প্রশংসা করেও চাপ বজায় রাখল মোর্চা-রাজ্য
ফের কাছাকাছি এলেও পরস্পরের উপরে চাপ বজায় রেখে দিল রাজ্য সরকার এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
বুধবারেও মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গকে পাশে বসিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “আজ আমাদের শুভদিন। দার্জিলিং শান্ত থাকুক। ভাল থাকুক। দার্জিলিং বাংলার হৃদয়।” গুরুঙ্গও গোর্খা রঙ্গমঞ্চ ভবনে জিটিএ-র ওই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর আগে ছোট্ট বক্তৃতায় বলেন, “সম্প্রতি আমাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তা মিটে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের ঘরের মানুষ।” ওই অনুষ্ঠানে নেপালি শিল্পীরা বাংলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছেন।
কিন্তু এ দিন দুপুরে এই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরে পরেই পাহাড়ে তৃণমূলের দলীয় প্রভাব বাড়ানোর উদ্যোগ দেখা যায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায় ও তৃণমূলের উত্তরবঙ্গ কোর কমিটির সভাপতি গৌতম দেব চলে যান মিরিকে দলীয় সভা করতে। ট্যুরিস্ট লজের সেই সভায় পাহাড়ের প্রায় সব তৃণমূল নেতাকেই দেখা গিয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দার্জিলিং ও সুকনায় তৃণমূলের দু’টি দলীয় কার্যালয় খোলা হবে। মঙ্গলবার দার্জিলিং আসার পথে মুখ্যমন্ত্রীও সাতটি জায়গায় কনভয় দাঁড় করিয়ে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন।
পরশ: দার্জিলিঙের ম্যাল রোডে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা। বুধবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
মোর্চাও পাল্টা চাপ বাড়িয়েছে রাজ্য সরকারের উপরে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে একান্ত বৈঠকের সময় গুরুঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীকে বারো পাতার একটি দাবিপত্র দিয়েছেন। তার মধ্যে বেশ কিছু দাবি দেখে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারাও চমকে গিয়েছেন। জিটিএ-র কার্যনির্বাহী সদস্যদের জন্য রাজ্যের মন্ত্রীদের মতোই সচিবালয় করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মোর্চা নেতৃত্ব। জিটিএ-র প্রত্যেক কার্যনির্বাহী সদস্যের জন্য একান্ত সচিব-সহ মোট সাত জন করে কর্মী নিয়োগের দাবি করেছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, ওই কর্মীদের মাইনে দিতে হবে রাজ্য সরকারকেই। এই দাবি মেনে নিলে জিটিএ-তে কার্যনির্বাহী সদস্যদের জন্য শতাধিক কর্মী নিয়োগ করতে হবে রাজ্যকে। গুরুঙ্গ নিজে জিটিএ প্রধান হিসেবে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা পান। এ বার তাঁর নিজের পৃথক সচিবালয়ের দাবিও করা হয়েছে।
ওই দাবিপত্রে গুরুঙ্গ বলেন, খুন ছাড়া অন্য যে সব অভিযোগে তাঁদের যে নেতা-কর্মীরা অভিযুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত মোর্চা নেতা-কর্মীদের খোঁজে পুলিশ যে অতি-সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে, তা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে হবে।
দার্জিলিং সফরে গিয়ে বুধবার ম্যালের কাছের রাস্তায় শীতবস্ত্র বিক্রেতাদের কাছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা
বন্দ্যোপাধ্যায়। কেনাকাটাও করেন। সঙ্গে ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
মোর্চার আরও দাবি, ডিজিএইচসি-র আমলে যেমন পাহাড়ের বিডিও-দের কাউন্সিল উন্নয়ন আধিকারিক হিসেবে দেখা হতো, এ বার জিটিএ-র আমলেও তাদের টেরিটোরিয়াল উন্নয়ন আধিকারিক করতে হবে। এ কথা শুনে রাজ্য সরকারের এক পদস্থ কর্তা জানান, ডিজিএইচসি ছিল সংবিধান স্বীকৃত স্বশাসিত সংস্থা। জিটিএ এখনও তা হয়নি। এই বিষয়ে জিএনএলএফ নেতা সুবাস ঘিসিংয়ের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলাও করা হয়েছে। অর্থাৎ বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। কাজেই আপাতত এই দাবি মানা সম্ভব নয়।
দাবি মানা বা না-মানা নিয়ে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি কিছু বলেননি। তিনি মোর্চা নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, ২৪ মে পাহাড় নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকেই এই সব বিষয়ে আলোচনা হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পাহাড়ের যাবতীয় সমস্যার বিষয়গুলি আমরা সংবেদনশীল ভাবেই দেখি। কাজেই মোর্চার উদ্বিগ্ন বা অধৈর্য হওয়ার কোনও কারণ নেই।”
তবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছে মোর্চাকে। এই দিন জিটিএ-র অনুষ্ঠানে সুলভ মূল্যে ওষুধ বিক্রয়কেন্দ্র-সহ চারটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী, সাতটি প্রকল্পের শিলান্যাসও করেন তিনি।
দার্জিলিঙের ভানু ভবনে জিটিএ-র অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ও জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র
প্রশাসনের কর্তারা মোর্চা নেতাদের জানিয়ে দেন, সুলভ মূল্যে ওষুধ বিক্রয়কেন্দ্র করার জন্য তিন মাস আগে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল জিটিএ-কে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় তা চালু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জিটিএ তা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী এসে এত দিন পরে তার উদ্বোধন করলেন। ওই অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র জানিয়ে দিয়েছেন, পাহাড়ের অন্য মহকুমাগুলিতেও সরকার এই বিক্রয়কেন্দ্র চালু করতে উদ্যোগী। সেই সঙ্গেই তিনি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জানিয়ে দেন, ওই বিক্রয়কেন্দ্র ঠিক মতো চালাতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য জিটিএ-র প্রশংসাই করেছেন। তিনি বলেন, “৩৪ বছর ধরে পাহাড়ে উন্নয়ন হয়নি। এখন টিম জিটিএ তৈরি করে দিয়েছি। পাহাড়ে উন্নয়ন হচ্ছে।”
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে পাহাড় ও জঙ্গলমহলের সাফল্য যে তিনি তুলে ধরতে চান, তা-ও এই দিন ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, “দার্জিলিং ও জঙ্গলমহল আমাদের সাফল্যের জায়গা। এখানে কোনও প্ররোচনা আমি সহ্য করব না।” মুখ্যমন্ত্রী গুরুঙ্গকেও পরামর্শ দেন, “কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না। সব কিছু ভুলে গিয়ে উন্নয়ন করুন। তা হলে রাজ্য এবং জিটিএ একসঙ্গে কেন্দ্রের কাছ থেকে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ বাড়াতে দরবার করবে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.