মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যান ও ৩টি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) প্রায় ৫০ কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে অভিযোগ বহু দিনেরই। তা নিয়ে এসজেডিএ-র তরফে বিভাগীয় তদন্তও হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের দিয়েও তদন্ত করানো হয়েছে। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সরকারি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ দায়ের হল শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানায়। মুখ্যমন্ত্রী এখন উত্তরবঙ্গেই রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার এসজেডিএ-এর মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদী তাঁর সংস্থার দুই ইঞ্জিনিয়ার সহ তিনটি ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “এটা অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। বিশদে বলতে পারব না। এইটুকু বলতে পারি, মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানিয়ে তাঁর পরামর্শ মেনে পদক্ষেপ করেছি।”
এসজেডিএ-এর অভিযোগ, খাতায়-কলমে প্রায় ৬০ কোটি টাকা খরচ করে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। বাস্তবে বেশিরভাগ কাজই হয়নি। যে সব যন্ত্রাংশ, সরঞ্জাম কেনা হয়েছে বলে ওই দুই ইঞ্জিনিয়ার প্রাপ্তিস্বীকার করে নোট দিয়েছেন তারও হদিস মেলেনি। দু’জনকে শো-কজ করা হলেও সদুত্তর দিতে পারেননি তাঁরা। ভুল স্বীকার করে দায়িত্ব এড়াতে চেয়েছেন। পাশাপাশি, যে তিনটি ঠিকাদার সংস্থা ওই কাজের দায়িত্ব পায়, তারাও কাজ না-করে, যন্ত্রাংশ, সরঞ্জাম না-কিনে তা সরবরাহ হয়েছে বলে জানিয়ে টাকা তুলেছে বলেও অভিযোগ। শিলিগুড়ির ডিসি (সদর) অংমু গ্যামসো পাল বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
যাঁর আমলে ওই কাজগুলি হয়, সেই শিলিগুড়ির বিধায়ক তৃণমূলের রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে আগেই এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে রাজ্য। তাঁর জায়গায় গৌতমবাবুকে এসজেডিএ-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। শুরু হয় তদন্তও। বিভাগীয় তদন্তের পরে ৩ জন এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়রের পদাবনতি হয়। তাঁদের মধ্যে মৃগাঙ্কমৌলি সরকার নামে এক অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে সাসপেন্ড করা হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃগাঙ্কবাবু ও ইলেট্রিকাল বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার সপ্তর্ষি পালের বিরুদ্ধে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। দু’জনেই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। যে তিন ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে, তাদের কর্মকর্তাদের একাংশ কয়েক জন তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছয়। এই ব্যাপারে প্রাক্তন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথবাবুর বক্তব্য, “বর্তমান চেয়ারম্যান যা বলার বলবেন। দফতরের কাজের ব্যাপার অফিসার-ইঞ্জিনিয়াররা মূলত দেখেন। তাঁরাই জবাবদিহি করবেন।” |