এক দিন, দু’দিন নয়, সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের করা জনস্বার্থ মামলার শুনানি পিছিয়ে গেল একেবারে কুড়ি দিন। বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি মৃণালকান্তি রায়চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিল, গ্রীষ্মাবকাশের পরে ৫ জুন ফের তাঁরা মামলাটি শুনবেন। এখনই কেন রায় দিচ্ছেন না, তার কারণ ব্যাখ্যা করে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই সব পক্ষের সব কথা না-শুনে রায় দেওয়া যায় না।”
২২ এপ্রিল থেকে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির পরে বুধবার মামলাটি নতুন বেঞ্চে সরে যাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন আবেদনকারীর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র জানান, বিশেষ কাজে কলকাতার বাইরে যেতে হওয়ায় বৃহস্পতিবার মামলাটি শুনতে পারবেন না। সুব্রতবাবু দেরি নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরে মামলাটি বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি। এত দিন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে মামলাটি শুনছিলেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। সুব্রতবাবুরা চেয়েছিলেন, তিনি যেন নতুন বেঞ্চে থাকেন। তা না-হওয়ায় হতাশ হন আবেদনকারীরা।
সুব্রতবাবু আদালতের বাইরে বলেন, “যে ডিভিশন বেঞ্চ দেড় দিনের মধ্যে পঞ্চায়েত ভোটের মতো গুরুত্বপূর্ণ আপিল মামলা শেষ করে নির্দেশ দিয়ে দিতে পারে, তাদের সারদা কাণ্ডের মতো হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতারণার মামলা শোনার সময় হচ্ছে না, এটা দুর্ভাগ্যজনক।” নতুন ডিভিশন বেঞ্চে মামলা যাওয়ার ফলে রায়দান দীর্ঘায়িত হবে বলে তখনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এ দিন তা-ই হওয়ায় হতাশ সুব্রতবাবু ডিভিশন বেঞ্চের কাছে মামলা খারিজ করার আর্জি জানান। পরে বলেন, “যেখানে সারদা কাণ্ডে আত্মহত্যার মিছিল চলছে, সেখানে ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিতে কালক্ষেপ করছে। যদি হাইকোর্ট অবিলম্বে রায় না দেয় তা হলে মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হোক। মামলা খারিজ হলে আবেদনকারী সর্বোচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন।”
প্রসঙ্গত, এর আগেও কালক্ষেপে অসন্তুষ্ট সুব্রতবাবু প্রধান বিচারপতির কাছে মামলা খারিজ করে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। যাতে তাঁরা শীর্ষ আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মামলা খারিজ করেনি।
কেন সুপ্রিম কোর্টে যেতে চাইছেন সুব্রতবাবু? জনস্বার্থ মামলাটির মূল আবেদনকারী আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরীর মতে, সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে যত দেরি হচ্ছে, সারদা কাণ্ডের নথিপত্র এবং প্রমাণ লোপাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তত বাড়ছে।
প্রধান বিচারপতির এজলাসে গত কয়েক দিন যা বলে এসেছেন, এ দিন নতুন ডিভিশন বেঞ্চে তারই পুনরাবৃত্তি করেন সুব্রতবাবু। তিনি বলেন, অসম ও ত্রিপুরা সরকার ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। অথচ সারদা কাণ্ডে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত যে রাজ্য, সেই পশ্চিমবঙ্গের সরকার সিবিআই তদন্তে আপত্তি জানাচ্ছে। সারদা কাণ্ডের সঙ্গে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা যুক্ত। তার পরেও রাজ্য সরকারের সংস্থা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে প্রতিদিন আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন রাজ্যে ছড়ানো এমন একটি বিশাল আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত কখনওই কোনও রাজ্য সংস্থা করতে পারে না।
সিবিআই তদন্তের দাবির বিরোধিতা করে রাজ্যের জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন ডিভিশন বেঞ্চের কাছে পুলিশি তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট তুলে দেন। তিনি জানান, পুলিশ তদন্তের কাজ অনেকটাই শেষ করেছে। অপর একটি জনস্বার্থ মামলার আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টচার্য বলেন, “সুদীপ্ত সেন হলফনামা দিয়ে বলছেন, রাজ্য সরকারের সংস্থার তদন্ত ভাল ভাবে এগোচ্ছে। সিবিআইয়ের প্রয়োজন নেই। যিনি প্রধান অভিযুক্ত, তিনি ঠিক করবেন কোন তদন্ত ভাল!” ডিভিশন বেঞ্চ অবশ্য জানিয়ে দেয় সুদীপ্ত সেনকে নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনও প্রয়োজন নেই।
সিবিআই তদন্ত সম্পর্কে রায় না-দিলেও কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের প্রতিনিধিদের সারদা তদন্তের নথিপত্র ও কেস ডায়েরি দেখাতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আইনজীবী ভাস্কর বৈশ্য এ দিন আদালতে অভিযোগ করেন, বিধাননগর কমিশনারেট তাদের এফআইআরের প্রতিলিপি দিলেও তদন্তের নথিপত্র দিচ্ছে না। অশোকবাবু পাল্টা বলেন, তদন্তের এই পর্যায়ে কেস ডায়েরি বা নথিপত্রের প্রতিলিপি দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, প্রতিলিপি না-দিলেও কেস ডায়েরি ও নথিপত্র দেখাতে হবে।
|