|
|
|
|
সরকার-সুদীপ্ত গড়াপেটা, অভিযোগ বিরোধীদের
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ধরা পড়ার আগে সিবিআইকে ১৮ পাতার দীর্ঘ চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠিকেই এফআইআর হিসাবে ধরে তদন্ত শুরু করার আর্জি জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে। এখন পুলিশ হেফাজত থেকে একই ব্যক্তি আদালতে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, রাজ্য পুলিশের সিটের তদন্ত বেশ ভাল হচ্ছে! তা ছাড়া, সিবিআইয়ের অনেক কাজের চাপ! তাই সিবিআই তদন্তের কোনও দরকার নেই।
সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের এই ভোলবদলে গড়াপেটার গন্ধ পেয়ে রাজ্য তথা শাসক দলের বিরুদ্ধে আক্রমণের ধার বাড়াল বিরোধীরা। সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত ঠেকানোর জন্য সরকার যে যে যুক্তি দিচ্ছে, মূল অভিযুক্তের হলফনামার সুরও তার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। এই যুক্তি সামনে রেখেই সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি-সহ সব বিরোধী দলের দাবি, সারদা-সরকার বোঝাপড়া এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার!
সিবিআইকে পাঠানো সারদা-কর্তার চিঠি তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অঙ্গুলি হেলনেই লেখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তখন থেকেই তাঁদের অভিযোগ, গোটা ঘটনাপ্রবাহই গড়াপেটা। সুদীপ্তবাবুর হলফনামার খবর প্রকাশ্যে আসাত সেই অভিযোগই বৃহস্পতিবার আরও জোরালো ভাবে তুলেছেন সূর্যবাবু। তাঁর কথায়, “আগে চিঠি দিয়েছিলেন সিবিআই তদন্ত চাই। এখন বলছেন, রাজ্য সরকারের সিট খুব ভাল ব্যবস্থা! যা লেখানো হচ্ছে, লিখছেন। যা বলানো হচ্ছে, বলছেন। নিশ্চয়ই চাপে আছেন। কিন্তু বোঝাপড়া অব্যাহত আছে!” |
|
বানতলার জনসভায় গৌতম দেব এবং রেজ্জাক মোল্লা।—নিজস্ব চিত্র |
এমন অভিযোগের জবাবে শাসক শিবির অবশ্য প্রধান বিরোধী দলকে পাল্টা কটাক্ষ করেছে। শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “সূর্যবাবুরা দেখছি সুদীপ্ত সেনদের উকিল! এই তো কালকেও সুদীপ্তকে নিরাপত্তা দিতে হবে বলে ওকালতি করছিলেন! এখন আবার গড়াপেটা বলছেন। কখন কী করেন, বোঝা মুশকিল!” পার্থবাবুর আরও দাবি, “প্রতারিতদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার যা যা করণীয়, সব করছে। তদন্তও চলছে। সেই তদন্তে যদি সূর্যবাবুদের দলের রুই-কাতলা-গণেশদের নাম বেরোয়, আমাদের কী করার আছে?”
তবে সূর্যবাবুর অভিযোগ, সারদা-কাণ্ডের তদন্তে ক্রমাগত সত্য আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে। সিবিআইকে চিঠি লেখার আগে তৃণমূলের নেতৃত্বের সঙ্গে সুদীপ্তবাবুর বৈঠক হয়েছিল, তার পরে বিশেষ বিমানে ১০ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি থেকে ফিরে আসার পরে সুদীপ্তবাবু গা ঢাকা দিয়েছিলেন কিন্তু তৃণমূলেরই দেওয়া সিম কার্ড মারফত যোগাযোগ রেখে উত্তরের দিকে যাচ্ছিলেন, তার পরে ধরা পড়লেন এবং পুলিশ হেফাজত থেকে হলফনামা দিয়ে বাম জমানার দিকেই আঙুল তুললেন এই ঘটনাপ্রবাহই গড়াপেটা বলে তাঁর অভিযোগ। বিরোধী দলনেতা এ দিন বলেছেন, “তাঁকে (সুদীপ্ত) যা বলানো হবে, তা-ই বলবেন। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহে প্রতি দিন বোঝা যাচ্ছে, কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক। সব চেয়ে বড় কথা, যাঁরা প্রতারিত, তাঁরা বুঝতে পারছেন কারা জোট করে প্রতারণা করেছেন!” প্রতারকদের সম্পত্তি থেকে প্রতারিতদের টাকা ফেরতের প্রক্রিয়াও বিলম্বিত হচ্ছে বলে সূর্যবাবু ফের সরব হয়েছেন।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেব এ দিন বানতলার এক সভায় অভিযোগ করেছেন, সারদা-কাণ্ডে পাছে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ জারি হয়, তার আগেই পঞ্চায়েত নির্বাচন সেরে ফেলতে এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে রাজ্য সরকার! তাঁর দাবি, সিবিআই তদন্ত শুরু হলে একের পর এক তৃণমূল নেতা জেলে যাওয়ার উপক্রম হবে। সেই কারণেই সিবিআই তদন্তের আগে যেমন-তেমন ভাবে পঞ্চায়েত ভোট করার চেষ্টা করছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রায় চ্যালেঞ্জের সুরেই গৌতমবাবু বলেছেন, “সিবিআই তদন্ত করুন। যদি কোনও সিপিএম নেতা জড়িত থাকে, সে জেলে যাবে। সিপিএম জেলে যেতে প্রস্তুত!”
আদালতের বিবেচনাধীন হলফনামা নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না-করলেও সুদীপ্তবাবুর ভোলবদলে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে কংগ্রেসও। দলের নেতা মানস ভুঁইয়ার কথায়, “আগে সিবিআই চেয়েছিলেন। এখন কেন সিবিআই চাই না বলে রাজ্য সরকারের তদন্তে আস্থা রাখলেন, সুদীপ্ত সেনই বলতে পারবেন!” হলফনামার প্রসঙ্গ এড়িয়েও মানসবাবুর সংযোজন, “আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার। এতগুলো রাজ্য জুড়ে যে কেলেঙ্কারির জাল বিস্তৃত, সিবিআই তদন্তই তার জন্য উপযুক্ত। এই দাবির পিছনে চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র এ সব কিচ্ছু নেই!”
সারদা-কর্তার হলফনামার বক্তব্য তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ‘নিবিড় সুসম্পর্কে’র প্রমাণ বলে মনে করছে বিজেপি-ও। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ সরাসরিই বলেছেন, “সরকার এবং সুদীপ্ত সেন পরস্পরকে বাঁচানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাই সরকার সুদীপ্তের বিরুদ্ধে মামলা করেনি। প্রতিদানে সুদীপ্ত মুখ্যমন্ত্রীর সুরে বলেছেন, সিবিআই দরকার নেই!” সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষের মতে, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব সেনবাবুর সিবিআই তদন্ত সংক্রান্ত বক্তব্যেই প্রকাশ পাচ্ছে!” আর রাহুলবাবুর আশঙ্কা, “সুদীপ্ত সেন বাঁচলে এই সরকার বাঁচবে না! তাই সুদীপ্তকে খুন করে আত্মহত্যা বলে চালানো হতে পারে। বাম জমানায় সঞ্চয়িতার কর্ণধারের ক্ষেত্রে যেমন হয়েছিল।” এই প্রেক্ষিতেই তাঁর দাবি, সুদীপ্তবাবুকে ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি-র আওতায়
রাখা হোক।
|
পুরনো খবর: এখন সিবিআই তদন্তে আপত্তি সুদীপ্তর |
|
|
|
|
|