মাস তিনেকের তিক্ততা সরিয়ে ফের কাছে আসতে চাইছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং তৃণমূল। আজ, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু’দিনের পাহাড় সফর শুরুর প্রেক্ষিত এমনটাই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে। দু’তরফই দাবি করেছে, পাহাড়ের সার্বিক উন্নয়ন’-এর জন্য ফের তারা এক সঙ্গে পথ হাঁটবে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাক্রম দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় খাদের কিনারায় চলে যাওয়া সম্পর্ক মেরামত করতে নেমেছে দু’দল।
পঞ্চায়েত ভোট, সারদা-কাণ্ড নিয়ে জেরবার রাজ্য সরকার কি মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফর সফল হলে ফের ‘দার্জিলিং হাসছে’ স্লোগানকে সামনে রেখে নিজেদের সাফল্য তুলে ধরবে না? তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলছেন, “আমাদের রাজনীতি সদিচ্ছার রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়-জঙ্গলমহলে শান্তি এনে উন্নয়ন শুরু করে তা বুঝিয়েছেন। এটা বলতে হয় না।”
মোর্চাও কেন্দ্রের পরামর্শ মেনে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতির সুবাদে দু’টি উদ্দেশ্য পূরণ করতে চাইছে। এক, পাহাড়ে রাজ্যের আস্থাভাজন প্রধান দল হিসেবে নিজেদের তুলে ধরে জিএনএলএফ-সহ অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের নতুন করে শক্তিশালী হওয়া আটকানো। দুই, রাজ্যের সঙ্গে টানা সংঘাতে জিটিএ অচল হলে দলে যে ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা-ও রোখা যাবে। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি অবশ্য বলছেন, “আমাদের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ উন্নয়নকে প্রাধান্য দেন। জিটিএ চালাতে গিয়ে যে সমস্যা হচ্ছে, তা তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন। উভয়েরই মূল লক্ষ্য, পাহাড়ের সার্বিক উন্নয়ন। কেন্দ্রও তা-ই চায়।”
রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার আগেই মোর্চা নেতাদের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। সরকার গঠনের কয়েক মাসের মাথায় মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করিয়ে জিটিএ গড়েন। দু’বছরে তাঁর ১২ বার পাহাড়ে যাতায়াতের সুবাদে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজে গতিও এসেছে। তাল কাটে ২৯ জানুয়ারি। সে দিন দার্জিলিঙে উত্তরবঙ্গ উৎসবের মঞ্চের সামনে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে মোর্চা সমর্থকেরা স্লোগান দিলে মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ বলে তা থামাতে বাধ্য করান। এর পরে নানা দ্বন্দ্বে মোর্চা এবং তৃণমূলের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। এই সুযোগে সুবাস ঘিসিংয়ের জিএনএলএফ ফের পাহাড়ে সভা-সমাবেশ শুরু করে। |