মা অসুস্থ। এক চোখে দেখতেও পান না। বাবা দৃষ্টিহীন। ভাই থাকলেও সে শিলিগুড়িতে থেকে কলেজে পড়াশোনা করে। তাই, দৃষ্টিহীন বাবাকে নিয়ে দোরে দোরে ঘুরে ভিক্ষা করে সংসার চালান অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রোকেয়া খাতুন। কোনও সপ্তাহে এক দিন, কোনও সপ্তাহে দু’দিন শিলিগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা চষে বেড়ান তাঁরা। যা আয় হয় তাই দিয়ে কোনও রকমে চলে সংসার। চালাতে হয় রোকেয়া ও তাঁর দাদার পড়াশোনার খরচও। রোকেয়ার বাবা মহম্মদ হাজিমুল বলেন, “ছেলেটা কলেজে পড়ছে। একটা কাজও খুঁজছে। তাই মেয়েকে নিয়েই বেরোতে হয় ভিক্ষা করতে। ছেলেটার একটা কাজ হলে আর ভিক্ষা করতে হবে না। রোকেয়াও পড়াশোনা করতে পারবে।”
শিলিগুড়ি শহর থেকে কিছুটা দূরে ফাঁসিদেওয়ার চটহাটে রোকেয়াদের বাড়ি। বাড়ি বলতে দুটি ঘর। একটি শোওয়ার, আরেকটি রান্নার। টিনের চালা দেওয়া ঘর দুটি আধ ভাঙা হয়ে পড়েছেন। রোদ, জল সব উপেক্ষা করে তাতেই দিন গুজরান করতে হয় রোকেয়াদের। রেকেয়া জানান, সে চটহাট হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তাঁর মা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ হয়ে আছেন। একটি চোখে দেখতে পান না। তাই বাড়ির কাজকর্মের বেশিরভাগটা তাঁকেই করতে হয়। বাবাকে নিয়ে এদিক-ওদিক বেরোনোর সঙ্গীও সে। |
রোকেয়া বলেন, “আমার জন্মের পর থেকে দেখছি বাবা অন্ধ। মা অসুস্থ। এভাবেই চলছে আমাদের সংসার। কেউ ভিক্ষা দিলেই আমাদের সংসার চলে। না দিলে উপোস করে থাকতে হয়। তাই বাবাকে নিয়ে বেরোই। সারা দিন ঘুরে বাড়িতে ফিরে রান্না করে তার পরে পেটে কিছু দিই।” যুবক বয়সে বিয়ের পর থেকেই অন্ধ হয়ে যান মহম্মদ আক্রামূল। তার পর থেকে ভিক্ষা করেই তিনি সংসার চালান। এর মধ্যে ছেলে এক্রামূল ও মেয়ে বড় হয়ে যায়। এক্রামূল মুন্সি প্রেমচাঁদ কলেজে পড়াশোনা করে। সে বলে, “বাবা আর বোন ভিক্ষা করে সংসার চালায়। আমার খুব কষ্ট হয়। বাবাকে নিয়ে আমি বেরোতে চাই। বাবা বলে তুই পড়াশোনা করে কাজ কর। আমি কাজ খুঁজছি। কাজ পেলে আর বাবা, বোনকে ভিক্ষা করতে হবে না।” রোকেয়া বলেন, “আমিও কিছু একটা কাজ করতে চাই। সে জন্য আরেকটু পড়াশোনা দরকার। এখন দাদা কাজ করে সংসার চালাবে এই দিনের অপেক্ষায় আছি। তাহলে শেষ জীবনে অন্তত বাবা, মা কিছুটা সুস্থ ভাবে বাঁচবে। আমিও পড়াশোনা করে কিছু কাজ করতে পারব।” |