তাঁর ‘অপহরণ’ নিয়ে সন্দিহান ছিল পুলিশ। খোঁজ চলছিল, বাজারে তাঁর দেনার বহর নিয়েও। জেরা-জিজ্ঞাসাবাদে জেরবার মহিলা, পরিজনদের কাছে বলেও ফেলেছিলেন, ‘ওঃ হাফিয়ে উঠেছি। আর পারছি না।’
মঙ্গলবার বিকেলে সেই হাঁফিয়ে ওঠা জীবন থেকেই ‘মুক্তি’ পেলেন তিনি। রেল হাসপাতালের শৌচাগার থেকে দেশের প্রথম মহিলা সেনা জওয়ান শান্তি টিগ্গার (২৭) ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করল পুলিশ।
এ দিন বিকেলে আলিপুরদুয়ার জংশনের রেল হাসপাতালের যে কেবিনে গত কয়েক দিন ধরে ভর্তি ছিলেন শান্তি, তারই লাগোয়া শৌচাগারে গিজারের পাইপে গলায় গামছা জড়ানো অবস্থায় ঝুলতে দেখা যায় তাঁকে।
পুলিশ জানায়, বিকেল চারটে নাগাদ স্নান করতে গিয়েছিলেন শান্তিদেবী। দীর্ঘক্ষণ কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে তাঁর বড় ছেলে নেলসন ডাকাডাকি শুরু করেন। পরে পুলিশ কর্মীরা দরজা ভেঙে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে। জলপাইগুড়ির জেলা পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “রেলের আধিকারিকেরা তাকে আলিপুরদুয়ারে নিয়ে গিয়েছিলেন। হাসপাতালেও তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কী করে এমন কাণ্ড ঘটল, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
শান্তিদেবীর মৃত্যুতে পুলিশের বিরুদ্ধে মানসিক হয়রানি এবং স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে, আজ, বুধবার কালচিনি ব্লকে ১২ ঘন্টার বন্ধের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। একই অভিযোগ তুলে ডুয়ার্স বন্ধ ডেকেছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ।
সেনাবাহিনীর প্রথম মহিলা জওয়ান শান্তিদেবীকে গত ৯ মে রাতে ‘অপহরণ’ করা হয় বলে নিজেই অভিযোগ করেছিলেন তিনি। পরের দিন সকালে চালসায় তাঁর বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে একটি নির্মীয়মাণ ওয়াচ টাওয়ারে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।
তাঁর পকেট থেকে পাওয়া যায় মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা অদ্ভুত এক হুমকি চিঠি। বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার বাড়বাড়ন্ত নিয়ন্ত্রণ এবং আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়ে লেখা ওই চিঠিটি কী করে শান্তিদেবীর পকেটে এল তদন্তকারীদের প্রশ্ন জাগে তা নিয়েই। পুলিশের জেরায় তাঁর অসংলগ্ন কথাবার্তায় আদৌ তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল কি না তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল। জেরার বহর বাড়তে থাকে। বাড়তে তাকে পুলিশের সন্দেহও।
এই অবস্থায় শান্তিদেবীর বর্তমান কর্মস্থল এনই (এফ) রেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভর্তি করে দেন আলিপুরদুয়ারের রেল হাসপাতালে। শান্তিদেবীর বাড়িতেও মোতায়েন করা হয় পুলিশ।
কিন্তু গত দু-দিন ধরে মানসিক ভাবে ক্রমেই ভেঙে পড়ছিলেন শান্তিদেবী। তাঁর ভাই, জয়প্রকাশ টিগ্গা বলেন, “পুলিশের জেরায় দিদি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ভয়ও পেয়ে গিয়েছিলেন। বার বারই সে কথা বলেছেন আমাদের।” প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অভিমত, সম্ভবত তার জেরেই এ দিন আত্মহত্যা করেন শান্তি টিগ্গা।
|