চিরাচরিত ম্যাল-চৌরাস্তা, টয় ট্রেন, সেন্ট পলস স্কুল, প্ল্যান্টার্স ক্লাব বা কেভেনটার্স শুধু নয়, এর বাইরের দার্জিলিংকে ‘লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনে’ তুলে ধরতে উদ্যোগী গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। গত ফেব্রুয়ারিতে শৈলশহরে বসার কথা ছিল ‘ডিরেক্টরস্ মিট’। টলিউড, বলিউডের একঝাঁক পরিচালকের পাশাপাশি হলিউডের কয়েকজন পরিচালকও যাতে যোগ দেন, তা নিয়ে তৎপর হন জিটিএ-সচিবেরা। কিন্তু তখনই হঠাৎ করে পাল্টে যায় পাহাড়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। উত্তরবঙ্গ উৎসবের মঞ্চ থেকে রাজ্যের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে মোর্চার। বন্ধ, অবরোধ, ধর্মঘটের রাজনীতির জেরে অনুষ্ঠানকে ঘিরে আগ্রহ দেখাননি কেউ।
জিটিএ সূত্রের খবর, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফে জিটিএ-কে এই বিষয়ে উদ্যোগী হতে বলা হয়। তার পরেই জিটিএ-র সচিবেরা এক দফায় নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে ঠিক করেন, আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাহাড় সফরের পরে পরিস্থিতি ‘অনুকূল’ ধরে নিয়ে ওই অনুষ্ঠান করার চেষ্টা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের পরে প্রধান সচিবকে সঙ্গে বৈঠকের পর ওই ‘মিট’-এর সময় চূড়ান্ত হবে। প্রাক পুজো পর্যটন মরশুম শুরু হতে বাকি মাস তিনেক। সেই সময় অনুষ্ঠানটি করার চেষ্টা হচ্ছে।
জিটিএ তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সচিব সুরেন ছিরিং ভুটিয়া বলেন, “গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের পরেই প্রধান সচিবের সঙ্গে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।” তিনি জানান, অনুষ্ঠানে আমরা একটি ওয়ার্কশপ করব। সেখানে পরিচালকেরা দার্জিলিং নিয়ে বলবেন। যাঁরা এখানে কাজ করেছেন, তাঁরা অভিজ্ঞতার কথা শোনাবেন। আর আমরা একটি রিপোর্ট আকারে নতুন নতুন স্পট তাঁদের সামনে তুলে ধরব।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পরিচালকদের সামনে ‘নতুন’ দার্জিলিংকে তুলে ধরার অনুরোধ করা হবে। ইতিমধ্যে ওই নতুন এলাকার তালিকাও জিটিএ-র অফিসারেরা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। জিটিএ-র পর্যটন সচিব সোনাম ভুটিয়া বলেন, “বিশ্বের দরবারে প্রায় ৫০ বছর ধরে নানা পরিচালকের হাত ধরে শৈলশহর উঠে এসেছে। এবার আমরা চাইছি, আরও নতুন নতুন এলাকা দেশি বিদেশি পরিচালকদের হাত ধরে ক্যামেরাবন্দি হোক।” জিটিএ-র প্রস্তাবিত স্পটের মধ্যে রয়েছে,রক গার্ডেন, রোপওয়ে, শ্রাবেরী গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন, কাফের, লাভা লোলগাঁও, বিজনবাড়ি, লালকুঠি, জামুনি, লামাহাটা, নামথিং, যোগীঘাট, রেলি, চিমনে দেওড়ালি, বেলটার প্রভৃতি এলাকা।
ষাটের দশক থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ঘেরা শৈলশহরে দেশের পরিচালকদের আনাগোনা শুরু। এর মধ্যে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত কাঞ্চনজঙ্ঘা, রাজেশ খন্নার ‘আরাধনা’, শাম্মি কপূরের ‘চায়না টাউন’, ধর্মেন্দ্রের ‘আয়ে দিন বাহারকে’ থেকে শুরু করে শাখরুখ খানের ‘রাজু বন গয়া জেন্টলম্যান’ বা ‘ম্যায় হুঁ না’, সেফ আলি খানের ‘পরিণীতা’, রণবীর কপূরের ‘বরফি’ থেকে সর্বশেষ সংযোজন দিব্যা খোসলা কুমারের ‘ইয়ারিয়া’। এই তালিকার বাইরেও ডজন খানেক বলিউডি ছবির পীঠস্থান ছিল দার্জিলিং। আর বাংলায় ঋতুপর্ণ ঘোষ, অঞ্জন দত্ত বা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়’রাও বারবার এসেছেন পাহাড়ে। বাদ নেই হলিউডও। এড হ্যারিসের ‘দ্য ওয়েব্যাকে’র প্রেক্ষাপট ছিল এই শহর।
কিন্তু পাহাড়বাসীর আক্ষেপ, প্রতিটি ছবিতে বিশ্বের দরবারে পৌঁছলেও তাতে দেখা মিলেছে সেই ম্যাল, চকবাজার, টয়ট্রেন, পাহাড়ে অলিগলি বা পরিচিত স্কুল বা রেঁস্তোরা’গুলির। মাঝে পরিচালক রাজা সেন ‘দেশ’এ দুই পাহাড়ের কোলে বইয়ে যাওয়া তিস্তাকে হেলিকপ্টারের সাহায্যে যেভাবে তুলে ধরেছিলেন, তাতে হার মানার উপক্রম হয়েছিল বিদেশি লোকেশনকেও। কিন্তু, ওই অবধিই। জিটিএ-র সচিব (ওএসডি) ভাস্কর মোক্তান বলেন, “আমরা যে সমস্ত এলাকা বাছাই করছি তা কামেরাবন্দি হলে দেশের অন্য পাহাড়ি প্রান্তকে হার মানাবেই।” |