|
|
|
|
জনস্বার্থ মামলা সরলো অন্য বেঞ্চে |
এখন সিবিআই তদন্তে আপত্তি সুদীপ্তর
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ফেরার হওয়ার আগে সিবিআই-কে পাঠানো চিঠিতে তাঁর সংস্থার আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়েছিলেন সুদীপ্ত সেন। বুধবার কিন্তু সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করেই আদালতে হলফনামা জমা দিলেন পুলিশ হেফাজতে থাকা সারদা কর্তা।
সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চেয়ে জনস্বার্থ মামলা চলছে কলকাতা হাইকোর্টে। সিবিআই তদন্তের বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই হলফনামা জমা দিয়েছে রাজ্য সরকার। এ দিন সেই একই সুরেই হলফনামা দিয়েছেন সুদীপ্তবাবু। রাজ্য সরকারের গড়ে দেওয়া তদন্ত কমিশন এবং স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমের (সিট) প্রতি আস্থা প্রকাশ করে সারদা কর্তার দাবি, সিবিআই তদন্ত করলে আমানতকারীদের টাকা ফেরত পেতে দেরি হবে। যে তদন্তকারী সংস্থা তাঁকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করছে, তার প্রতি সুদীপ্তবাবুর এই আস্থায় পুলিশ কর্তাদের অনেকেই বিস্মিত। তাঁদের কারও কারও মতে, চাপের মুখেই এমন হলফনামা জমা দিয়েছেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার।
ঘটনাচক্রে, এ দিনই সিবিআই তদন্তের দাবিতে দায়ের করা জনস্বার্থ মামলা প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ থেকে সরে গেল বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি মৃণালকান্তি চৌধুরীর আদালতে। আজ বৃহস্পতিবার নতুন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হবে। এর জেরে মামলা আরও দীর্ঘায়িত হবে বলে অভিযোগ আবেদনকারীর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর ক্ষোভ, “পঞ্চায়েত মামলার রায় দু’দিনে দিয়ে দিল আদালত। অথচ এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলা পিছিয়েই যাচ্ছে।” |
|
অশুভ ১৩: বুধবার দুর্গাপুর আদালতে তোলা হল সারদা গোষ্ঠীর অন্যতম ডিরেক্টর, দুর্গাপুর অফিসের দায়িত্বে
থাকা মনোজ নাগেলকে। তদন্তের স্বার্থে তাঁকে ১৩ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিল পুলিশ। গোয়েন্দারা
জেনেছেন,
মাঝেমধ্যেই দুর্গাপুরে আসতেন সুদীপ্ত-দেবযানী। নানা হোটেলে ঘর বুক করা হত, তবে তাঁরা
সাধারণত
থাকতেন কবিগুরু এলাকার একটি গেস্ট হাউসে। ২৪ মে তাঁদের তদন্তের জন্য দুর্গাপুরে আনার
কথা পুলিশের।
কর্তাদের দেখভাল করতে করতেই নাগেল কী ভাবে সাধারণ কর্মী থেকে ডিরেক্টর
হলেন,
কোথা
থেকে কত টাকা তোলা হত, সবই জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা। ছবি: বিকাশ মশান। |
এ দিন পেশ করা তাঁর হলফনামায় সুদীপ্তবাবু দাবি করেছেন, এই জনস্বার্থ মামলা সম্পর্কে তাঁকে কিছুই জানানো হয়নি। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি জেনে তিনি তাঁর আইনজীবীকে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে বলেন। আর তার পরেই ওই মামলা সম্পর্কে তিনি নিজের বক্তব্য জানাচ্ছেন। হলফনামায় সুদীপ্তবাবু লিখেছেন, সারদা কাণ্ডের তদন্তে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বে কমিশন এবং স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গঠন করেছে। তারা তাদের কাজও শুরু করে দিয়েছে। তিনি মনে করেন, সিট অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গেই তদন্তের কাজ চালাচ্ছে। এই অবস্থায় তাদেরই যদি সমস্ত অভিযোগের তদন্তভার দেওয়া হয়, তা হলে তদন্ত কার্যকর এবং ঝঞ্ঝাটবিহীনও হবে।
কেন সিবিআই তদন্তে তাঁর আপত্তি, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে সুদীপ্তবাবু লিখেছেন, সিবিআইয়ের হাতে এমনিতেই অনেক মামলা রয়েছে। সারদা কাণ্ড তাদের হাতে দিলে মামলার সংখ্যা আরও একটা বাড়বে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই তদন্তের কাজে দেরি হবে। আমানতকারীরাও টাকা ফেরত পাবেন দেরিতে। অন্য দিকে, রাজ্য সরকার শুধু সারদা কাণ্ডের তদন্তের জন্যই সিট গঠন করেছে। সিটে অনেক দক্ষ অফিসারও আছেন। অতএব কমিশন এবং সিটের হাতে তদন্তের ভার থাকলে তারা অনেক দ্রুত সংস্থার সম্পত্তি উদ্ধার করে, তা বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারবে।
হলফনামায় সুদীপ্তবাবু আর্জি জানিয়েছেন, হয় তদন্ত কমিশন, না হলে হাইকোর্ট এমন কাউকে দায়িত্ব দিক, যিনি প্রকৃত পাওনাদার ও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। বিভিন্ন সম্পত্তি উদ্ধার করা এবং বাজারদরে বিক্রি করার ব্যবস্থা করবেন। তাঁর বক্তব্য, এ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। একটিও দেওয়ানি মামলা হয়নি। সুদীপ্তবাবুর প্রশ্ন, যেখানে জমি-বাড়ি ইত্যাদি
বিষয় রয়েছে, সেখানে ফৌজদারি মামলায় কী করে সম্পত্তির বিষয়টির সমাধান হবে?
ফেরার হওয়ার আগে সিবিআই-কে যা লিখেছিলেন, হলফনামাতেও তার বহু বিষয় পুনরুক্তি করেছেন সারদা কর্তা। যেমন তিনি আবারও লিখেছেন, সংবাদমাধ্যমের ব্যবসায় ঢোকাটাই তাঁর ভুল হয়েছিল। ওই ব্যবসাতেই তিনি ডুবেছেন। সুদীপ্তবাবু বলেছেন, তাঁর এক-একটি সংবাদমাধ্যমে মাসে এক কোটি টাকা করে খরচ হতো। কিন্তু লাভ তো দূরস্থান, কোনও দিনও খরচটুকুও তোলা সম্ভব হয়নি। যখন তিনি বুঝতে পারেন এই ব্যবসা তাঁকে দেউলিয়া করে দিচ্ছে, তত দিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
সুদীপ্তবাবুর হলফনামা পেশের
দিনেই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, তারা জনস্বার্থ মামলাটি আর শুনবে না। বৃহস্পতিবার ওই মামলার শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও এ দিন সকালে প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, তিনি বৃহস্পতিবার কলকাতায় থাকবেন না। খবর পেয়ে আবেদনকারীর আইনজীবী প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের কাছে জানান, লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতারিত। আত্মহত্যার মিছিল চলছে। দোষীদের চিহ্নিত করা ও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে এখনই হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে সিবিআই তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
কিন্তু নানা কারণে মামলার শুনানি পিছিয়ে যাচ্ছে।
সুব্রতবাবুর বক্তব্য শুনে প্রধান বিচারপতি জানান, তিনি মামলাটি অন্য ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারিত করে দিচ্ছেন। এর পরেই জানিয়ে দেওয়া হয়, বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হবে।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই-কে হলফনামা দিয়ে সারদা কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য রাজ্যের ক্ষেত্রে তারা কী করছে, তা জানাতে বলেছিল। সিবিআইয়ের আইনজীবী হিমাংশু দে জানিয়েছেন, ওই হলফনামা জমা দেওয়া হয়েছে। সিবিআই জানিয়েছে, অসম সরকার বেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত করার জন্য তাদের অনুরোধ জানিয়েছে। তার মধ্যে দু’টি মামলা সারদার বিরুদ্ধে। ওড়িশায় একটি অন্য লগ্নিকারী সংস্থার বিরুদ্ধে সিবিআই মামলা করছে। সিবিআই আগেই আদালতকে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, তাদের দায়িত্ব দেওয়া হলে সারদা মামলার তদন্ত করতেও তাদের আপত্তি নেই।
|
পুরনো খবর: রাজ্য: সিবিআই রাজি সারদায়, চাপে তৃণমূল |
|
|
|
|
|