|
|
|
|
এ বার লগ্নি সংস্থার কর্তাকে অপহরণের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদন |
এ বার অপহরণের অভিযোগও জুড়ল অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে রাজ্য জুড়ে চলা ঘটনার তালিকায়।
এক বেসরকারি লগ্নি সংস্থার চেয়ারম্যানকে অপহরণ করে এক কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ হয়েছে মালদহে। ১১ মে বৈষ্ণবনগর থানার কুম্ভিরা গ্রামে আব্দুল বারি নামে ওই ব্যক্তিকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ। মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের শুলিতলা গ্রামের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি গ্রামীণ চিকিৎসক হিসেবে কুম্ভিরা গ্রামে যেতেন। তিন বছর আগে হুগলির আরামবাগের ‘পিআইওইউএস অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামে একটি অর্থলগ্নি সংস্থায় তিনি যোগ দেন। তিনি সংস্থার উত্তর পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান ছিলেন।
স্থানীয় আমানতকারী ও এজেন্টরা পুলিশের কাছে দাবি করেন, গত তিন বছরে ওই এলাকা থেকে ওই লগ্নি সংস্থা প্রায় ১ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা তুলেছে। মার্চ মাসে সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যায়। অপহৃতের ভাই আব্দুল রউফ সামিমের অভিযোগ, “দাদাকে যারা তুলে নিয়ে গিয়েছে, তারা এক কোটি টাকা মুক্তিপণ চেয়েছে। টাকা না পেলে তারা দাদাকে ছাড়বে না বলে জানিয়েছে।” ঘটনার পরেই আত্মীয়েরা বৈষ্ণবনগর থানায় অভিযোগ জানান। তবে থানা ব্যবস্থা না নেওয়ায় জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হন তাঁরা।
মালদহের পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সম্ভবত এজেন্ট বা আমানতকারীরা টাকা না পেয়ে ওই অর্থলগ্নি সংস্থার চেয়ারম্যানকে অপহরণ করেছে। কয়েকজনের নাম মিলেছে। তল্লাশি এবং তদন্ত চলছে।”
বেশ কিছু দিন গা-ঢাকা দিয়ে থাকা এক লগ্নি সংস্থার কর্ণধারের হদিস পেয়ে এ দিন বর্ধমানের দুর্গাপুরে তাঁর উপরে চড়াও হন এজেন্ট ও আমানতকারীরা। উত্তম রুইদাস নামে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে, গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, উত্তমবাবুর সংস্থা ‘সত্যশিবা রেকন লিমিটেড’ বছর তিনেক আগে ব্যবসা শুরু করে। চলতি বছরের শুরুতে ওই সংস্থা থেকে বেশ কিছু আমানতকারীর টাকা ফেরত পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁরা তা পাননি। ১৬ এপ্রিল থেকে বেপাত্তা ছিলেন উত্তমবাবু। কাটোয়ায় এ দিন ‘সুরাহা মাইক্রো ফিনান্স’ লগ্নি সংস্থার দুই কর্তার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন ওই সংস্থার এজেন্ট মধূসুদন সাহা।
এ দিন সকালে হুগলির মগরায় অসীম বেরা (৪৪) নামে এক লগ্নিকারী সংস্থার মালিকের অপমৃত্যু হয়। পুলিশের অনুমান, কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হন তিনি। অসীমবাবুর সংস্থার নাম ‘এমকো প্রজেক্ট লিমিটেড’। কেন তিনি আত্মহত্যা করলেন, সে ব্যাপারে মন্তব্য করেননি আত্মীয়েরা। হুগলির ডিএসপি (ডিঅ্যান্ডটি) দেবশ্রী সান্যাল বলেন, “পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।” অপমৃত্যুর আর একটি ঘটনা জলপাইগুড়ির রায়কতপাড়ার। পুলিশ জানায়, বুধবার রাতে স্থানীয় বাসিন্দা অতনু ঘোষের (৩৬) গলায় দড়ি দেওয়া দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, অতনুবাবুর স্ত্রী-র নামে একটি অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্সি থাকলেও, প্রকৃতপক্ষে সে কাজ অতনুবাবুই করতেন। পরিবারের দাবি, সারদা-কাণ্ডের পরে অতনু মনমরা হয়ে পড়েছিলেন। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁর অপমৃত্যুর যোগ আছে বলে মানেননি আত্মীয়েরা।
ইতিমধ্যে সারদা-কাণ্ডের তদন্তে সুদীপ্ত সেনকে জেরা করে এ বার কিছু ব্যবসায়ীর নাম পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, সুদীপ্তর অভিযোগ, বিভিন্ন প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই ব্যবসায়ীরা কয়েক কোটি টাকা নিয়েছিলেন তাঁর কাছ থেকে। গোয়েন্দাদের দাবি, জেরায় সুদীপ্ত সেন এ রকম জনা দশেক ব্যবসায়ীর নাম বলেছেন। এ দিন বিকেলে এমনই এক ব্যবসায়ীকে জেরা করা হয়। ওই ব্যবসায়ীকে প্রায় ২ কোটি টাকা দিয়ে, ফেরত পাননি বলে দাবি সারদা-কর্তার। তদন্তের অন্য পর্বে বুধবার রাতে দুর্গাপুরে সারদা-কর্মী মনোজ নাগেলকে জেরা করা হয়। গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রের খবর, জেরায় মনোজ জানিয়েছেন, তিনি মাসে ৭৫ হাজার টাকা বেতন পেতেন। সঙ্গে গাড়ি ও ঘরভাড়া। সংস্থা গুটিয়ে যাওয়ার আগে শেষ তিন মাস তিনি বেতন পাননি। গোয়েন্দাদের দাবি, জেরায় মনোজ তাদের জানান, সুদীপ্ত সেনের পরামর্শে তিনি নিজের বেতন আমানতকারীদের জমা করা অর্থ থেকে কেটে নিতেন। ‘সারদা রিয়্যালটি’র জেনারেল ম্যানেজার মনোজকে জেরা করে বাঁকুড়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু নতুন প্রকল্পের হদিস মিলেছে বলেও দাবি করেছেন গোয়েন্দারা।
শিলিগুড়িতে শ্যামল সেন কমিশনের অফিস থেকে ঘোষণা করা হয়, উত্তরবঙ্গের ছয় জেলা (কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহ) ছাড়া অন্য কোথাও সারদা বা অন্য লগ্নি সংস্থায় টাকা রাখা নিয়ে অভিযোগ কমিশনের শিলিগুড়ি অফিসে নেওয়া হবে না। তবে ভিন্ রাজ্যের কারও যদি উত্তরের ছয় জেলায় লগ্নি সংস্থায় টাকা রাখা নিয়ে অভিযোগ থাকে, তা শিলিগুড়িতে নেওয়া হবে। কমিশনের এক আধিকারিক বলেন, “অন্য রাজ্যে কেউ ওই ধরনের সংস্থায় টাকা রেখে প্রতারিত হয়ে থাকলে সেখানেই অভিযোগ জানাতে হবে।” |
|
|
|
|
|