ব্যবসা বাড়াতে শিলিগুড়ির স্কুলকে কাজে লাগান সুদীপ্ত
লিঙ্কনস স্কুলের সুনামকে ব্যবহার করে শিলিগুড়িতে ব্যবসা বাড়িয়ে নিয়েছিলেন সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন। শুধু শিক্ষক, কর্মীদের কাছ থেকেই তিনি ৬০ লক্ষ টাকার উপরে তুলে নেন। এ ছাড়া স্কুলের চার জনকে এজেন্টের কাজে নামিয়ে বাজার থেকে সবমিলিয়ে এক কোটি টাকা তুলে নেন তিনি। স্কুল সূত্রে খবর, রাতের বৈঠকে স্কুলে তাঁর সঙ্গে আসতেন দেবযানীও। সেখানে উত্তরের মালদা থেকে কোচবিহার ছয় জেলার এজেন্টদের ডেকে নিয়ে রাতভর বৈঠক করতেন। ভোরে সবাই বেরিয়ে যেতেন। মঙ্গলবার শিলিগুড়ির হিমাঞ্চল বিহারে গিয়ে ওই স্কুলের একদল সদস্য অভিযোগ জানান। আজ, বুধবার স্কুলের অন্য শিক্ষক-কর্মীরাও অভিযোগ জানাতে পারেন।
শিক্ষকদের একজন বলেন, “আগে বুঝতে পারেনি। এখন বুঝতে পারছি, এই স্কুল কেনার পিছনে সুদীপ্ত সেনের দু’রকম ছক ছিল। একে তো স্কুলের সম্পত্তি নিজের করে নেওয়া। দ্বিতীয়, শিলিগুড়ির শহরের অন্তত ৩৩ বছরের পুরনো ওই স্কুলের সুনাম ব্যবহার করে বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়া।”
সোমবার রাতে রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড়ে সারদা গোষ্ঠীর দফতরে তল্লাশিতে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র।
স্কুল সূত্রের খবর, ২০১০ সালে লিঙ্কনস হাইস্কুল কিনে নেন সারদা গোষ্ঠীর মালিক সুদীপ্ত সেন। প্রথম দিনের বৈঠকে শিক্ষক, কর্মীদের বেতনের কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। সেখানেই দেবযানীকে নির্দেশ দেন স্কুলের প্রত্যেকের বেতন দ্বিগুণ করে দিতে। পরের মাস থেকে ওই বেতন দেওয়া শুরু হয়। স্কুলের কর্মী ধনঞ্জয় দাসকে তিনি ‘স্মার্ট’ বলে এজেন্টের কাজে নামতে বলেন। একে একে যোগ দেন এক শিক্ষক সহ আরও চার কর্মী। কেউ নিজের নামে কেউ বা স্ত্রীর নামে এজেন্সি নিয়ে কাজ শুরু করেন। ধনঞ্জয়বাবু বলেন, “স্ত্রীর নাম নিয়ে এজেন্টের কাজে নামি। প্রায় ৪২ লক্ষ টাকা তুলে রেখেছি। কয়েক দফায় আমাদের স্কুলে এসে সুদীপ্তবাবু সবাইকে নিয়ে মিটিং করেন। কখনও মনে হয়নি তাঁর মনে খারাপ কোনও উদ্দেশ্য আছে। তাই বিশ্বাস করেছিলাম। এখনও অবিশ্বাস করতে পারছি না।”
আইন অমান্য: সারদা গোষ্ঠী-সহ বিভিন্ন লগ্নি সংস্থার মালিকদের গ্রেফতার, নারী নির্যাতন বন্ধে কড়া ব্যবস্থা, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশফেল প্রথা ফের চালু করা প্রভৃতি দাবিতে মঙ্গলবার শিলিগুড়ি আদালত চত্বরে আইন অমান্য করল এসইউসিআই-র শাখা সংগঠনগুলি। বিক্ষোভকারীদের দাবি, পুলিশ লাঠিচার্জ করায় অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের বাধা দেওয়া হয়। লাঠি চালানো হয়নি। ছবি: সন্দীপ পাল।
স্কুলের কর্মীদের একাংশ জানান, স্কুল দেখশোনার দায়িত্ব ছিল মূলত দেবযানী এবং তাঁর বোন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের উপরে। যে কোনও ব্যপারেই তাঁরাই স্কুলে গিয়ে বৈঠক করতেন। স্কুলের প্রাক্তন অধ্যক্ষ দুলাল চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সুদীপ্ত সেন এবং দেবযানী যে সুবিধের নয় তা আঁচ করতে পারি তাঁদের দু’জনের সঙ্গে কয়েক দফায় মিটিংয়ে বসার পর। তাঁদের কথা বলার ভঙ্গিমা আমার পছন্দ হচ্ছিল না। তার পরেও তাঁদের সঙ্গে ছিলাম বলে এখন খারাপ লাগছে।” তিনি জানান, ২০১১ সালের জুন মাসে হঠাৎই তাঁকে একটি বৈঠকে ডেকে অধ্যক্ষ পদ থেকে সরিয়ে দেন দেবযানী। তার তিন মাস পরে তাঁকে মালদহে সারদা’র একটি স্কুল দেখাশোনার জন্য পাঠানো হয়। তিনি ২ লক্ষ টাকা রেখেছিলেন সারদা’য়। তিনি বলেন, “আমাকে মালদহে লক্ষ্মীপুরে একটি স্কুল রয়েছে বলে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে দেখি স্কুলের পরিকাঠামো তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে আমি টাকাও রাখি সেখানে। এর পরে তো ওই ওই ঘটনা।” এ দিন স্কুলের অধ্যক্ষ শম্পা দত্তরায় কমিশনে যান। তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
মঙ্গলবার কমিশনে ১৯৫০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে দার্জিলিং ৪৫৩, জলপাইগুড়ি ৩৪৭, কোচবিহার ৮০, উত্তর দিনাজপুর ৭৭, দক্ষিণ দিনাজপুর ৩১৯ এবং মালদহ থেকে ৫০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এ ছাড়া বিহার থেকে ১৬৯টি এবং অসম থেকে দু’টি অভিযোগ জমা পড়েছে। চার দিনে সবমিলিয়ে ৪ হাজার ৫০টি অভিযোগ জমা পড়ল শিলিগুড়ি কমিশনের অফিসে।
এ দিকে, দু’একদিনের মধ্যে সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে জেরা করতে বিধাননগরে যাবে শিলিগুড়ি পুলিশের কমিশনারেটের বিশেষ তদন্তকারী দল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.