|
|
|
|
একশো দিন কাজ |
জোট জল্পনা উস্কে রাজ্যকে ১৭০০ কোটি দিচ্ছে কেন্দ্র
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে পশ্চিমবঙ্গে একশো দিন কাজের প্রকল্পের জন্য এক ধাক্কায় ১৭০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করে দিল মনমোহন সিংহের সরকার। আপাত ভাবে এটি নিছক একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আবহের পরিপ্রেক্ষিতে তা নানা জল্পনা উস্কে দিয়েছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে জট কাটাতে গত কাল দুপুরে নির্দেশ জারি করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। আর তার  ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই অর্থ অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় সরকার। সন্ধ্যাতেই ফ্যাক্স বার্তা মারফত সেই খবর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে দেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ। আজ দুপুরে ফোন করে জয়রামকে ধন্যবাদ জানান পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, একশো দিন কাজের প্রকল্পে গত মাসেই চলতি অর্থবর্ষের জন্য ৫১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। তা ছাড়া, গত অর্থবর্ষে খরচ করতে না-পারা ২১৪ কোটি টাকা রয়েছে রাজ্যের হাতে। গত কাল আরও ১৭০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করার ফলে সব মিলিয়ে এখন রাজ্যের হাতে রয়েছে ২৪২৪ কোটি টাকা।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই টাকা চলে আসায় স্বাভাবিক ভাবেই স্বস্তিতে মমতার সরকার। কিন্তু কংগ্রেস আগ বাড়িয়ে কেন তাদের এই স্বস্তি দিতে গেল, তা নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা। গত কালই হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন থেকে প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিজেপি। যে সিদ্ধান্তকে লোকসভা ভোটের আগে মমতার প্রতি বার্তা হিসেবেই মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল এবং বিজেপি-র শীর্ষস্তরীয় কোনও কোনও নেতার মাধ্যমে দু’পক্ষের আলোচনার একটা দরজা খোলা রয়েছে বলেও খবর। এই অবস্থায় কংগ্রেসও তৃণমূল নেত্রীকে পাল্টা বার্তা দিল কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে জয়রাম যখন দশ জনপথের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।
এই প্রশ্নের মুখে কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, স্বাভাবিক নিয়মেই এই টাকা রাজ্যের পাওনা। কেন্দ্র যে পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চনা করছে না, এই পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে সেটাই প্রমাণিত হচ্ছে। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল যাতে বঞ্চনার অভিযোগ তুলতে না পারে, সেই জন্যই অর্থ বরাদ্দের পরে তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দিয়েছেন জয়রাম। মমতার সঙ্গে সমঝোতার উদ্দেশ্য থাকলে তা করা হতো চুপিচুপি। এখন পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা বলতে পারবেন, তৃণমূল সরকার উন্নয়নের যে দাবি করছে, তা আদতে হচ্ছে কেন্দ্রের টাকাতেই। জয়রামও আজ বলেন, “একশো দিন কাজের প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করার জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য সম্প্রতি বেশ কয়েক বার আর্জি জানিয়েছেন। সেই কারণেই দ্রুত অর্থ বরাদ্দ করা হল।”
কিন্তু ঘটনা হল, পঞ্চায়েত ভোটের আগে কেন্দ্র এই ভাবে অর্থ বরাদ্দ করায় রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব মোটেই খুশি নন। প্রদীপবাবু বলেন, “রাজ্যের মানুষ একশো দিন কাজের প্রকল্পে যাতে ঠিকমতো টাকা পান, সে জন্য গ্রামোন্নয়নমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছিলাম। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁকে এ-ও জানিয়েছিলাম যে, পশ্চিমবঙ্গে ওই টাকা নয়ছয় হচ্ছে। তৃণমূল সরকার তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই অনিয়মের আশঙ্কা আরও বেশি।” কেন্দ্র টাকা বরাদ্দ করেছে খবর পেয়ে আজ জয়রামকে ফোন করেছিলেন প্রদীপবাবু। পরে তিনি বলেন, “আমি জয়রাম রমেশকে জিজ্ঞাসা করেছি, রাজ্য সরকার নিরন্তর মিথ্যা প্রচার করা সত্ত্বেও বারবার টাকা দেওয়া হচ্ছে কেন? উনি বলেছেন, গরিব মানুষদের কথা ভেবেই টাকা দেওয়া হয়েছে।”
ক’দিন আগে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে বৈঠকেও রাজ্য কংগ্রেস নেতারা প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন্দ্রের মন্ত্রীরা কেন তৃণমূলের হাত শক্ত করছেন? বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাসও দিয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু তার পরেও কেন্দ্র কঠোর হওয়ার বদলে আরও অর্থ বরাদ্দ করায় ঘরোয়া আলোচনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজ্য কংগ্রেস নেতারা। তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়তে পারে।
দিল্লির কংগ্রেস নেতারা বলছেন, লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি দোলাচলের মধ্যে রয়েছে। এমনিতেই সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেসের শরিক সংখ্যা কম। তার উপর দুর্নীতির অভিযোগে দল কোণঠাসা। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, বিজেপি যখন মমতা সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে তাঁকে বার্তা পাঠাচ্ছে, তখন কংগ্রেসের হাত গুটিয়ে বসে থাকা উচিত নয়। লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে কংগ্রেসেরও উচিত তাঁকে পাল্টা বার্তা পাঠানো।
কিন্তু মমতা কী করবেন, তা অনিশ্চিত। সম্প্রতি তিনি যে ভাবে কেন্দ্র-বিরোধী সুর চড়িয়েছেন, কংগ্রেসকে ক্ষমতায় আসতে দেবেন না বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, তাতে কংগ্রেস দ্বিধাগ্রস্ত। তাই রাহুল রাজ্যের নেতাদের বলেছেন, জোট হচ্ছে না ধরে নিয়েই আন্দোলন করতে হবে। তবে তিনি এ-ও বলেছেন যে, ২০১৪ সালে সমঝোতার পরিস্থিতি তৈরি হলে রাজ্য নেতৃত্বের মতও গুরুত্ব পাবে। অর্থাৎ তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার একটা জানালা খুলেই রাখছেন রাহুল।
|
পুরনো খবর: একশো দিনের প্রকল্পে রেকর্ড খরচ, গরিবের লাভ কতটা |
|
|
 |
|
|