শিলিগুড়ির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা পাহাড়ের পরিবর্তে সমতলের বিএড কলেজগুলিতে করার দাবিতে শিলিগুড়িতে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের অফিস অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন। মঙ্গলবার বেলা সওয়া ১০টা থেকে প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা শিক্ষক নেতা রঞ্জন শীলশর্মার নেতৃত্বে অবরোধ আন্দোলনে কর্মী, আধিকারিকরা এ দিন নির্ধারিত সময়ে অফিসে ঢুকতে পারেননি। কয়েকজন অফিস খুলে কাজ শুরু করলেও আন্দোলনকারীরা বেরিয়ে যেতে অনুরোধ করায় তাঁদেরও বেরিয়ে আসতে হয়। বেলা ১টা নাগাদ শিলিগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান সমর চক্রবর্তী অফিসে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সমস্যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা নিয়ে আলোচনায় বসার আশ্বাস দেন। এর পর আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেন।
চেয়ারম্যান বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কর্তৃপক্ষ ও উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গেও কথা হয়েছে। আগামী ১৭ মে তাঁর দফতরে এ ব্যাপারে শিলিগুড়ি এবং পাহাড়ের বিএড কলেজগুলির অধ্যক্ষ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। তা রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে জানানো হবে। তিনি উদ্যোগী হবেন বলে আশ্বাস মিলেছে।”
শিলিগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)-র তরফে শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলির ৫৬৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে দার্জিলিং এবং কালিম্পং পাহাড়ের বিএড কলেজগুলিতে গিয়ে সেতু পাঠ্যক্রম এবং ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশনের প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা জানানো হয়। আগামী ২১ মে থেকে তা শুরু হবে। চলবে ৭ জুন পর্যন্ত। ওই সময় স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি রয়েছে। প্রশিক্ষণ যাঁদের নেই বাধ্যতামূলক ভাবেই তাঁদের ওই প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষে আগে থেকেই অভিযোগ তোলা হয়, একেই পাহাড়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক নেই। তার উপর পর্যটন মরসুমে পাহাড়ের হোটেলে জায়গার অভাব। শিলিগুড়ি থেকে পাহাড়ের বিএড কলেজে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হলে সেখানকার থাকা খাওয়ার খরচ, যাতায়াত নিয়ে তাঁরা বিপাকে পড়বেন। মহিলাদের সমস্যা হবে সব থেকে বেশি। সে কারণে পাহাড়ের পরিবর্তে সমতলে শিলিগুড়ির শিবমন্দির বিএড কলেজ এবং ফাঁসিদেওয়ায় বিদ্যাসাগর কলেজ অব এডুকেশন এই দুই বিএড কলেজে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়। তা না হলেও পাহাড়ের কলেজগুলিতে ভর্তি করিয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যাসাগর ভবনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়। তাতে পরীক্ষার সময় পাহাড়ে যেতে রাজি ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এক বার তা নিয়ে আশ্বাসও দেওয়া হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের তরফে। তবে সম্প্রতি এনসিটিই শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলার ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাহাড়ের বিএড কলেজে গিয়েই প্রশিক্ষণ নেওয়ার পক্ষে জানানোয় ফের তারা সরব হন।
সংগঠনের অভিযোগ, শিলিগুড়িতে ৫১৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ২ বছরের এবং ২৪৯ জনকে ১ বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। ২৪৯ জনের মধ্যে ২০০ জনকে শিলিগুড়ির ২টি বিএড কলেজে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বাকিদের পাহাড়ের ৩ টি কলেজে প্রতিদিন ৪টি ‘শিফট’-এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়। সংগঠনের শিলিগুড়ির কোর কমিটির চেয়ারম্যান রঞ্জনবাবু বলেন, “পর্ষদের তরফে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস মিলেছে। তাই অবরোধ তোলা হয়।”
|