বাম ও কংগ্রেস কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতিতে তৃণমূলের কাউন্সিলররাই শিলিগুড়ি পুরসভার মুলতুবি বোর্ড মিটিং করলেন। মঙ্গলবারের মিটিংয়ে অসুস্থতার কারণে চেয়ারম্যান নান্টু পাল উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে সোমবারই লিখিতভাবে জানিয়ে দেন। এ দিন উপস্থিত ১৩ জন তৃণমূল কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে সমীরণ সূত্রধরকে সভা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সভায় কৃষ্ণ পাল পুর পরিষেবা নিয়ে একটি ‘প্রশ্ন’ এবং ‘মোশন’ রাখেন। তা নিয়ে দলের অপর তিন কাউন্সিলর বক্তব্য রাখলেও মেয়র বা পারিষদরা কেউ উপস্থিত না-থাকায় সেই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কেউ ছিলেন না। শেষ বোর্ড মিটিংয়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্তও এ দিন পেশ করা বা অনুমোদন করা যায়নি। বোর্ড মিটিং শেষ হলে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্তের ঘরের সামনে গিয়ে পুর পরিষেবার বেহাল পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর পদত্যাগের দাবি করেন কৃষ্ণবাবুরা। মেয়র অবশ্য ছিলেন না।
মেয়র বলেন, “আলোচনা না করেই নান্টুবাবু সভা ডেকেছেন। বোর্ড মিটিংয়ে প্রশ্ন বা মোশন পর্বে কিছু জিজ্ঞাস্য থাকলে তা মেয়র এবং পারিষদদের ৪৮ ঘণ্টা আগে জানানো হয়। আগাম কিছু না জানিয়েই বোর্ড মিটিংয়ে যে ভাবে প্রশ্ন, আলোচনা হয়েছে তা হতে পারে না।” পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, “নান্টুবাবু অন্যায় ভাবে বাজেট পাসের প্রক্রিয়া আটকে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। পরিষেবা নিয়ে তাঁরাই সমস্যা চান। তা অন্যের উপর চাপাতে চান তাঁর দলের কাউন্সিলররা।” চেয়ারম্যান পদে নান্টুবাবু অবৈধ ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন অভিযোগ তুলে আলাদা ভাবে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন কংগ্রেস ও বাম কাউন্সিলররা। তা নিয়ে কোনও মীমাংসা না-হওয়ায় বামেরা বোর্ড মিটিংয়েও যাচ্ছেন না। ৩০ এপ্রিলের বোর্ড মিটিংয়ে কংগ্রেসের কাউন্সিলররাও যাননি। তৃণমূলের কাউন্সিলররা গেলেও কোরামের অভাবে সভা মুলতুবি হয়। বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম জানান, মুলতুবি সভা নান্টুবাবুরই ডাকা। তাই তাঁরা যোগ দেননি। পরে কোনও সিদ্ধান্ত নিলে দলের কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করবেন।
শহরে পুর পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করেন পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক। তিনি জানান, তৃণমূল মেয়রের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের কথা বলছে। অথচ নির্বাচনের মাধ্যমেই মেয়র ঠিক হয়েছে। সমর্থন প্রত্যাহার করতে চাইলে অনাস্থা আনতে হবে।
এ দিন বোর্ড মিটিংয়ে কৃষ্ণবাবু জানান, গত ৩০ এপ্রিল বোর্ড মিটিংয়ে প্রশ্ন রাখার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর ওয়ার্ডে গত ২০ এপ্রিল ৫০০ মিটার রাস্তার পথবাতি কেউ বা কারা ভেঙে দিয়েছে। পুরসভায় বারবার জানালেও ঠিক হচ্ছে না। প্রমোদনগরে পানীয় জলের ট্যাপকল থেকে ব্যাঙাচি বার হচ্ছে। মাতৃসদনের চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না গরিব বাসিন্দারা। শহরে অবৈধ নির্মাণের রমরমা। নষ্ট পথবাতির জায়গায় নতুন বাতি লাগাতে আর্জি জানালেও বলা হচ্ছে পুলিশ তদন্ত করে রিপোর্ট দিলে তবেই কাজ হবে। অথচ বোর্ড মিটিংয়ে না এসে মেয়র এবং তাঁর পারিষদরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কংগ্রেস ১৪ জন কাউন্সিলর নিয়ে সংখ্যা লঘু হয়েও অনৈতিক ভাবে পুর বোর্ড চালাচ্ছে।
মেয়র জানান, কল থেকে ব্যাঙাচি বার হওয়ার অভিযোগ পেয়েই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২৩, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে পথবাতি যারা ভেঙেছে তাদের ধরতে বলা হয়েছে পুলিশকে। |