|
|
|
|
দার্জিলিঙে পৌঁছে মমতা বললেন, জটিলতা মিটেছে
কিশোর সাহা • দার্জিলিং |
প্রায় সাড়ে তিন মাস পরে ফের দার্জিলিংয়ে পা রেখে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গকে পাশে বসিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “পাহাড়ের সব জটিলতা এখন মিটে গিয়েছে।”
পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে শুধু পাহাড় নয়, জঙ্গলমহলেও শান্তি স্থাপনের সাফল্যকেই যে তিনি তুলে ধরতে চান, তা এই দিন মমতার কথা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, “পাহাড় ও জঙ্গলমহল আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। এবং সেই চ্যালেঞ্জ আমরা ঠিক ভাবে মোকাবিলা করেছি এবং আগামী দিনেও করব।”
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে দার্জিলিংয়ের ম্যাল-এ উত্তরবঙ্গ উৎসবের একটি অনুষ্ঠান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই মোর্চা সমর্থকেরা গোর্খাল্যান্ডের স্লোগান দিতে শুরু করলে মমতা তখন নিজেকে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ বলে মন্তব্য করেন। তারপরেই মমতা-মোর্চা সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। এত দিন পরে মঙ্গলবার অবশেষে সেই বরফ গলল। গুরুঙ্গের সঙ্গে দার্জিলিংয়ের রিচমন্ড হিলে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা একান্তে বৈঠকও করলেন মমতা। বৈঠকের আগে গুরুঙ্গ ঘরে ঢুকে মমতাকে একটি সম্মানসূচক উত্তরীয় খাদা পরিয়ে দেন। সেই সময়ে ঘরে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর এ বারের সফরসঙ্গী মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র ও স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় সহ উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিকেরা। ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায় সহ প্রথম সারির নেতারাও। মুখ্যমন্ত্রীও গুরুঙ্গকে স্বাগত জানান। এরপরেই সব অফিসার ও নেতা-মন্ত্রীরা বেরিয়ে যান। |
|
রিচমন্ড হিলের বৈঠকের পরে মমতা ও গুরুঙ্গ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
মমতা-গুরুঙ্গের একান্ত বৈঠকের পরে সেখানে পৌঁছন মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি সহ অন্য নেতারাও। তাঁদের সঙ্গে আর এক দফা বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিমলের সঙ্গে আমার অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। ওদের পাশে আমরা রয়েছি। পাহাড়ের উন্নয়নে কোনও বাধা এলে তা আমি বরদাস্ত করব না।” সেই সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, মোর্চার সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ক যাতে ছিন্ন হয়ে যায়, কেউ কেউ সে চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর কথায়, “কিন্তু পাহাড়ের সঙ্গে আমাদের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তা মিটিয়ে নিতে সেতুবন্ধনের প্রক্রিয়া আগেই শুরু করেছিলাম। তাতে মোর্চাও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। তাই সেতুবন্ধন সম্ভব হল।” বিমলও বলেন, “আমি খুশি। মুখ্যমন্ত্রীর সব রকম উন্নয়নের আশ্বাস দিয়েছেন।”
তবে মমতা এই দিন জানিয়ে দেন, পাহাড়ের উন্নয়নের ক্ষেত্রে দায়িত্ব রয়েছে কেন্দ্রেরও। কেন্দ্রকে নিয়েই ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করে জিটিও করা হয়েছে। সামনেই ২৪ মে রাজ্য, কেন্দ্র ও মোর্চার মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও রয়েছে। মমতা বলেন, “জিটিএ যাতে ঠিক ভাবে চলে, তার জন্য যেমন মোর্চার দায়িত্ব রয়েছে তেমনই রাজ্যের সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।”
সেই সঙ্গেই মোর্চাকে চাপে রাখতে পাহাড়ে দলের প্রভাব বাড়াতেও যে তৃণমূল সচেষ্ট, সে কথাও আজ অনেকের কাছেই স্পষ্ট হয়েছে। কেননা, এই দিন সুকনা থেকে দার্জিলিং যাওয়ার পথে সাতটি জায়গায় তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা দলের পতাকা উঁচিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। ওই সাতটি জায়গাতেই তিনি গাড়ি থেকে নেমে দলের স্থানীয় নেতা-সমর্থকদের সঙ্গে কথাও বলেন। এমনকী, মাস খানেক আগে কালিম্পঙে তৃণমূলের যে নেতা আক্রান্ত হয়েছিলেন, সেই ছঙ্গ ভুটিয়া ও তাঁর তিন সঙ্গীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে কথা বলেছেন। তাঁদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর পরিচয় করিয়ে দেন মুকুলবাবু ও তৃণমূলের উত্তরবঙ্গ কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।
পাহাড়ে তৃণমূল কি মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে রেখে প্রভাব বাড়াতে চাইছে? এ প্রসঙ্গে গৌতমবাবুর জবাব, “বিষয়টি এ ভাবে ব্যাখ্যা করা ঠিক নয়। সরকারি ভাবে আমরা যেমন পাহাড়ের উন্নয়নে সামিল হয়েছি, তেমনই রাজনৈতিক ভাবেও আমরা মোর্চাকে সব রকম সহযোগিতা করব। গণতন্ত্রের এটাই নিয়ম।”
এই দিন দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী বাগডোগরায় নেমে সোজা দার্জিলিং রওনা হন। সারা দিনই দার্জিলিঙে বৃষ্টি হয়েছে। তাই বুধবার ম্যাল-এই মুখ্যমন্ত্রীর সভা করার কথা থাকলেও, তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে গোর্খা রঙ্গমঞ্চ ভবনে।
|
পুরনো খবর: দূরত্ব সরিয়ে ফের কাছে আসতে চায় মোর্চা-তৃণমূল |
|
|
|
|
|