|
|
|
|
কৃষি-শিল্পে ছাপিয়েছে দেশকেও |
সাফল্যে পিছিয়ে বাম জমানা, বর্ষপূর্তির বইয়ে দাবি রাজ্যের
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী আজ, শুক্রবারের মধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। তাই নির্বাচনী আচরণবিধি এড়াতে বৃহস্পতিবারেই সরকারের দু’বছরের সাফল্যের বই প্রকাশ করল রাজ্য সরকার। মোর্চার সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করতে পাহাড়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তিনি ছিলেন না। তাঁর অনুপস্থিতিতে খানিকটা তড়িঘড়ি করেই অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করলেন এবং বললেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহরে নেই। তাই তাঁর তরফে আমি এই ঘোষণা করছি।”
ক্ষমতায় আসার বছর খানেক পরেই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, ভোটে দেওয়া প্রতিশ্রুতির ৯০% কাজই করে ফেলেছে তাঁর সরকার। এ দিন দু’বছরের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরতে তাঁর সরকার যে বই প্রকাশ করল, সেখানেও কার্যত সেই দাবিরই প্রতিধ্বনি। কি শিল্প, কি কৃষি, কি পরিষেবা ক্ষেত্র, কি শিক্ষা বা স্বাস্থ্যক্ষেত্র তৃণমূল সরকারের দাবি, দু’বছরেই অতীতের ৩৪ বছরকে কাজের হারকে পিছনে ফেলে দিয়েছে তারা। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে সর্বভারতীয় গড়ের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ অনেকটা এগিয়ে বলেও দাবি করা হয়েছে ওই পুস্তিকায়।
২০১১ সালের ২০ মে নতুন সরকার শপথ নেয়। সেই হিসেবে নতুন সরকারের দু’বছর পূর্ণ হতে আর তিন দিন বাকি। এই সময়ের সাফল্যের কথা তুলে ধরতে ইতিমধ্যে সরকারের বিভিন্ন দফতর গ্রামবাংলায় প্রদর্শনী, মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছে। এ জন্য সরকারি কোষাগার থেকে বেশ কয়েক কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এ দিন হল বই প্রকাশ। বাংলা বইয়ের নাম রাখা হয়েছে, ‘উন্নয়নের পথে মানুষের সাথে’। ইংরাজিতে করা হয়েছে, ‘পাওয়ার ইন প্রগ্রেস, এমপাওয়ারিং পিপল’। বইয়ের দাম করা হয়েছে ১০০ টাকা। |
|
মহাকরণে বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। —নিজস্ব চিত্র |
বইয়ের মুখবন্ধে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘এ যাত্রাপথ যে কুসুমাস্তীর্ণ ছিল, এমন দাবি অবশ্যই করছি না। একটু-আধটু ওঠা-পড়া তো থাকবেই ছিলও। কিন্তু পূর্বতন স্বেচ্ছাচারী সরকারের অজস্র ভুল সংশোধন করা ও রাজ্যবাসীর অবস্থার নিরন্তর উন্নয়নের প্রচেষ্টাও অভিজ্ঞতা হিসাবে কম সমৃদ্ধশালী নয়’। অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘সাম্প্রতিক চিটফান্ড কেলেঙ্কারি আমাদের নজর এড়ায়নি। বাম আমলে এ রাজ্য হয়ে উঠেছিল চিটফান্ডের আঁতুড়ঘর। এই সব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। পুরনো পাশ না হওয়া আইন বাতিল করে এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন এনেছি। অসাধু ব্যবসা বাজেয়াপ্ত করা, গ্রেফতারি, দ্রুত বিচারবিভাগীয় তদন্ত এবং যাতে আমানত ফিরিয়ে দেওয়া যায়, তার জন্য ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন, এই সব কাজ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয়েছে।’ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর সরকার ‘আদর্শের অসম লড়াই’ চালাচ্ছে বলেও বইয়ে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সরকারের দাবি, সার্বিক ভাবে আর্থিক ক্ষেত্রে জিডিপি থেকে শুরু করে শিল্প, কৃষি সব ক্ষেত্রেই সারা দেশের গড়ের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। যেমন, গোটা দেশে যখন জিডিপি বৃদ্ধির হার ৪.৯৬%, তখন পশ্চিমবঙ্গে তা ৭.৬%। একই ভাবে, দেশের কৃষি এবং শিল্পক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার যখন যথাক্রমে ১.৭৯% এবং ৩.১২%, তখন এ রাজ্যে তা ২.৫৬% এবং ৬.২৪%। এমনকী, পরিষেবা ক্ষেত্রেও সারা দেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে বৃদ্ধির হার অনেকটাই বেশি (৬.৫৯%-এর তুলনায় ৯.৪৮%)।
রাজ্যের শিল্প বিনিয়োগ নিয়ে যে অভিযোগই উঠুক, সরকারের দাবি, নতুন জমানায় গত দু’বছরে ১.১২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব পেয়েছে রাজ্য। এতে কর্মসংস্থান হবে ৩.১৪ লক্ষের।
সরকারের দু’বছরের সাফল্যের খতিয়ান দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রীর দাবি, একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে রাজ্য ১০৭% সাফল্য পেয়েছে, যা সারা দেশের নিরিখে রেকর্ড। তাঁর আরও দাবি, একশো দিনের কাজে কেন্দ্রের থেকে রাজ্য পেয়েছে ৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। অথচ খরচ করেছে তার চেয়ে বেশি, ৪ হাজার ৪০৮ কোটি। সংখ্যালঘু, মহিলা এবং তফসিলি জাতি-উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সরকার উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেছে বলে দাবি রাজ্যের।
অর্থমন্ত্রীর দাবি, “২০১১-১২ আর্থিক বছরে ২০.৫ লক্ষ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করেছে রাজ্য সরকার। যা এ রাজ্যে সর্বকালীন রেকর্ড।” সরকারের সব ক’টি দফতরের খতিয়ান ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষেরজন্য এই সরকার কী করেছে, তা জানাতে আরও একটি বই প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।
|
পুরনো খবর: দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে জেলায় জেলায় সাফল্যের প্রদর্শনী |
|
|
|
|
|