয়োজিত সভায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির সিএমডি সুধীর বাসুদেব বলে গেলেন, এ রাজ্যে শেল গ্যাস (পাথরের খাঁজে যা পাওয়া যায়) উত্তোলনের সম্ভাবনা প্রভূত। কিন্তু তার জন্য জমি পাওয়ার পথ কতটা মসৃণ হবে, তা নিয়ে সংশয়ে তাঁরা। একই সঙ্গে, উন্নয়নের স্বার্থে জমি দেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে বোঝানোর দায়িত্ব রাজ্য সরকারকেই নিতে আর্জি জানালেন তিনি।
বিকল্প জ্বালানির খোঁজে সারা পৃথিবীতেই এখন শেল গ্যাসের সম্ভাবনা বিপুল। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই কোল-বেড-মিথেনের (সিবিএম) মতো দেশের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ চলছে শেল গ্যাসের। রাজ্যে দামোদর অববাহিকায় এই গ্যাসের খোঁজ মিলেছে। সেখানে রানিগঞ্জ ও উত্তর করণপুরায় পরীক্ষামূলক ভাবে চারটি কুয়ো খুঁড়ে একটিতে শেল গ্যাসের সন্ধানও পেয়েছে ওএনজিসি। কিন্তু আগামী দিনে ওই কুয়ো খোঁড়ার জন্য জমি পাওয়া আদৌ সহজ হবে কি না, তা নিয়েই চিন্তিত তারা। |
পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কল্লোল দত্ত ও সুধীর বাসুদেব (বাঁ দিকে)।—নিজস্ব চিত্র |
বাসুদেবের দাবি, এ রাজ্যে শেল গ্যাসের সম্ভাবনা যথেষ্ট। কিন্তু তা উত্তোলনের অন্যতম দু’টি বড় চাহিদা (জমি ও জল) পূরণ করাই সবচেয়ে বেশি সমস্যার।
সরকারের জমি অধিগ্রহণ না-করার শর্তে বার বারই প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্যের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া। কাটোয়ায় এনটিপিসি-র তাপবিদ্যুৎ বা এসারের কোল-বেড-মিথেন গ্যাসের মতো প্রকল্পেও সংশয়ের মেঘ সেই জমির জোগান নিয়েই। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওএনজিসি-র শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, শেল গ্যাস তুলতে সাধারণ প্রাকৃতিক গ্যাসের চেয়ে অনেক বেশি কুয়ো খুঁড়তে হয়। ফলে জমিও লাগে বেশি। আর সেই কারণেই এখানে সম্ভাবনার বাস্তবায়ন নিয়ে তাঁর আশঙ্কা।
তাঁর যুক্তি, এ রাজ্যে জনঘনত্ব দেশের গড়ের তিন গুণ। প্রায় ৬১% জমিই উর্বর, চাষযোগ্য (সারা দেশে তা ৪৮%)। স্বাভাবিক ভাবেই কুয়ো খোঁড়ার জমি পেতে স্থানীয় মানুষের প্রবল বাধার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা। জমির পাশাপাশি অতিরিক্ত কৃষি নির্ভরতার জন্য জলের জোগান নিয়েও একই রকম প্রশ্ন রয়েছে তাঁর মনে। শিল্পমহল মনে করছে, এ দিন জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বাসুদেব হয়তো সরাসরি কিছু বলেননি। কিন্তু আসলে উন্নয়নের প্রশ্নে রাজ্যের ভূমিকা নিয়েই বার্তা দিয়েছেন তিনি।
সভায় বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্ত ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। |